Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Fire

আগুনে বই, নথি হারিয়ে বিপাকে আটটি পরিবার

শুধু রত্না নয়, আগুনে গুরুত্বপূর্ণ নথি হারিয়ে বিপদে পড়েছেন ই এম বাইপাসের রুবি ঝিলপার্কের প্রায় তিরিশ জন বাসিন্দা।

খোঁজ: পুড়ে যাওয়া ঝুপড়ি থেকে বই-খাতা উদ্ধারের চেষ্টা। বৃহস্পতিবার, রুবি ঝিলপার্কে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

খোঁজ: পুড়ে যাওয়া ঝুপড়ি থেকে বই-খাতা উদ্ধারের চেষ্টা। বৃহস্পতিবার, রুবি ঝিলপার্কে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৪২
Share: Save:

পোড়া জিনিসপত্রের স্তূপে ছাই সরিয়ে বই, খাতা খুঁজছিল মেয়েটি। রত্না সর্দার নামে ওই কিশোরীর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে কিছু দিন পরেই। বুধবার মাঝরাতের আগুনে ঘর পুড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে তার পরীক্ষার প্রস্তুতিও। শুধু রত্না নয়, আগুনে গুরুত্বপূর্ণ নথি হারিয়ে বিপদে পড়েছেন ই এম বাইপাসের রুবি ঝিলপার্কের প্রায় তিরিশ জন বাসিন্দা।

দমকল সূত্রের খবর, বুধবার রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ ঝিলপার্কের পাশে একটি ঝুপড়ি থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখেন সেখানকারই এক বাসিন্দা। সুশান্ত কয়াল নামে ওই যুবক বেরিয়ে এসে চিৎকার করতে শুরু করেন। ঘুম ভেঙে বাকিরা বেরিয়ে আসেন। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের ঝুপড়িতে। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভালেও তত ক্ষণে সম্পূর্ণ পুড়ে যায় আটটি ঝুপড়ি। দমকলের প্রাথমিক অনুমান, কেউ ধূমপান করছিলেন। বিড়ি বা সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ থেকেই আগুন লাগে।

বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে রত্নার মা বর্ণনা সর্দার বলেন, ‘‘আমি পরিচারিকার কাজ করি, স্বামী রিকশা চালান। অনেক কষ্ট করে মেয়েকে লেখাপড়া শেখাচ্ছিলাম। আগুনে মেয়ের বইখাতা সব পুড়ে গিয়েছে। কী ভাবে পরীক্ষা দেবে জানি না।’’ মঞ্জুরানি হালদার নামে আর এক বাসিন্দারও পুরো ঝুপড়ি পুড়ে গিয়েছে। তিনিও পেশায় পরিচারিকা। তাঁর ছেলে দীপঙ্কর বিজয়গড় কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র, মেয়ে মধুমিতা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে নার্সিং পড়ছেন। দীপঙ্কর বলেন, ‘‘কলেজের সমস্ত বই, নোট পুড়ে গিয়েছে। আবার কী ভাবে সব জোগাড় করব ভেবে পাচ্ছি না।’’

পুড়ে যাওয়া ঝুপড়ির দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন অসীমা হালদার। তিনি বলেন, ‘‘চেঁচামেচি শুনেই নাতিকে ঘুম থেকে তুলে কোলে নিয়ে কোনও রকমে বেরিয়ে আসি। আগুনের আঁচে আমার চুলের কিছুটা পুড়ে গিয়েছে। আগুন এতটাই তীব্র ছিল যে কিছুই বার করতে পারিনি। নাতির বইপত্র, আমাদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড থেকে ব্যাঙ্কের নথি সবই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’ বাবার চিকিৎসার জন্য পিএফের টাকা তুলে রেখেছিলেন একটি কারখানার কর্মী রত্নেশ্বর হালদার। তিনি জানান, পুরো টাকাই আগুনে পুড়ে গিয়েছে।

আটটি পরিবারের প্রায় তিরিশ জন সদস্যকে পাশেই কেএমডিএ-র একটি অস্থায়ী শ্রমিক ছাউনিতে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে অপরিসর জায়গায় তাঁদের থাকার অসুবিধা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দুর্গতরা। ঘটনার পরে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে না আসায় ক্ষুব্ধ তাঁরা। এ বিষয়ে শ্যামলবাবুকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও জবাব আসেনি। রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মণীন্দ্র দত্ত। স্থানীয় বরো চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘পুরসভার তরফে দুর্গতদের ত্রাণের যাবতীয় ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire E M Bypass
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE