হিসাবের খাতা বলছে, গত আর্থিক বছরে ৬৫ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে ওয়েবেল। সেখানে বছরে প্রায় ৩০ কোটি টাকা খরচ করে ২৩ জন উপদেষ্টা (প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট) নিয়োগ করতে চলেছে রাজ্য সরকারি সংস্থাটি। তা-ও আবার এমন প্রকল্পে, যে কাজের জন্য ইতিমধ্যেই রয়েছেন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী। এই সিদ্ধান্তের কারণে ওয়েবেলের মতো আর্থিক ভাবে নড়বড়ে সংস্থার ঘাড়ে চাপতে চলেছে বিপুল বাড়তি খরচের বোঝা। যে সংস্থা এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় বাড়তি কর্মীর সমস্যায় জেরবার, তারা উপদেষ্টা নিয়োগে কেন ও কী ভাবে ব্যবসার অর্ধেক অঙ্ক খরচ করবে, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।
ই-গভর্ন্যান্স , সাইবার নজরদারি, সফট্ওয়্যার, তথ্যপ্রযুক্তি পরিকাঠামো-সহ বিভিন্ন প্রকল্প শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তৈরি ও দেখভালের জন্য উপদেষ্টা নিয়োগ করতে চায় ওয়েবেল। অথচ এর জন্য সংস্থার নিজস্ব কর্মী আছেন। রয়েছেন কেন্দ্রের স্টেট ই-মিশন টিমের (এসইএমটি) কর্মীরাও। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, উপদেষ্টাদের বেতন ও অন্যান্য খাতে বছরে প্রায় ৩০ কোটির বাড়তি বোঝা চাপবে। তিন বছরের জন্য নিয়োগের কথা ভাবা হয়েছে। অর্থাৎ, মোট ৯০ কোটির ধাক্কা। ব্যবসার প্রায় অর্ধেক টাকা গুনে নিয়োগের এই সিদ্ধান্তে প্রশ্ন উঠছে সরকারি অন্দরমহলেই।
শুধু কোষাগারে বাড়তি চাপ নয়। সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, এর ফলে সুষ্ঠু ভাবে কাজ করতেও সমস্যা হবে। কারণ, একই কাজের জন্য বিবিধ উপদেষ্টা থাকলে, কোন কাজ কে করবেন, বা ভুল-ভ্রান্তির দায় কে নেবেন, তা নিয়ে সমস্যা হবে।
রাজ্যের এই সিদ্ধান্ত সুনজরে দেখেনি এসইএমটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তার অভিযোগ, কাজের তুলনায় কর্মী বেশি হলে, প্রায় ৩০ কোটি গুনে কার্যত সমন্বয়ের অভাব বাড়ানো হবে। হাতের কাছের উদাহরণ হিসেবে উঠে আসেছে স্টেট ডেটা সেন্টারে কর্মীর হিসেব। এই প্রকল্পে ইতিমধ্যেই কাজ করছে ছ’সদস্যের ‘কম্পোজিট টিম’। এই দলে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের এনআইসি এবং ওয়েবেলের তিন জন করে কর্মী। এর পরেও ওই সেন্টারে নিযুক্ত হবেন আরও ছয় উপদেষ্টা। প্রশ্ন উঠেছে, ডেটা সেন্টারটি আদৌ এত জন কাজ করার মতো প্রকল্প কি?
এ নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে চাননি ওয়েবেল কর্তৃপক্ষ ও তথ্যপ্রযুক্তি সচিব তাল্লিন কুমার। রাজ্যের দাবি, ই গভর্ন্যান্স-সহ বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি প্রকল্পে উন্নতির লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সরকারি মহলেরই একাংশের অভিযোগ, কোন কাজের জন্য বাড়তি উপদেষ্টা নিয়োগ, তার সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নেই। যে কারণে এই নিয়োগের ক্ষেত্রেও খামতি থেকে গিয়েছে। সাধারণত এ ধরনের কাজে প্রতি প্রকল্পে কর্মী সংখ্যা নির্দিষ্ট করা থাকে না। বরং সব মিলিয়ে একটি সংখ্যা বলা থাকে। যাতে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকল্পে কম-বেশি কর্মী নিয়োগ করা যায়। এই ইচ্ছাপত্রে কিন্তু সেই সুযোগ রাখা হয়নি। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, ফলে কোনও প্রকল্পে কর্মীর টান পড়তে পারে। আবার কোথাও টাকা গুনতে হবে কর্মীদের বসিয়ে রেখেই।
এ ক্ষেত্রে অবশ্য দ্বিতীয় পরিস্থিতি তৈরির সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করছেন সরকারি আধিকারিকদের একাংশ। কারণ, এমনিতেই বাড়তি কর্মী নিয়ে ওয়েবেলের সমস্যার শেষ নেই। আর্থিক দশাও বেহাল। খাতায় কলমে খোলা থাকলেও কাজ নেই ওয়েবেলের অধিকাংশ শাখা সংস্থায়। ফলে হাতে কাজ নেই সেখানকার কর্মীদেরও। তার উপর বিপুল অঙ্কে এই উপদেষ্টা নিয়োগ সমস্যা আরও বাড়াবে বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy