খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধির পথেই হাঁটল সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি। খুচরো মূল্যবৃদ্ধি কমার ঠিক পরের দিনই মঙ্গলবার সরকারি পরিসংখ্যানে জানানো হল সেপ্টেম্বরে পাইকারি (বা সার্বিক) মূল্যবৃদ্ধি গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে নীচে নেমে ছুঁয়েছে ২.৩৮%। বাজারের আগুন আয়ত্তে আসায় স্বাভাবিক ভাবেই খুশি আমজনতা, শিল্পমহল ও কেন্দ্রীয় সরকার। উৎফুল্ল অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানান, এ বার স্থিতিশীল ও কম মূল্যবৃদ্ধির জমানার দিকে এগোচ্ছে দেশ।
এই নিয়ে টানা চার মাস ধরে কমছে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির হার। মূলত খাদ্য সামগ্রী ও জ্বালানির দাম এক ধাক্কায় অনেকটা কমে আসায় উৎসবের মরসুমে মানুষকে স্বস্তি দিয়ে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার নেমে এসেছে ২.৩৮ শতাংশে। অগস্টে তা ছিল ৩.৭৪%, ২০১৩-র সেপ্টেম্বরে ৭.০৫%। ২.৩৮% মূল্যবৃদ্ধির হার রয়টার্সের এক আগাম সমীক্ষার চেয়েও কম। ওই সমীক্ষায় ৩.৩% মূল্যবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়।
বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম কমার জেরে মঙ্গলবারই পেট্রোলের দাম লিটারে আরও ১ টাকা কমানোর কথা ঘোষণা করেছে তেল সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল। কর যোগ করে কলকাতায় তা লিটারে ১.২৫ টাকা কমে হল ৭৪.২১ টাকা। দিল্লিতে তা ১.২১ টাকা কমে দাঁড়াল ৬৬.৬৫ টাকা। নতুন দাম মধ্যরাত্রি থেকেই চালু হয়েছে। এর আগে গত ১ অক্টোবর ৫৪ পয়সা কমেছিল পেট্রোলের দাম। তবে ডিজেলের দাম কমানোর ঘোষণা করা হবে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানায় বিধানসভা ভোট পর্ব মিটে যাওয়ার পরে।
প্রসঙ্গত, সোমবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে সেপ্টেম্বরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি নেমে আসে ৬.৪৬ শতাংশে। ২০১২-র জানুয়ারিতে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির এই সূচক চালু হওয়ার পর থেকে তা এত নীচে নামেনি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, খুচরো ও পাইকারি বাজারের মূল্যবৃদ্ধি একই সঙ্গে বাগে আসায় আমজনতার পাশাপাশি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে কেন্দ্রও। কারণ মূল্যবৃদ্ধির চাপ কমলে অর্থনীতির হাল ফিরিয়ে ভোটের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষাও তাদের পক্ষে সহজ হবে। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে মূল্যবৃদ্ধির আসল ছবিটা ধরা পড়বে নভেম্বরের পরে। কারণ মূল্যবৃদ্ধির এই একটানা কমার প্রবণতা আসলে গত বছরের চড়া দামের জন্যই ধরা পড়ছে। আগের বছরের দামের ভিত্তিতেই হিসাব করা হয় চলতি বছরের মূল্যবৃদ্ধি। সেই প্রভাব কমে আসবে নভেম্বরের পরে। পাশাপাশি, ঘাটতি বর্ষার কারণে খরিফ শস্যের ফলন কম হলে, তার প্রভাবও পড়তে পারে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির উপর।
খুচরো মূল্যবৃদ্ধির মতোই মূলত শাক-সব্জির দাম কমার জেরে কমেছে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি। পাইকারি বাজারে শুধু খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিই ৩৩ মাসের মধ্যে সবচেয়ে নীচে নেমে হয়েছে ৩.৫২%। পেঁয়াজের দর সেপ্টেম্বরে কমেছে ৫৮.১২%, শাক-সব্জি প্রায় ১৫%। তবে আলুর দাম বেড়েছে ৯০.২৩%, যেখানে অগস্টের হার ৬১.৬১%। কমেছে দুধ-ডিম-মাছ-মাংসের দর। চিনি, ভোজ্য তেল, পানীয়, সিমেন্টও বেড়েছে কম হারে।
মূল্যবৃদ্ধি কমায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে অতি সাবধানী ঋণনীতি থেকে সরার আর্জি জানিয়েছে বণিকসভা সিআইআই ও ফিকি। অ্যাসোচ্যামও মনে করছে, এ বার সুদ ফিরে দেখার সময় এসেছে। শিল্প মহলের আশা, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এ ব্যাপারে তাদের আশা পূরণ করবে।