রাত পোহালেই ব্রিটেনের নাগরিকরা ভোটের লাইনে গিয়ে দাঁড়াবেন। কেন, সেই উত্তর দেওয়ার জন্য কোনও পুরস্কার নেই। কারণ, গোটা দুনিয়া আপাতত মেতে আছে এই ভোট নিয়েই। #Brexit হ্যাশট্যাগে ছেয়ে গিয়েছে অন্তর্জালের দুনিয়া। ২৩ জুন ২০১৬ ব্রিটেনের নাগরিকরা গণভোট দিয়ে জানাবেন, তাঁরা আদৌ ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকতে চান কি না। রাতেই ভোট গণনা। যদি দেখা যায়, অর্ধেকের বেশি মানুষ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার পক্ষে রায় দিয়েছেন, তবে ঘটবে সেই ঐতিহাসিক ঘটনা, #Brexit। অর্থাৎ ব্রিটেন বেরিয়ে যাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে। গণভোটের রায় মেনে নিতে ব্রিটেনের সরকার বাধ্য। তেমনটা হলে, এই প্রথম কোনও সদস্য দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করবে।
হঠাৎ এমন গণভোট কেন? ২০১৫ সালে দেশের সাধারণ নির্বাচনের প্রচারপর্বেই ডেভিড ক্যামেরন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, জিতলে এই গণভোটের আয়োজন করবেন। কারণ, তাঁর নিজের দল কনজার্ভেটিভ পার্টির মধ্যেই দাবি উঠেছিল এই গণভোটের। বলা হচ্ছিল, ১৯৭৫ সালে ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্তির পর টেমস দিয়ে বহু জল বয়ে গিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের চরিত্র বদলেছে ঢের। অথচ, ব্রিটিশ নাগরিকরা এই ইউনিয়নে থাকতে চান কি না, তা জানানোর কোনও সুযোগ পাননি। এই দাবির প্রেক্ষিতে ক্যামেরন বলেছিলেন, ‘ব্রিটিশ রাজনীতিতে এই প্রশ্নটার পাকাপাকি সমাধান করার সময় এসেছে।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইউরোপে ক্রমে একটি অভিন্ন বাজার প্রতিষ্ঠার দাবি উঠতে থাকে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তারই ফলশ্রুতি। এখন মোট ২৮টি দেশ এই জোটের সদস্য। এই দেশগুলির মধ্যে আর্থিক ব্যবস্থা এমনই যে সেগুলি কার্যত একই দেশ হিসেবে কাজ করে। তার মধ্যে ১৯ দেশ ইউনিয়নের অভিন্ন মুদ্রা ইউরো ব্যবহার করে। ইউনিয়নের নিজস্ব পার্লামেন্ট রয়েছে। পরিবেশ, পরিবহন, ক্রেতা অধিকারের মতো অনেকগুলি বিষয়ে নিয়ম স্থির করে দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ব্রিটেন অবশ্য গোড়া থেকে এই জোটের সদস্য নয়। এখনও অনেকগুলি বিষয়েই ব্রিটেন নিজেদের স্বাতন্ত্র রক্ষা করে চলেছে। যেমন, তারা নিজস্ব মুদ্রা পাউন্ড বজায় রেখেছে।
আরও পড়ুন- ভারত নিয়ে আমেরিকার চাপ, সুর নরম চিনেরও
গণভোটের রায় কোন দিকে যাবে, এই শেষ বেলা অবধি তা নিয়ে ধোয়াশা রয়েছে। যাঁরা ব্রেক্সিটের পক্ষে— যেমন, ইউনাইটেড কিংডম ইনডিপেন্ডেন্ট পার্টি, গত ভোটে যারা ১৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল— তাদের মতে, প্রতি বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদের চাঁদাবাবদ ব্রিটেন বেশ কয়েক হাজার কোটি পাউন্ড দেয়, কিন্তু বিনিময়ে তেমন কিছু পায় না। ব্রেক্সিটপন্থীরা চান, ব্রিটেন নিজের ভৌগোলিক সর্বভৌমত্ব বজায় রাখুক, ভিনদেশিদের ব্রিটেনে প্রবেশের পথে বাধানিষেধ থাকুক। কত বিদেশি ব্রিটেনে চাকরি করতে আসতে পারেন, তার ঊর্ধ্বসীমা থাক। ‘ইউনাইটেড স্টেটস অব ইউরোপ’ তৈরিতে তাঁদের সায় নেই।
যাঁরা ব্রেক্সিটের বিপক্ষে, তাঁদের প্রথম সারিতে খোদ ডেভিড ক্যামেরন। তাঁর দলের একাংশ তাঁরই দিকে, কিন্তু দল কনজার্ভেটিভ পার্টি এই নির্বাচনে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকার কথা ঘোষণা করেছে। আর বিরোধী লেবার পার্টি, এসএনপি, লিব ডেম-রা সরাসরি ব্রেক্সিটের বিপক্ষে। তাঁদের বক্তব্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকলে ব্রিটেনের পক্ষে ইউনিয়নের অন্য দেশগুলির বাজারে ব্যবসা করা অনেক সহজ। আর, সেই দেশগুলি থেকে যাঁরা ব্রিটেনে চাকরির খোঁজে আসছেন, তাঁরাও বয়েসে তরুণ, ফলে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে তাঁদের প্রভাব অত্যন্ত ইতিবাচক। তাঁদের আরও বক্তব্য, ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে বেরিয়ে গেলে গোটা দুনিয়ার চোখে তার গুরুত্ব হ্রাস পাবে।
ব্যবসায়ী মহলের বড় অংশও ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষপাতী, কারণ তাদের পক্ষে এই অভিন্ন বাজারে ব্যবসা করা সহজ। তবে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিবিধ বাধানিষেধের বিরোধী তারা। ক্যামেরন যেমন বলেছেন, গণভোটের রায় ব্রেক্সিটের বিপক্ষে গেলে তাঁরা কিছু শর্তসাপেক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকতে চান, ব্যবসায়ীদেরও তা-ই মত। তাঁরা চান, অন্তত ব্রিটেনের জন্য যেন নিয়মের নিগড় শিথিল হয়।
এক দিন, কয়েক ঘণ্টা। তার পরই জানা যাবে, ব্রিটেন থাকছে না যাচ্ছে। ভোটের রায় যে দিকেই যাক না কেন, ব্রিটেন ও ইউরোপের রাজনীতি-অর্থনীতিতে তার প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy