Advertisement
E-Paper

সংস্কার, শিল্পনীতিই পাখির চোখ বাজেটে

শুধু শুকনো প্রতিশ্রুতি আর করছাড়ে চিঁড়ে ভিজবে না। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পকে সফল করতে স্পষ্ট, নির্দিষ্ট নীতি তৈরি করতে হবে প্রতিটি শিল্পের জন্য। জোর দিতে হবে পরিকাঠামোয়। গতি বাড়াতে হবে সংস্কারের চাকাতেও। ২৮ ফেব্রুয়ারি মোদী-সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেটে এ সব বিষয়ে দিশা নির্দেশকেই পাখির চোখ করছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩২
অরুণ জেটলি

অরুণ জেটলি

শুধু শুকনো প্রতিশ্রুতি আর করছাড়ে চিঁড়ে ভিজবে না। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পকে সফল করতে স্পষ্ট, নির্দিষ্ট নীতি তৈরি করতে হবে প্রতিটি শিল্পের জন্য। জোর দিতে হবে পরিকাঠামোয়। গতি বাড়াতে হবে সংস্কারের চাকাতেও। ২৮ ফেব্রুয়ারি মোদী-সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেটে এ সব বিষয়ে দিশা নির্দেশকেই পাখির চোখ করছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

মন্ত্রকের এক উপদেষ্টার যুক্তি, শুধু করছাড় বা কিছু বিশেষ সুবিধা দিলেই শিল্পপতিরা কারখানা গড়তে আসবেন না। বস্ত্র থেকে চর্ম, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ থেকে অলঙ্কার প্রতিটি শিল্পের জন্যই প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট নীতি। জোর দেওয়া জরুরি বিদ্যুৎ, সড়কের মতো পরিকাঠামোয়। দরকার হলে সেখানে টাকাও ঢালতে হবে সরকারকে। তাঁর দাবি, আসন্ন বাজেটে এই দিকগুলিতে বিশেষ ভাবে নজর দেবেন জেটলি।

তবে কারখানা তৈরিতে উৎসাহ দিতে, করছাড়ের সুবিধার কথাও অবশ্যই ভাবা হচ্ছে। এ নিয়ে বাজেটে সম্ভবত একগুচ্ছ ঘোষণাও করবেন জেটলি। যেমন
• গাড়ি ও ওষুধ শিল্পে অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদিত পণ্যের থেকেও কাঁচা মালে করের হার বেশি। সেই সমস্যা দূর করার চেষ্টা হতে পারে
• উৎসাহ দেওয়া হতে পারে বস্ত্র ও শিল্প পার্ক গড়ায় চর্মজাত পণ্যে উৎপাদন শুল্ক কমতে পারে ওই শুল্ক কমতে পারে যন্ত্রাংশ আমদানিতেও
• গয়না শিল্পের কাঁচামালে (সোনা, রুপো) কমতে পারে শুল্কের বোঝা
• একগুচ্ছ সংস্কারের ঘোষণা হতে পারে কারখানা তৈরি ও কারখানার উৎপাদন বাড়ানোয় উৎসাহ দিতে।

গত সেপ্টেম্বরে ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প শুরু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশ-বিদেশের শিল্পপতিদের আহ্বান জানিয়েছিলেন, “এ দেশে কারখানা গড়ুন। তারপর সেখানে তৈরি পণ্য ভারতে বিক্রির পাশাপাশি রফতানি করুন সারা বিশ্বে।” কিন্তু তারপরে পাঁচ মাস কেটে গেলেও, প্রকল্পে সাড়া সে ভাবে মেলেনি। এ দেশের অনেক শিল্পপতি অর্থনীতির চাকা ঘুরতে শুরু করার কথা বলেছেন। কিন্তু কারখানা গড়তে টাকা ঢালেননি। বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি শেয়ার বাজারে বিস্তর টাকা ঢালছে। কিন্তু এ দেশে কারখানা গড়তে ভিন্দেশি বা বহুজাতিক সংস্থার ভিড় তেমন চোখে পড়েনি। বরং মোদী-সরকারের ন’মাস কেটে যাওয়ার পরেও ব্যবসায় লাল ফিতের ফাঁস আলগা না-হওয়ায় শিল্পমহল ক্রমশ ধৈর্য হারাচ্ছে বলে সম্প্রতি বার্তা দিয়েছেন এইচডিএফসি-র কর্ণধার দীপক পরাখ। এই পরিস্থিতিতে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’কে সফল করতে বাজেটকেই পাখির চোখ করছেন জেটলি। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, বাজেটে যে বিষয়গুলির উপর সবথেকে বেশি জোর দেওয়া হবে, তার মধ্যে অন্যতম ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প।

বিনিয়োগের পথে বাধা হিসেবে শিল্প যে বিষয়গুলির দিকে আজ দীর্ঘ দিন আঙুল তুলে আসছে, তার মধ্যে রয়েছে জমি কেনার গেরো, লাল ফিতের ফাঁস, করনীতিতে অস্বচ্ছতা ইত্যাদি। এর মধ্যে জমি অধিগ্রহণ সহজ করতে আইন সংশোধনে অর্ডিন্যান্স এনেছে কেন্দ্র। দেশে লগ্নি করার জন্য সব ছাড়পত্র অনলাইনে এক জায়গায় পেতে পোর্টাল চালু করা হয়েছে গতকালই। বহু ক্ষেত্রে প্রশস্ত করা হচ্ছে বিদেশি লগ্নি আসার পথ। এ সবের পরে শিল্প চায়, এ বার বাজেটে করনীতি নিয়ে আশ্বাস দিন অর্থমন্ত্রী।

শিল্পের দাবি, জেটলি বলুন, করের হার ঘনঘন বদলাবে না। রাজস্ব বাড়াতে গিয়ে কর আদায়ে আগ্রাসী হবে না কেন্দ্র। নতুন করে কর বসবে না পুরনো লেনদেনে। আগে অর্থমন্ত্রী এ নিয়ে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিলেও, তা কাগজে -কলমে দেখতে চায় শিল্পমহল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, বাজেটে তার ইঙ্গিত থাকবে।

হর্ষপতি সিঙ্ঘানিয়ার মতো শিল্পপতিরা আবার বলছেন, কারখানায় দক্ষ শ্রমিকের অভাব। অর্থাৎ, প্রশিক্ষণেও অর্থ বরাদ্দ করতে হবে জেটলিকে। আপোস করা যাবে না রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গেও। যাতে মূল্যবৃদ্ধি লাগামছাড়া না হয়। কারণ, তবেই সুদ কমাবেন রির্জাভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন। ঋণ সস্তা হবে শিল্পের জন্য।


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

কংগ্রেসের অভিযোগ, মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নিছকই গিমিক। মনমোহন-সরকারের উৎপাদন শিল্পের নীতিতেই নতুন মোড়ক। কংগ্রেস নেতা পি সি চাকোর অভিযোগ, “নীতি একই আছে। শুধু প্রচার আর বিপণন কৌশল বদলেছেন মোদী।”

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রকের শিল্পনীতি বিভাগের সচিব অমিতাভ কান্ত। আগে কেরলে পর্যটক টানতে ‘গড্স ওন কান্ট্রি’ নামে প্রচার কৌশল তৈরি করেছিলেন যিনি। পরে দেশের পর্যটন প্রসারে তৈরি করেন ‘ইনক্রেডিবল্ ইন্ডিয়া’। কান্তর বক্তব্য, “গত কয়েক বছরে পরিষেবা ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। কিন্তু কারখানায় যে পরিমাণ কর্মসংস্থান হয়, পরিষেবায় তা হয় না। তাই কাজের যথেষ্ট সুযোগ তৈরি করতে ১৩-১৪ শতাংশ হারে বাড়তেই হবে কারখানার উৎপাদন।”

central budget
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy