Advertisement
০২ মে ২০২৪

র‌্যানব্যাক্সিকে কিনছে সান ফার্মা

ফের হাত বদলাচ্ছে র্যানব্যাক্সি ল্যাবরেটরিজ-এর। এ বার জাপানের ওষুধ সংস্থা দায়িচি স্যাঙ্কিও-র হাত থেকে সংস্থাটিকে ৩২০ কোটি ডলারে (প্রায় ১৯,২০০ কোটি টাকা) কিনে নিচ্ছে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ওষুধ সংস্থা দিলীপ সাঙ্ঘভির সান ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ। মান খারাপ হওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি মার্কিন মুলুকে র্যানব্যাক্সির ওষুধ বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে সে দেশের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক এফডিএ। চাপানো হয়েছে জরিমানাও।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:২৬
Share: Save:

ফের হাত বদলাচ্ছে র্যানব্যাক্সি ল্যাবরেটরিজ-এর। এ বার জাপানের ওষুধ সংস্থা দায়িচি স্যাঙ্কিও-র হাত থেকে সংস্থাটিকে ৩২০ কোটি ডলারে (প্রায় ১৯,২০০ কোটি টাকা) কিনে নিচ্ছে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ওষুধ সংস্থা দিলীপ সাঙ্ঘভির সান ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ। মান খারাপ হওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি মার্কিন মুলুকে র্যানব্যাক্সির ওষুধ বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে সে দেশের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক এফডিএ। চাপানো হয়েছে জরিমানাও। আর এই পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়েই সোমবার হাতবদলের ঘোষণা করল সান ও র্যানব্যাক্সি। ২০০৮ সালে দুই ভাই, মালবিন্দর ও শিবিন্দর সিংহের কাছ থেকে এই সংস্থার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়েছিল দায়িচি। বর্তমানে র্যানব্যাক্সিতে তাদের মালিকানা প্রায় ৬৩.৫%।

ওষুধ মহলের বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকায় র্যানব্যাক্সি বিপাকে পড়ার পর থেকেই নিজেদের ভারতীয় শাখাটিকে কাঁধ থেকে নামাতে তৎপর হয়েছিল দায়িচি। আর শেষ পর্যন্ত সান তা কিনতে রাজি হওয়ায় তারা যে কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে, সেটা স্পষ্ট হাতবদলের অঙ্ক থেকেই। কারণ দায়িচি নিজে বছর ছয়েক আগে যে দামে (৪৬০ কোটি ডলার বা শেয়ার পিছু ৭৩৭ টাকা) র্যানব্যাক্সির সিংহভাগ মালিকানা কিনেছিল, তার থেকে ৩৮% কমেই তা সান-কে বেচতে রাজি হয়েছে তারা।

চুক্তি অনুযায়ী, শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমেই র্যানব্যাক্সির রাশ সানের হাতে তুলে দেবে দায়িচি। র্যানব্যাক্সির প্রতি ১০টি শেয়ারের জন্য পাওয়া যাবে সান ফার্মা-র ৮টি শেয়ার। এই হিসাবে র্যানব্যাক্সির এক একটি শেয়ারের মূল্য কার্যত দাঁড়ায় ৪৫৭ টাকা। যা অবশ্য সংস্থার শেয়ারের বর্তমান গড় দামের তুলনায় প্রায় ১৮% বেশি।

অবশ্য সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের এক বড় অংশের ধারণা, এই হস্তান্তরে লাভের পাল্লা ভারী সান ফার্মা-র প্রতিষ্ঠাতা, ওষুধ শিল্পের ধনকুবের দিলীপ সাঙ্ঘভির। ১৯৮৩-এ মানসিক রোগের মাত্র পাঁচটি ওষুধ নিয়ে গুজরাতের বাপি-তে যে সানের গোড়াপত্তন, তা আজ ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ওষুধ সংস্থা। বাবার কাছে ১০ হাজার টাকা ধার নিয়ে যে সংস্থার পথ চলা শুরু, শেয়ার দরের নিরিখে তার বর্তমান বাজার মূল্য ১.২১ লক্ষ কোটি টাকা। শুধু তা-ই নয়, র্যানব্যাক্সি হাতে আসার পর অ্যাবট ল্যাবরেটরিজ-কে টপকে দেশে ওষুধ সংস্থা হিসেবে প্রথম স্থানটিও ছিনিয়ে নেবে তারা। ভারতের বাজারে বিক্রি ছোঁবে ১১০ কোটি ডলার। পাশাপাশি, বছরে ৪২০ কোটি ডলার ব্যবসার দৌলতে জেনেরিক ওষুধের দুনিয়ায় সান-র্যানব্যাক্সির সম্মিলিত সংস্থার ঝুলিতে ঢুকবে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম হওয়ার তকমা। ৬৫টি দেশে উপস্থিতি থাকবে। শুধু আমেরিকাতেই থাকবে ৬২৯টি জেনেরিক ওষুধের অনুমোদন ও ২০০ কোটি ডলারের উপর ব্যবসার ক্ষেত্র।

ওষুধ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই মনে করছেন যে র্যানব্যাক্সিকে সানের হাতে তুলে দিয়ে কার্যত দায়মুক্ত হতে চলেছে দায়িচি, তা যে আসলে সোনার খনি, সেটা সাঙ্ঘভির মতো দুঁদে ব্যবসায়ীর পক্ষেই বোঝা সম্ভব। কারণ বিপাকে পড়া সংস্থা কিনে, সেটিকে ঘুরে দাঁড় করানোর বিশেষজ্ঞ হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। এই হস্তান্তরকে আমেরিকা ও বিশ্বের নানা সম্ভাবনাময় বাজারে ভারতীয় ওষুধ শিল্পের বাজার বাড়ানোর উদ্যোগ হিসেবেও দেখছেন তাঁরা।

তবে সম্প্রতি তাদের গুজরাত কারখানায় তৈরি হওয়া ওষুধের মান নিয়ে মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রকের রক্তচক্ষুর মুখে পড়েছে সান ফার্মা নিজেও। কিছু ওষুধ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞাও বসেছে। সে ক্ষেত্রে সাঙ্ঘভির দাবি, সংযুক্তির পর তাঁদের মূল লক্ষ্যই হবে বিধি মেনে ওষুধ তৈরির মান বাড়ানো। যাতে রফতানির বৃহত্তম বাজার আমেরিকায় সান ও র্যানব্যাক্সির হারানো জমি ফিরে পাওয়া যায়। ঘোষণার পর এ দিন সান ফার্মার শেয়ার দর ২.৬৮% বেড়েছে। পড়েছে র্যানব্যাক্সির দর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ranbaxy sun pharma dilip shanghvi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE