পরিবহণের পরে এ বার তথ্যপ্রযুক্তি দফতর। ওই দফতরের অধীনস্থ ওয়েবেল-এর শাখা সংস্থাগুলিকে মিশিয়ে দেওয়ার নিদান দিয়েছে উপদেষ্টা সংস্থা ডেলয়েট। ঠিক যে দাওয়াই পরিবহণ দফতরকে দিয়েছিল আর এক পরামর্শদাতা সংস্থা জোনস লাং লাসেল।
ওয়েবেলের ঘুরে দাঁড়ানোর রূপরেখা (রোডম্যাপ) তৈরি করেছে ডেলয়েট। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, ওয়েবেলকে বাণিজ্যিক ভাবে লাভজনক করে তুলতে চার শাখা সংস্থার সংযুক্তিকরণের উপরেই জোর দিয়েছে তারা। প্রস্তাবে সায় দিয়েছে ওয়েবেলের পরিচালন পর্ষদও।
মূল সংস্থা ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (ডব্লিউবিইআইডিসিএল বা ওয়েবেল)। এ ছাড়াও চালু আছে আরও চার শাখা সংস্থা— ওয়েবেল ইনফর্ম্যাটিক্স, ওয়েবেল মিডিয়াট্রনিক্স, ওয়েবেল টেকনোলজি ও ওয়েবেল ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশন সিস্টেমস। সব মিলিয়ে পাঁচ সংস্থার কর্মী সংখ্যা প্রায় ৪৫০।
রাজ্য সরকারি সূত্রের খবর, লোকসানের কালো ছায়া সরলেও সব ক’টি সংস্থারই লাভের অঙ্ক নেহাত সামান্য। ২০১৪-’১৫ সালের হিসেবে ওয়েবেলের মোট ব্যবসা ৬৫ কোটি টাকা। এমনিতে ওয়েবেল রাজ্যের তরফে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্য ‘নোডাল এজেন্সি’ হিসেবে কাজ করে। কিন্তু তার পাশাপাশি শাখা সংস্থাগুলিকেও বাণিজ্যিক ভাবে সফল করতে চায় তারা। সেই লক্ষ্যপূরণে প্রয়োজন প্রতিযোগিতার বাজারে ব্যবসা ও লভ্যাংশ বৃদ্ধি। আর সেই পথে হাঁটতেই চার শাখাকে মেশানোর দাওয়াই দিয়েছে ডেলয়েট।
পরিবহণ দফতরকে দেওয়া এই একই ধরনের ‘প্রেসক্রিপশন’ মেনেছে রাজ্য। খোদ মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, খরচ কমাতে এই পদক্ষেপ জরুরি। তবে তাঁর দাবি, সংস্থার পুনর্গঠন চললেও কর্মী সঙ্কোচন করা হবে না। পাঁচটি পরিবহণ নিগম সংযুক্তিকরণে ভর্তুকির বোঝা কমবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টমহল। এতে কর্মীদের ঠিক ভাবে কাজে লাগানোও সম্ভব হবে বলে দাবি।
এই একই যুক্তিতে ওয়েবেল ঢেলে সাজার পরিকল্পনা নিতে চলেছে রাজ্য। চার শাখা এখন নিজেদের মতো করে ব্যবসা করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে দাবি, সংযুক্তিকরণ হলে ব্যবসা পাওয়া সহজ হবে। বিশেষত কাজের ক্ষেত্রে যেখানে চার সংস্থার ক্ষমতার মধ্যে তেমন ফারাক নেই।
এখন ওয়েবেলের কাজকর্ম মূলত ছ’টি বিষয়ের উপর দাঁড়িয়ে— (১) রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর প্রকল্পগুলিকে সহায়তা (২) বিভিন্ন সরকারি দফতরকে অনলাইন পদ্ধতিতে যুক্ত করা (৩) কেন্দ্রের অনুদানে ই-গভর্ন্যান্স সংক্রান্ত পরিকাঠামো তৈরির কাজ (৪) রাজ্যে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্য আরও বেশি মানবসম্পদ তৈরি করা (৫) রাজ্য জুড়ে ছোট ও মাঝারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার জন্য পরিকাঠামো তৈরি (৬) রাজ্য সরকারের সমস্ত তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর প্রকল্প রূপায়ণ করা। সরকারি সূত্রে খবর, পুনর্গঠনের পরেও এ সব কাজ চালিয়ে যাবে ওয়েবেল। তবে দক্ষতা বাড়িয়ে চেষ্টা করবে লাভের অঙ্ক বৃদ্ধিরও।
উল্লেখ্য, ওয়েবেল পুনর্গঠন নিয়ে চিন্তাভাবনা আগেও হয়েছে। ১৯৭৪ সালে গোড়াপত্তন। উদ্দেশ্য ছিল, বৈদ্যুতিন শিল্পের উন্নয়ন। ২০০১ সালে তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের আওতায় আসে তারা। কিন্তু প্রতিযোগিতার বাজারে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে। ২০০৩ সালে পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। রাজ্যের কাজ ব্যবসা করা নয়— এই নীতি মেনে ২৬টি সংস্থাকে পুনর্গঠনের জন্য চিহ্নিত করা হয়। সেই তালিকায় ছিল ওয়েবেলের সাত শাখাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy