কেন্দ্রে নতুন সরকার গঠন ঘিরে তুঙ্গে উঠেছিল তাৎক্ষণিক উত্তেজনা। তাতে ভর করে একটু বেশিই গ্যাস ভরা হয়েছিল বাজারের বেলুনে। তা ধীরে ধীরে বেরোতে শুরু করায় রোজই এখন একটু একটু করে উচ্চতা কমছে। সূচক নামছে, কারণ উত্তেজনা কমে স্বাভাবিক হচ্ছে। এত উঁচু বাজারে ক্রেতা কম, বিক্রেতা বেশি। আর্থিক পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে বাজার পুরো স্বাভাবিক হতে হয়তো আরও ক’দিন সময় নেবে। রেকর্ড উচ্চতা থেকে নেমে সেনসেক্স এখন ২৪,২১৭ অঙ্কে। নিফ্টি ৭,২৩০ পয়েন্টে। এই উচ্চতাও অবশ্য যথেষ্ট বেশি।
মোদী সরকারের পদ বণ্টন এবং প্রাথমিক কর্মসূচি পছন্দ হয়েছে দেশি-বিদেশি লগ্নিকারীদের। সকলেরই ধারণা, এ বার ঘুরে দাঁড়াবে ভারতীয় অর্থনীতি। কারণ সরকার সংস্কারের পথে দ্রুত হাঁটবে। যে কারণে সবাই এখন তাকিয়ে বাজেটের দিকে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক দুনিয়া থেকে বড় কোনও প্রতিকূল খবর না-এলে বাজারের বড় পতনের আশঙ্কা কেউ করছেন না।
এ বার তাকানো যাক অর্থনীতির দিকে। সদ্য প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষে ভারতের জাতীয় উৎপাদন বেড়েছে ৪.৭% হারে। আগের বছরের থেকে তা ০.২% বেশি হলেও, এই নিয়ে টানা দু’বছরই বৃদ্ধি রইল ৫ শতাংশের নীচে। ওই বছর বর্ষা ভাল হওয়ায় কৃষি উৎপাদন বেড়েছে ৪.৭% হারে। ১৩% বৃদ্ধি হয়েছে পরিষেবা শিল্পেও। তবে হাল খারাপ শিল্পোৎপাদনের। বাড়ার বদলে তা কমেছে ০.৭%। অবশ্য পূর্বাভাসের তুলনায় (৪.৯%) ২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষে বৃদ্ধি কম হলেও অর্থনীতিবিদরা হতাশ নন। সবার আশা, নতুন সরকার বিভিন্ন সদর্থক পদক্ষেপ নেবে এবং দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি। কোন কোন শিল্প বেশি উপকৃত হয়, তার দিকে নজর রাখবে শেয়ার বাজার। কিছুটা দুশ্চিন্তা অবশ্যই থেকে যাবে বর্ষার সম্ভাব্য ঘাটতিকে কেন্দ্র করে।
শুক্রবার শেষ প্রহরে ফল বেরিয়েছে কিছু বড় সংস্থার। শেষ তিন মাসে লার্সেন অ্যান্ড টুব্রোর বিক্রি ২০০৩ কোটি বেড়ে ২০,০৭৯ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। নিট লাভ ৬৯% বেড়ে ছুঁয়েছে ২৭২৩ কোটি। অল্প হলেও আয় এবং লাভ বেড়েছে এম অ্যান্ড এম-এর। ইস্ট ইন্ডিয়া হোটেলের লাভ ৯ কোটি বেড়েছে। প্রায় ১২ কোটি টাকা লাভ বেড়েছে বার্জার পেন্টস-এর। তবে শেষ ৩ মাসে সিইএসসি-র নিট মুনাফা ১৩ কোটি টাকা কমে হয়েছে ২৪৩ কোটি। লাভ কমেছে টাটা মোটরসের। লোকসানে সবাইকে টেক্কা দিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। ২০১৩-’১৪ বছরে তাদের ক্ষতি পৌঁছেছে ৫,০০০ কোটি টাকার কাছে। ৭২% লাভ কমেছে কোল ইন্ডিয়ারও। আয় ৬৩% কমে নেমেছে ১,০১৫ কোটি টাকায়।
সব মিলিয়ে লগ্নির পরিবেশ ভালই। আশা, বর্ষায় খুব বেশি ঘাটতি না হলে ২০১৪-’১৫ ভালই কাটবে। অর্থনীতির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সূচক আরও উঠতে পারে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সূচক একটু বেশি উঁচুতে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। লগ্নিকারীদের এখন যা করা উচিত, তা হল:
• শেয়ারে নতুন লগ্নির ব্যাপারে সাবধানে চলা
• এই বাজারে এসআইপি পদ্ধতিতে লগ্নি ভাল
• কোনও শেয়ারে আশাতিরিক্ত লাভ দেখা দিলে তা বিক্রির কথা ভাবা
• পড়ে থাকা টাকা লিকুইড ফান্ডে রাখলে সাময়িক ভাল আয় হতে পারে
• সে কথা মাথায় রাখা
• বাজেট, বর্ষা, বিদেশি বাজারে নজর রাখা
• শেয়ার কেনা-বেচার আগে হোমওয়ার্ক করা
• সোনার দাম কমেছে। তাতে লগ্নি করার কথা ভাবা
• বাজেটে করমুক্ত বন্ড ইস্যুর অনুমতি দেওয়া হলে সেপ্টেম্বর থেকে তা বাজারে আসবে
• উঁচু হারে করদাতাদের এখনই করমুক্ত বন্ডে লগ্নির পরিকল্পনা করে অপেক্ষায় থাকা
• এখন থেকেই ২০১৪-১৫ বছরের জন্য কর সাশ্রয়কারী প্রকল্পে লগ্নি শুরু করা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy