Advertisement
০৭ মে ২০২৪
ঝুঁকির জল মাপছে কেন্দ্র

বাড়তি ঘাটতির বোঝা বয়েও বৃদ্ধির জন্য লগ্নি

ঝিমিয়ে থাকা বৃদ্ধির হারকে দ্রুত চাঙ্গা করতে প্রয়োজনে রাজকোষ ঘাটতির ঊর্ধ্বসীমা শিথিল করার কথা ভাবছে কেন্দ্র। সম্প্রতি একাধিক বার এই ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন। এর পক্ষে সওয়াল করেছেন নীতি আয়োগের নবনিযুক্ত কর্ণধার অরবিন্দ পানাগড়িয়া। শুক্রবার এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তাও জানান, “রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখা অবশ্যই জরুরি। কিন্তু তা বলে বৃদ্ধির বিনিময়ে নয়।” ওই মন্ত্রকেরই আর এক কর্তার মন্তব্য, “চিরকাল বৃদ্ধির হার নিয়ে আপোস করা সম্ভব নয়।”

অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন

অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৮
Share: Save:

ঝিমিয়ে থাকা বৃদ্ধির হারকে দ্রুত চাঙ্গা করতে প্রয়োজনে রাজকোষ ঘাটতির ঊর্ধ্বসীমা শিথিল করার কথা ভাবছে কেন্দ্র।

সম্প্রতি একাধিক বার এই ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন। এর পক্ষে সওয়াল করেছেন নীতি আয়োগের নবনিযুক্ত কর্ণধার অরবিন্দ পানাগড়িয়া। শুক্রবার এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তাও জানান, “রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখা অবশ্যই জরুরি। কিন্তু তা বলে বৃদ্ধির বিনিময়ে নয়।” ওই মন্ত্রকেরই আর এক কর্তার মন্তব্য, “চিরকাল বৃদ্ধির হার নিয়ে আপোস করা সম্ভব নয়।”

চলতি অর্থবর্ষের শেষে রাজকোষ ঘাটতিকে জাতীয় আয়ের ৪.১ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার কথা গত বাজেটে বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। পরের অর্থবর্ষে তা নেমে আসার কথা ৩.৬ শতাংশে। কেন্দ্র বিলক্ষণ জানে, ঘাটতিকে সেই লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখতে না-পারলে, বিদেশি লগ্নিকারীদের রোষে পড়তে হতে পারে। কমতে পারে তাদের আস্থা। ফের এক বার রেটিং ছাঁটাইয়ের হুমকি দিতে পারে মূল্যায়ন সংস্থাগুলি। এমনকী সুদ কমানোর বিষয়ে বেঁকে বসতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্কও। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাজেটের আগে এ নিয়ে ভাবনা শুরু হয়েছে অর্থ মন্ত্রকের অন্দরে।

অনেকেই মনে করছেন, ঝিমিয়ে থাকা অর্থনীতিতে দ্রুত প্রাণ ফেরাতে এখন কিছুটা ঝুঁকি নিয়েও এমনটা ভাবতে বাধ্য হচ্ছে কেন্দ্র। কারণ, দিল্লির তখ্তে জমানা বদলের পরে ভারতে লগ্নির বিষয়ে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছেন ঠিকই। কিন্তু সেই লগ্নি এখনও সে ভাবে আসেনি। অথচ ২০১৬ সালের মার্চের মধ্যে রেল-সড়ক-বন্দর সমেত বিভিন্ন পরিকাঠামোয় বিপুল অঙ্কের লগ্নি আনতে চায় কেন্দ্র। উপদেষ্টারা মনে করছেন, আগে কেন্দ্র লগ্নি করতে এগোলে, তবেই ওই সব ক্ষেত্রে টাকা ঢালতে এগোবেন বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা। আর লগ্নি এলে, তবেই অর্থনীতির চাকা ঘুরবে। উঠবে বৃদ্ধির হার। সম্প্রতি অর্থ প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিন্হাও বলেছেন, যে ভাবে হোক অর্থনীতিকে দ্রুত ৭-৮% বৃদ্ধির কক্ষপথে ফেরাতে চায় মোদী-সরকার।

সরকারি বিনিয়োগে যে অনেক সময় বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরে, তা অর্থনীতির পুরনো পাঠ। কিন্তু তা করতে গিয়ে যদি রাজকোষ ঘাটতি বাড়ে, তাকে কী ভাবে নেবে মূল্যায়ন সংস্থাগুলি? মনমোহন-জমানার শেষ দিকের মতো তখন তারা ফের রেটিং ছাঁটাইয়ের হুমকি দিলে, সেই ক্ষতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে? সে ক্ষেত্রে তো বিদেশি লগ্নিকারীদের কাছে ব্রাত্য হয়ে যাবে ভারত। এর জেরে শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদ না-কমালে, বিনিয়োগ করা কঠিন হবে দেশীয় শিল্পপতিদের পক্ষে।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে এই ঝুঁকির কথা মাথায় রাখবে কেন্দ্র। তা এড়াতে তারা চেষ্টা করবে অন্য জায়গায় অপ্রয়োজনীয় ব্যয় (যেমন তেল, গ্যাস, সার ইত্যাদিতে ভর্তুকি) ছেঁটে তা পরিকাঠামোয় লগ্নি করতে। যে যুক্তি দেখিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ ক’বার পেট্রোল-ডিজেলে উৎপাদন শুল্ক বসিয়েছে কেন্দ্র। শুধু তা-ই নয়। বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমার সুবিধা, স্পেকট্রাম নিলাম, কয়লাখনি নিলাম এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ থেকেও বড়সড় অঙ্কের টাকা আসবে কেন্দ্রের হাতে। বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরাতে তা সরকারি লগ্নি হিসেবে কাজে লাগানো হবে বলে মনে করছেন অনেকে। তা ছাড়া, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালে, কর আদায় বাড়বে। তখন রাজকোষ ঘাটতি ফের নিয়ন্ত্রণে আনাও তুলনায় সহজ হবে বলে তাঁদের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arvind subramanian
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE