পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, ২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষে টাটা গোষ্ঠীর ব্যবসার অঙ্ক আগের বছরের ১০,৮০০ কোটি ডলার থেকে কমে হয়েছে ১০,৩০০ কোটি ডলার। ২০১৬ সালের মার্চের হিসেব অনুযায়ী, নিট ঋণের বোঝাও এক বছর আগের ২,৩৪০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে পৌঁছেছে ২,৪৫০ কোটি ডলারে। কিন্তু ডামাডোলের বিশ্ব বাজারে শুধু এই বিচ্যুতির জন্য সাইরাসের গদি হারানো কষ্টকল্পনা।
কেউ বলছেন, টাটা গোষ্ঠীর পরিচালন পদ্ধতি নিয়ে প্রায়শই টাটা ট্রাস্টস-এর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না সাইরাসের। আবার অনেকের কথায়, দুনিয়াজুড়ে অলাভজনক ব্যবসা বন্ধ বা বিক্রি করার কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছিলেন তিনি। যেমন, ইস্পাতের চাহিদায় ভাটা এবং সস্তার চিনা ইস্পাতের সঙ্গে দামের লড়াইয়ে এঁটে উঠতে না-পারার কারণে ব্রিটেনে জলের দরে সেই ব্যবসা বিক্রির সিদ্ধান্ত সম্প্রতি নিয়েছে টাটা স্টিল।
নিজের জমানায় একের পর এক বিদেশি সংস্থা অধিগ্রহণের মাধ্যমে টাটা গোষ্ঠীকে আক্ষরিক অর্থেই বহুজাতিক করতে চেয়েছিলেন রতন টাটা। ২০০০ সালে ব্রিটিশ চা সংস্থা টেট্লি দিয়ে শুরু। এর পর ২০০৪ সালে দেয়ু-র বাণিজ্যিক গাড়ি। ২০০৫ সালে সিঙ্গাপুরের ন্যাটস্টিল। ২০০৭ সালে চোখ কপালে তুলে দিয়ে ১,২০০ কোটি ডলারে ইস্পাত বহুজাতিক কোরাস। ২০০৮ সালে ২৩০ কোটি ডলারে ফের ব্রিটিশ গাড়ি সংস্থা জাগুয়ার-ল্যান্ডরোভার। সেখানে ব্রিটেনে সাইরাসের ইস্পাত ব্যবসা গোটানোর মতো সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর ভাল না-লেগে থাকতে পারে বলে অনেকের ধারণা।
আবার অনেকে বলছে, জাপানি টেলিকম সংস্থা ডোকোমোর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদই সাইরাসকে সরানোর কারণ। ২০০৯-এ টাটা টেলিসার্ভিসের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধে ডোকোমো। তারা সংস্থার ২৬.৫ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়। কিন্তু, ২০১৪তে তারা এই গাঁটছড়া ছিন্ন করে। ডোকোমো তখন টাটাকে তাদের শেয়ার পূর্ব নির্ধারিত দরে বেচার জন্য অন্য কোনও সংস্থাকে খুঁজে দিতে বলে। টাটা তা পারেনি। এমনকী, ডোকোমোর অনুরোধ মেনে নিজেরাও সেই শেয়ার কিনে নেবে বলে। কিন্ওতু, বারত সরকার তার অনুমোদন দেয়নি। এর পর ডোকোমোকে ১.২ বিলিয়ন ডলার দিতে হয় টাটা গোষ্ঠীকে। এই ঘটনাও ভাল ভাবে দেখেনি টাটা গোষ্ঠী।
একটা অশের মতে, সাইরাসকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ায় শাপুরজি-পালোনজি গোষ্ঠী আইনি পদক্ষেপ করতে পারে। জটিলতার কথা ভেবে টাটা গোষ্ঠী হরিশ এন সালভ, অভিষেক মনু সিঙ্ভি, প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল মোহন পরাশরণের মতো অভিজ্ঞ আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছে।