ক্ষুদ্র ও ছোট চা চাষিদের নিজস্ব কারখানা গড়ায় উৎসাহ দিতে নিয়মকানুন শিথিল করল টি বোর্ড। কারখানা গড়তে তাঁদের এখনকার মতো আর বোর্ডের অনুমোদন (টি মার্কেটিং কন্ট্রোল অর্ডার বা টিএমসিও) নিতে হবে না। তবে নজরদারি একেবারে তুলে নিচ্ছে না বোর্ড। ওই সব কারখানায় প্রক্রিয়া করা চা নিলামে বেচতে বোর্ড তাদের আলাদা সার্টিফিকেট দেবে। টিএমসিও নেওয়ার তুলনায় নয়া ব্যবস্থা অনেক সরল হবে বলেই মনে করছে বোর্ড। যা নয়া সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে বলে আশা ক্ষুদ্র ও ছোট চা চাষিদের সংগঠন সিস্টা-রও।
চা কারখানা গড়তে এখন প্রত্যেক বাগানকে যে-টিএমসিও নিতে হয়, তা সময়সাপেক্ষ। ওই ছাড়পত্র না-পেলে ব্যাঙ্কঋণ মেলে না। ছোট চাষিদের পক্ষে ব্যবস্থাটি জটিল দাবি করে চা শিল্প সেই নিয়ম শিথিলের দাবি তোলে। সেই অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও তা কার্যকর হয়নি। অবশেষে গত সোমবার সেই নীতি নির্দেশ হিসেবে জারি করেছে টি বোর্ড। উল্লেখ্য, দৈনিক ২০০ কেজির কম চা তৈরি করলে সেই কারখানাকে মাইক্রো (ক্ষুদ্র) ও ২০০ থেকে ৫০০ কেজি-র কম চা তৈরি করলে সেটিকে মিনি (ছোট) কারখানা ধরা হয়।
চা শিল্প বলতে আগে সংগঠিত ক্ষেত্রের বড় চা বাগানকে বোঝাত। ’৯০ -এর দশক থেকে উত্তরবঙ্গ, অসম-সহ নানা প্রান্তে ছোট ছোট জমিতেও চা চাষ শুরু হয়। নিয়ম অনুযায়ী, ২৫ একরের কম জমিতে চা চাষ হলে তা ক্ষুদ্র ও ছোট বাগান হিসেবে গণ্য হয়। আর প্রায় ৯০% চা চাষিরই বাগানের আয়তন ২ একরের কম। পরবর্তী কালে ছোট বাগানে তৈরি চায়ের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যার কারণ চা চাষে অধিকাংশেরই সম্যক ধারণা না-থাকা। তা ছাড়া, ছোট বাগানের পাতা সাধারণত বটলিফ কারখানায় বিক্রি করতে হত। অভিযোগ ওঠে, সেখানে চা পাতা পাঠানোর নিয়মকানুন ঠিক মতো না-মানারও।
এ সব সত্ত্বেও দেশের চা উৎপাদনের একটা বড় অংশ উত্তরোত্তর ক্ষুদ্র ও ছোট চা চাষিদের হাতে চলে আসছিল। এখন মোট চায়ের ৩৩% (সিস্টার দাবি ৩৬%)-ই আসে ওই সব বাগান থেকে। ফলে বাগানগুলির মানোন্নয়নের প্রশ্নটি বড় হয়ে ওঠে। তাদের জন্য তাই পৃথক বিভাগ চালু করে টি বোর্ড। নিযুক্ত হয় কারখানা ও চাষের জন্য পরামর্শদাতা। পাশাপাশি, এ ধরনের বাগান মালিকরা যাতে নিজেরা কারখানাও গড়তে পারেন, সে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ওঠে। ছোটদের মধ্যেও তুলনায় কিছু বড় বাগান মিলে স্বনির্ভর গোষ্ঠী করে ইতিমধ্যেই জলপাইগুড়ির পানবাড়ি, জয়জল্পেশ, নবজাগরণে তিনটি কারখানা চালাচ্ছে।
কিন্তু একেবারে ক্ষুদ্র ও ছোট চাষিরা নিজেরা বা কিছু বাগান মিলে স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে কারখানা তৈরি করতে চাইলে টিএমসিও-র দীর্ঘ সম্মতি প্রক্রিয়ার জটে সমস্যায় পড়ে। সিস্টার প্রেসিডেন্ট বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি করছিলাম। এতে ছোট চা চাষির পক্ষে দাম পাওয়ার নিশ্চয়তা আরও বাড়বে। বাগানগুলির চায়ের গুণগত মান বাড়াতে পারলে রফতানি বাজারেও ভাল সাড়া মিলবে।”
প্রক্রিয়া সরলীকরণের সঙ্গে আধুনিক যন্ত্র তৈরি ও তার জোগানেও জোর দিচ্ছে টি বোর্ড। সেই লক্ষ্যে গত কয়েক বছর ধরে আইআইটি-খড়্গপুরের কৃষি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ যে-যন্ত্র নির্মাণ করেছে, তা বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহারের উপযোগী কি না তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে নাগরাকাটায় টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন (টিআরএ)। এ মাসেই চা পাতা তোলার কাজ শুরু হচ্ছে। মাস ছ’য়েক নাগরাকাটায় সেই পরীক্ষার কাজ চলবে।
এ নিয়ে সেখানকার অধ্যাপকদের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠকও করেন টি বোর্ড, টিআরএ কর্তারা। বৈঠকে এখনই সেটি বাণিজ্যিক ব্যবহারের ছাড়পত্র না-পেলেও কোনও চাষি চাইলে তা নিয়ে আপত্তি তোলা হবে না বলেই সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর।