প্রতিবাদের ভিডিয়ো করছেন রফিকুল। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
কলেজ স্ট্রিট মোড়ে পেশাদার ক্যামেরাম্যানদের ঢঙেই মোবাইলে বিক্ষোভ-ধর্নার ভিডিয়ো তুলছিলেন বছর পঁয়ত্রিশের যুবক। পরিচয় হতে জানা গেল, তিনি কোনও সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি নন। পেশায় বাসচালক। রফিকুল ইসলাম নামে ওই যুবক হাওড়া-বাগুইআটি রুটের ৪৪ নম্বর বাস চালান। ধর্নার জন্য রাস্তা বন্ধ। আটকে গিয়েছে বাস। রফিকুল তাই রাস্তায় নেমে ধর্নার ভিডিয়ো তুলতে শুরু করলেন, যা তিনি পরে ছড়িয়ে দেবেন সোশ্যাল মিডিয়া ও ইউটিউবে।
শখ নয়, এই ভিডিয়ো আসলে খেটে খাওয়া রফিকুলের প্রতিবাদের হাতিয়ার। তিনি জানান, দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আরও অনেকের মতো তিনিও খুব উদ্বিগ্ন। রবিবার রাতে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ভাবে পড়ুয়াদের মারধর করার ঘটনা ঘটেছে, তা দেখে তিনি চুপ থাকতে পারছেন না। রফিকুলের কথায়, ‘‘ভোর থেকে পেটের দায়ে বাস চালাই। মিছিলে হাঁটার তো সময় নেই। তাই শহরের রাস্তায় মিছিল বা ধর্না দেখলেই তার ভিডিয়ো তুলে ফেসবুক ও ইউটিউবে দিয়ে দিচ্ছি। যাতে আরও বেশি মানুষ এই ধরনের প্রতিবাদে শামিল হন। এ ভাবেই নিজের প্রতিবাদ জানাই আমি।’’
কলেজ স্ট্রিট মোড়ে তখন জেএনইউ-র ঘটনার প্রতিবাদে ডিএসও-র অবস্থান বিক্ষোভ চলছে। রফিকুল বললেন, ‘‘পড়াশোনা বেশি দূর করিনি। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরাই যে দেশের ভবিষ্যৎ, তা জানি। ওঁদের উপরে হামলা হবে কেন? এটা কোনও ভাবেই মানতে পারছি না। কাল রাতে পড়ুয়াদের উপরে হামলার খবর শুনেই ঠিক করেছিলাম, এর প্রতিবাদে মিছিল হলেই তার ভিডিয়ো তুলে নেব।’’
নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় গত কয়েক দিনে শহরে যে মিছিল হয়েছে, তার বেশ কয়েকটির ভিডিয়ো তুলেছেন রফিকুল। একগাল হেসে বললেন, ‘‘মিছিল হলেই বাস আটকে পড়ে। আর বাস আটকালেই রাস্তায় নেমে সেই মিছিলের ভিডিয়ো তুলে ফেলি।’’ পরিবার নিয়ে রফিকুল থাকেন নিউ টাউনের কাছে চিনার পার্ক এলাকায়। বললেন, ‘‘আমার ছেলেটা ছোট। এখন দেশে যা অস্থির পরিস্থিতি, তাতে ভয় লাগে। এ ভাবে চললে দেশ এগোবে কী করে বলুন তো?’’
রফিকুলের কথার মাঝেই কলেজ স্ট্রিটের ধর্না শেষ হয়ে যায়। রাস্তাও প্রায় পরিষ্কার। বাস চলতে শুরু করে। মোবাইল পকেটে রেখে আবার স্টিয়ারিং ধরেন রফিকুল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy