Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ফের কদর বাড়ছে পেট্রোল গাড়ির

গত বছরের এপ্রিল থেকে অগস্টে কলকাতার বাজারে হোন্ডা ‘অ্যামেজ’-এর ডিজেল গাড়ির চাহিদা ছিল প্রায় ৭৬%। এ বার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশে। পেট্রোলচালিত অ্যামেজ-এর বিক্রি এখন বেড়ে প্রায় ৬৪%। জাপানি ওই সংস্থাটিরই সিটি গাড়িটির পেট্রোল ও ডিজেল মডেলের অনুপাত ছিল গত বছর ৪৫:৫৫। এ বার তা ঠিক উল্টো ৫৫:৪৫।

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০২:১৫
Share: Save:

গত বছরের এপ্রিল থেকে অগস্টে কলকাতার বাজারে হোন্ডা ‘অ্যামেজ’-এর ডিজেল গাড়ির চাহিদা ছিল প্রায় ৭৬%। এ বার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশে। পেট্রোলচালিত অ্যামেজ-এর বিক্রি এখন বেড়ে প্রায় ৬৪%।

জাপানি ওই সংস্থাটিরই সিটি গাড়িটির পেট্রোল ও ডিজেল মডেলের অনুপাত ছিল গত বছর ৪৫:৫৫। এ বার তা ঠিক উল্টো ৫৫:৪৫।

পেট্রোল, ডিজেলের দামের ফারাক যত কমছে, দেশ জুড়ে তত বাড়ছে পেট্রোল গাড়ির চাহিদা। কলকাতা-সহ এ রাজ্যের বাজারও তার ব্যতিক্রম নয়। হোন্ডা ছাড়া মারুতি-সুজুকি, হুন্ডাই, টাটা মোটরস-এর মতো গাড়ি সংস্থার অভিজ্ঞতাও একই রকম।

পেট্রোলের চেয়ে ডিজেল গাড়ির দাম সাধারণ ভাবে অনেকটাই বেশি। কিন্তু জ্বালানি খরচ কম বলে অনেকেই ডিজেল গাড়ির দিকে ঝোঁকেন। বিশেষত যাঁরা বেশি পথ পাড়ি দেন, তাঁদের কাছেই ডিজেল গাড়ির চাহিদা বেশি।

প্রসঙ্গত, পেট্রোলের দর বিনিয়ন্ত্রণের পরে গত ক’বছরে ডিজেলের তুলনায় পেট্রোলের দাম অনেক বেশি হারে বাড়তে থাকে। ফলে দ্রুত বাড়ে ডিজেল গাড়ির চাহিদা। হোন্ডা-র মতো সংস্থার ভাঁড়ারে সে সময়ে ডিজেল গাড়ি ছিল না। ফলে বাজারকে অস্বীকার করতে না-পেরে তারা এ দেশে নতুন লগ্নি করে অ্যামেজ গাড়িটি আনে। পরে অবশ্য তার পেট্রোল সংস্করণও আনা হয়।

সম্প্রতি এই ছবিটাই বেমালুম উল্টে গিয়েছে। পেট্রোল ও ডিজেলের দামের ফারাক কমায় হালে পেট্রোল গাড়ির চাহিদা বেড়েছে। এই অবস্থায় টাটা মোটরস, যাদের ন্যানো ছাড়া কোনও পেট্রোল গাড়ি ছিল না, তারাও পেট্রোল -চালিত নতুন ‘জেস্ট’ এনেছে। এটির অবশ্য ডিজেল সংস্করণও আনা হয়েছে। সংস্থার দাবি, পূর্বাঞ্চলে তাদের ৪০% বুকিং এসেছে এই পেট্রোলচালিত জেস্ট-এর জন্যই। এমনকী ন্যানো-র বিক্রিও বেড়েছে প্রায় ১৫%।

যদিও মারুতি-সুজুকি, হুন্ডাইয়ের মতো সংস্থার দাবি, কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের বাজারে এমনিতে পেট্রোল গাড়ির চাহিদাই বেশি। যেমন মারুতি-সুজুকির মুখপাত্রের মতে, এ রাজ্যে গাড়িগুলি সাধারণত কম পথ পাড়ি দেয়। দিল্লির মতো বাড়ি থেকে কর্মস্থলের দূরত্ব অত বেশি নয়। ফলে এখানে বিশেষ করে কম দামি ও ছোট পেট্রোল গাড়ির বাজার বেশি।

তাঁদের হিসেবে, সেই সূত্রে এ রাজ্যে পেট্রোলচালিত সুইফট -এর বিক্রি এমনিতেই বেশি। কিন্তু এখন তা আরও বেড়ে হয়েছে ৭১-৭২%। একই ছবি ডিজায়ার-এর ক্ষেত্রে। তবে বেশি দূরত্ব পাড়ি দিতে চাহিদা বেশি ডিজেল গাড়ির।

মুখপাত্রটি আরও জানান, দেশ জুড়ে ২০১২-’১৩ সালে ডিজেল গাড়ির চাহিদা ৫৮% থাকলেও ২০১৩-’১৪ সালে তা কমে এসেছে ৫৩ শতাংশে। ২০১৪-’১৫-র প্রথম ত্রৈমাসিকে তা আরও কমে হয়েছে ৫০%। অর্থাৎ, এখন পেট্রোল-ডিজেল গাড়ির চাহিদা প্রায় সমান।

হুন্ডাই-এর গ্র্যান্ড, এক্সেন্ট, এলিট আই২০, ভার্না, এলান্ট্রা ও সান্টা-ফে গাড়িগুলি পেট্রোল, ডিজেল, দু’ধরনের মডেলেই মেলে। সংস্থার মুখপাত্র জানান, এ রাজ্যে গ্র্যান্ড ও এক্সেন্ট-এর ক্ষেত্রে পেট্রোল গাড়ির চাহিদা বেশি।

আবার কম দামি ছোট গাড়ির ক্রেতা বা প্রথম গাড়ির ক্রেতার ঢল বেশি পেট্রোলচালিত গাড়ির দিকেই। এবং বাজারে কিছু দিন নেতিবাচক প্রভাব থাকার পরে ছোট ও কম দামি গাড়ি কেনার ঝোঁক এখন বাড়ছে। প্রথম বার গাড়ি কিনতেও আসছেন অনেকে। ফলে তাঁদের হাত ধরেই পেট্রোল গাড়ি কেনার ঝোঁকও বাড়ছে বলে মত অনেকের।

তবে ডিজেলের দাম বিনিয়ন্ত্রণ নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। যদিও গাড়ি শিল্পমহল স্পষ্ট জ্বালানি নীতির পক্ষে সওয়াল করছে। কিন্তু বিষয়টি স্পষ্ট না-হওয়ায় তারা আপাতত দু’ধরনের গাড়ি তৈরিতেই জোর দিচ্ছে। যেমন, টাটা মোটরসের দাবি, যেহেতু জ্বালানির দামের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, তাই পেট্রোল ও ডিজেল, দু’ধরনের গাড়ির ক্ষেত্রেই একটা ভারসাম্য রাখতে চায় তারা। হোন্ডা, মারুতি-সুজুকি, হুন্ডাই-ও জানিয়েছে, বাজারের চাহিদা মেনে গাড়ি জোগানোর জন্য তৈরি তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

petrol car demand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE