—প্রতীকী ছবি।
শীতের শুরু থেকেই প্রতি বছর শহরের বাতাসে বাড়তে থাকে দূষণ। এ বছর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে মহানগরে বাজি পো়ড়ানোয় রাশ টানতে পারেনি প্রশাসন। ফলে কালীপুজোর সাত দিন পরেও মহানগরের বায়ু ‘বিষাক্ত’। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, সোমবার বিকেল ৪টে পর্যন্ত রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বায়ুদূষণের সূচক ছিল ৩১৬। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বরে সেই সূচক ছিল ২১৬। অথচ সূচক ১০০-র নীচে থাকাই কাম্য। পর্ষদের হিসেবে, এই সূচক ২০০ ও ৩০০-রও বেশি হওয়ার অর্থ যথাক্রমে ‘খারাপ’ এবং ‘অতি খারাপ’।
পর্ষদের তথ্য থেকেই জানা যাচ্ছে, উত্তর কলকাতার ক্ষেত্রে (বিটি রোডে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর) এ দিন ভোরে বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম ২.৫) মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৪২৭ মাইক্রোগ্রাম। যা ‘মারাত্মক’ গোত্রে পড়ে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এলাকায় ভোরে এর মাত্রা ছিল ৪১৬। পরিবেশকর্মীদের একাংশের আশঙ্কা, ছটপুজো উপলক্ষে আজ, মঙ্গলবার ও আগামিকাল, বুধবারও বাজি পোড়ার জেরে বায়ু আরও বিষিয়ে যেতে পারে।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বাজি সংক্রান্ত নির্দেশিকা দেওয়ার সময়েই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, কালীপুজো ও দীপাবলির আগে-পরে সাত দিনের বায়ুদূষণ পরিমাপ করে তা আদালতে জমা দিতে হবে। ওই সূত্রের দাবি, সেই সংক্রান্ত হিসেব বিশ্লেষণ করে শীর্ষ আদালতে জমা দেওয়া হবে এবং এ ব্যাপারে পর্ষদের মন্তব্যও আদালতে জানানো হবে। কিন্তু কালীপুজো-দীপাবলির পরে দূষণ কমল না কেন? পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলছেন, ‘‘শীত আসার আগে এমনিই দূষণের মাত্রা বাড়ে। তার উপরে দূষণের বিভিন্ন উৎস সক্রিয় রয়েছে।’’ পরিবেশবিদদের একাংশের ব্যাখ্যা, বৃষ্টিতে বাতাসের ধূলিকণা ধুয়ে গেলে দূষণ কমে। কিন্তু এখন শুকনো হাওয়া বইছে। ফলে বাতাসে ধূলিকণা একই ভাবে রয়ে গিয়েছে। গত বছর কালীপুজোয় বৃষ্টি হওয়ার কারণে দূষণ এক ধাক্কায় বেশ খানিকটা কমেছিল। কিন্তু এ বছরে বর্ষা সময়ের আগেই বিদায় নিয়েছে। ফলে বেড়েছে দূষণ। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘শীত এলে দূষণ বাড়বে, তা জানাই ছিল। তাই বাজি পোড়ানোয় রাশ টানা উচিত ছিল প্রশাসনের।’’
আরও পড়ুন: শূন্য থেকে শহর দেখাতে তৈরি গেট
এই টানা-পড়েনের মধ্যেও দূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আশার আলো দেখিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো করার আর্জি জানাতে এ দিন জাতীয় পরিবেশ আদালতে গিয়েছিল দু’টি সংগঠন। কিন্তু তাদের বক্তব্য শুনতেই চায়নি বিচারপতি এস পি ওয়াংদি এবং বিশেষজ্ঞ-সদস্য নাগিন নন্দের ডিভিশন বেঞ্চ। ফলে এ বছরও রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজোয় নিষেধাজ্ঞা রইল।
আরও পড়ুন: সরকারি কার্ডেই দিন-বিভ্রাট
ছটপুজোয় সরোবরের জলে ফেলা ফুল, তেল, প্লাস্টিকে দূষণ ছড়ায়। বাজি পোড়ালে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জীববৈচিত্র। বায়ুদূষণের মাত্রা তো বাড়েই। এই অভিযোগে আদালতে যান পরিবেশকর্মীরা। এর পরে রবীন্দ্র সরোবরে সব পুজোর উপরেই জারি হয় নিষেধাজ্ঞা। কেএমডিএ-র কৌঁসুলি পৌষালী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দু’টি সংগঠনের কৌঁসুলিরা মামলা করতে চেয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আদালত জানিয়ে দেয়, আর্জি শোনা হবে না।’’ কেএমডিএ সূত্রে খবর, আজ, মঙ্গলবার ও কাল, বুধবার যাতে পুজো দিতে আসা লোকজন সরোবর চত্বরে না ঢোকেন, তাই গেট বন্ধ রাখা হবে। পুলিশ জানায়, থাকছে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা। পাশাপাশি, শহরের ১০৩টি ঘাটে ২০০০ পুলিশকর্মী ও ৩২২ পিকেট থাকছে। থাকছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy