উদ্যোগ: আবাসনের ছাদে সেই সৌর প্যানেল। নিজস্ব চিত্র
আবাসিকেরা নিজেদের উদ্যোগে ছাদে তৈরি করছেন সৌর বিদ্যুৎ। এ জন্য মাসে বিদ্যুৎ খরচে সাশ্রয় হচ্ছে কুড়ি হাজার টাকারও বেশি। ওই পরিমাণ তাপ বিদ্যুৎ তৈরিতে বছরে ৫৯.৫ টন কয়লা পুড়িয়ে যে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ হত, তা বন্ধ হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। বাইপাসের ধারে রাজ্য সরকারের তৈরি ওই আবাসনের বাসিন্দাদের এই প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী।
সূত্রের খবর, আটটি টাওয়ারে ৫৭৬টি ফ্ল্যাট রয়েছে ওই আবাসনে। আট নম্বর টাওয়ারের ছাদের একাংশ ব্যবহার করে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল বসানো হয়েছে। ৬০টি প্যানেল বসাতে ১৬০০ বর্গফুট জায়গা লেগেছে। এ জন্য খরচ হয়েছে প্রায় দশ লক্ষ টাকা। যা আবাসিকেরা নিজেরাই দিয়েছেন। গত ডিসেম্বর থেকে সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ঝকঝকে রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়ায় উৎপাদিত সৌর বিদ্যুতের পরিমাণ যে আরও বাড়বে সে ব্যাপারে আশাবাদী আবাসিকেরা।
ওই সৌর বিদ্যুতের সাহায্যে পাম্প চালিয়ে ছাদের জলাধারে জল তোলা এবং সর্বসাধারণের ব্যবহৃত আলো জ্বালানো হচ্ছে। বাকি বিদ্যুৎ সরাসরি গ্রিডে পৌঁছে যাচ্ছে। সেই বিদ্যুৎ বিক্রির অর্থেই সাশ্রয় হচ্ছে আবাসিকদের। কোল ইন্ডিয়ার অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার এবং ওই আবাসিক সংগঠনের অন্যতম কর্তা নিবিড় দাশগুপ্ত বলছেন, “ওই পরিমাণ বিদ্যুৎ তৈরিতে বছরে ৫৯.৫ টন কয়লা পুড়িয়ে যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদন হতে পারে, এই প্রকল্পে তা পুরো বন্ধ হচ্ছে। বাকি সাতটি টাওয়ারেও পরিবেশবান্ধব এই ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে।”
কী ভাবে সম্ভব হল এই উদ্যোগ? আবাসনটিতে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে অবসরপ্রাপ্ত বেশ কয়েক জন ইঞ্জিনিয়ার থাকেন। মূলত তাঁদের উদ্যোগে অন্যদের এক জোট করে এই কাজ সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবাসিকেরা। রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের এক কর্তার মতে, সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম পাঁচ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন না হলে তা গ্রিডে পাঠানো যায় না। অর্থাৎ বিদ্যুৎ বিক্রি করা যায় না। এ ক্ষেত্রে ওই নির্দিষ্ট বিধি মেনে বিক্রি করা হয়েছে।
এত দিন সরকারি উদ্যোগে বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা হয়েছে। কখনও স্কুল, কলেজ, কখনও বা সরকারি ভবনের ছাদে তা হয়েছে। সেই দিক দিয়ে এই জোট বদ্ধ ব্যক্তিগত উদ্যোগ, অন্যদের কাছে ভাল দৃষ্টান্ত হবে।
সংগঠন সূত্রের খবর, সবাইকে এক মত করে এগোতে প্রথমে কিছুটা অসুবিধে হচ্ছিল। বিষ্ণুপদ ঘোষ, অসিত সাহা, রবীন্দ্রনাথ শেঠের মতো আবাসিকেরা সকলে এই প্রকল্প নিয়ে উৎসাহী। কতটা বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে, তা মোবাইল অ্যাপে দেখার ব্যবস্থাও তাঁরা করে নিয়েছেন।
রাজ্য বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের ব্যক্তিগত এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। ওঁদের দেখে অন্য আবাসনগুলি এগিয়ে এলে তা সার্বিক ভাবে পরিবেশের উপরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy