সরকার ঘোষিত কর ছাড়কে যদি কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) আর্থিক ক্ষতি বলে দাগিয়ে দেন, তবে তা গণতন্ত্রের পক্ষে হানিকর, মন্তব্য করলেন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর ডি সুব্বারাও। ২০০৭-এ দ্বিতীয় ইউপিএ জমানায় যখন ২০০১ সালের নিলামের দরে ২জি স্পেকট্রাম বিলি হয়েছিল, সুব্বারাও তখন কেন্দ্রীয় অর্থসচিব। ফলে তাঁর এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
২০০৭-এ টেলিকম পরিকাঠামো বাড়াতে কিছু সংস্থাকে স্পেকট্রাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএমকে-র এ রাজার টেলিকম মন্ত্রক। টেলিকম দফতর (ডট) এই ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রক ট্রাইয়ের সঙ্গে কথা বলে প্রস্তাব দেয়, ২০০১-এর নিলামে ওঠা দামেই তা বণ্টন হোক। এর পরে বিষয়টি অর্থ মন্ত্রকে যায়। সুব্বারাও তাঁর সাম্প্রতিক বইয়ে লিখেছেন, ‘‘আমি বলেছিলাম, ২০০১-এর দামে ২০০৭-০৮ সালে স্পেকট্রাম বণ্টন ঠিক নয়। নতুন করে নিলাম হওয়া উচিত।’’ তবে ডট যে দেশের টেলিকম ক্ষেত্রকে ছড়িয়ে দিতে স্পেকট্রামের দাম কম রাখার জন্যই পুরনো নিলামের দরে তা বিক্রির পক্ষপাতী ছিল, সে কথাও বলেন সুব্বারাও। তাঁর মতে, সেটা গ্রাহকদের স্বার্থেই জরুরি ছিল। আবেদনের ভিত্তিতে ২০০৮-এর ১০ জানুয়ারি ৪৬টি সংস্থাকে ১২০টি লাইসেন্স বণ্টন করে ডট। ২০১০-এর নভেম্বরে সংসদে সিএজি-র রিপোর্ট অভিযোগ তোলে, বাজার দরের থেকে নিচু দামে স্পেকট্রাম বিলির ফলে সরকারের ১.৭৬ লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
এক সাক্ষাৎকারে সুব্বারাওয়ের প্রশ্ন, ‘‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয় রাজকোষের কিছু ত্যাগ স্বীকার করেও বৃহত্তর স্বার্থে টেলিকম ক্ষেত্রের গভীরতা বাড়ানো হবে, তা হলে কি সেই সিদ্ধান্ত বদলে নিজের সিদ্ধান্ত চাপাতে পারে সিএজি?... সিএজি-কে এই বিষয়ে মাথা গলাতে দেওয়া হলে তো বাজেটের কর ছাড় সম্পর্কেও এমন মন্তব্য ঠেকানো যাবে না! নিশ্চিত ভাবেই তাতে গণতন্ত্রের উন্নতি হবে না। বরং ক্ষতি হবে।’’
২০১২-এ সুপ্রিম কোর্ট ২০০৭-এর ২জি স্পেকট্রাম বণ্টনের পদ্ধতি খারিজ করে। সম্প্রতি সেই রায়ে কিছু বদল চেয়ে কেন্দ্র শীর্ষ আদালতে গিয়েছে। তবে সূত্রের খবর, তাদের আবেদন গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে সুপ্রিম কোর্ট। বিরোধীরা অবশ্য আগেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ এনেছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)