কেন্দ্রের প্রস্তাবিত অভিন্ন পণ্য-পরিষেবা কর নিয়ে ফের জটিলতা।
এ বারও এই গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স বা জিএসটি নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রে সেই পুরনো প্রসঙ্গ। অর্থাৎ এই অভিন্ন পণ্য-পরিষেবা কর ব্যবস্থা সারা দেশে চালু হলে, রাজ্যগুলির রাজস্ব আদায় মার খাওয়ার আশঙ্কা। এই আশঙ্কা জানিয়েই জিএসটি চালুর ক্ষেত্রে আপত্তি তুলেছে ১৯টি রাজ্য। সে কথা জানিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে তৈরি এমপাওয়ার্ড কমিটি এ মাসেই চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে।
কিন্তু কর বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, এই আপত্তির জেরে, অভিন্ন পণ্য-পরিষেবা করের মূল দর্শনটিকেই কাঠগড়ায় তুলে দিয়েছে বিভিন্ন রাজ্য। কারণ, কর ব্যবস্থা সরল করার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ। অথচ রাজ্যগুলি সেই বিভিন্ন পণ্যে বিভিন্ন কর চালু রাখার পক্ষেই সওয়াল করছে।
কোন কোন বিষয় নিয়ে রাজ্যগুলির আপত্তি রয়েছে?
• সেস, বিশেষ কর ইত্যাদি।
কয়লার জন্য পশ্চিমবঙ্গের ‘সেস’ আদায় বা পেট্রোল উত্তোলনের জন্য অসমের প্রাপ্য কর।
• বাণিজ্যিক গাড়ির প্রবেশ কর।
পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, বিহার, রাজস্থান, দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি-সহ মোট ১৯টি রাজ্যে এই কর চালু আছে।
• ক্রয় কর বা পারচেজ ট্যাক্স।
পঞ্জাব, হরিয়ানার মতো খাদ্যশস্য উৎপাদক বড় রাজ্যে মূলত গম ও চাল কেনার ক্ষেত্রে প্রতি টনে ১৪.৫০% থেকে ১৫.০০% কর চালু আছে।
• প্রমোদ কর।
• মদের উপর শুল্ক।
এই করগুলি বিলোপ করা চলবে না, এমনটাই দাবি রাজ্যগুলির। পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, “রাজ্যগুলির টাকা ছাপানোর ক্ষমতা নেই। রাজস্ব আদায়ের উৎস খুবই কম। যা আছে, তা-ও যদি জিএসটি-র চাপে বন্ধ হয়ে যায়, রাজ্যকে কেন্দ্রের দয়ার উপর নির্ভর করে থাকতে হবে। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে জিএসটি চালু করতে গেলে রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ চলবে না, এমনটাই মনে করেন সব রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা।”
লোকসভা ভোটের আগে দিল্লিতে তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক অবস্থা নিয়ে আলোচনার সময়ে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী জানিয়ে আসেন কয়েকটি সমধর্মী শর্ত। এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “কোন ধাঁচে জিএসটি তৈরি হবে, তার খসড়া রাজ্যগুলির অর্থমন্ত্রীদের বসে তৈরি করতে বলেছি। এর পর সেটি যাক এমপাওয়ার্ড কমিটির বিশেষ সেল-এ। এর ভিত্তিতে কেন্দ্র তার সুপারিশ নিয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করুক। সে ক্ষেত্রে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অক্ষুণ্ণ থাকবে।” কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুশীল মোদী জানান, ভুবনেশ্বরে কমিটির শেষ বৈঠকে অমিতবাবুর এই প্রস্তাব প্রায় সব রাজ্যই সমর্থন করে। মোদী বলেন, “জিএসটি চালু হলেও তার নিয়ন্ত্রণ একমাত্র কেন্দ্রের হাতে থাকুক, তা চায় না রাজ্যগুলি। কমিটি মনে করে যৌথ নিয়ন্ত্রণই স্বচ্ছতার শ্রেষ্ঠ উপায়।” এ নিয়ে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বারে বারে কমিটি বৈঠকে বসেছে। পরে চিদম্বরমের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। পুরনো সমস্যাগুলির সমাধান না-হওয়া অবধি কর ব্যবস্থার পরিবর্তন করা যাবে না, এমন কথাই রাজ্যগুলি জানিয়ে দিয়েছিল তাঁকে। তবে এমপাওয়ার্ড কমিটির নতুন চেয়ারম্যান আবদুল রহিম রাঠের বলেন, “২০১০-এ জিএসটি চালু হতে পারেনি মূলত ইউপিএ সরকারের দ্বিধাগ্রস্ততা এবং বিভিন্ন আর্থিক সমস্যা সঠিক ভাবে সমাধান না-করার জন্য।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy