Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Kolkata Metro

ই-পাস না পেয়ে দুর্ভোগ, বাস ধরতে গেলেন অনেকেই

এ দিন সকাল থেকেই ই-পাস নিয়ে তৈরি হয় বিভ্রান্তি।

অগত্যা: অনলাইনে মেট্রোর পাস করাতে না পেরে শেষমেশ বাসের অপেক্ষায় নিত্যযাত্রীরা। সোমবার, শোভাবাজারে। ছবি: সুমন বল্লভ

অগত্যা: অনলাইনে মেট্রোর পাস করাতে না পেরে শেষমেশ বাসের অপেক্ষায় নিত্যযাত্রীরা। সোমবার, শোভাবাজারে। ছবি: সুমন বল্লভ

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৪২
Share: Save:

ওঁরা ভেবেছিলেন, সকাল থেকেই পাল্টে যাবে দমদম মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন রাস্তার চেহারা। প্রায় ছ’মাস পরে ফের জেগে উঠবে স্টেশন চত্বর। আবার দোকানে আসবেন ক্রেতারা। অটোর জন্য পড়বে লম্বা লাইন। আর স্টেশনের কর্মীরা ভেবেছিলেন, যাত্রীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাবেন। কিন্তু পাঁচ মাস পরে সোমবার, মেট্রো চালু হলেও সারা দিন হাতে গোনা কিছু যাত্রীকেই দেখা গেল যাতায়াত করতে। শুধু দমদম নয়, কবি সুভাষ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি স্টেশনেরই ছবিটা ছিল একই। কোনও কোনও স্টেশনে ঢোকার লাইন দেখা গেলেও তা স্বাভাবিক দিনের ১০ শতাংশও নয়। এ দিন অনেকেই আবার ই-পাস না থাকায় ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন স্টেশন থেকে।

এ দিন সকাল থেকেই ই-পাস নিয়ে তৈরি হয় বিভ্রান্তি। অনেকে ভেবেছিলেন, স্মার্ট কার্ড নিয়ে এলেই চড়া যাবে মেট্রোয়। ই-পাসের বিষয়টি ভাল ভাবে জানতেন না তাঁরা। দমদম, শোভাবাজার, কালীঘাট, রবীন্দ্র সদন— প্রায় প্রতিটি স্টেশনেই দেখা গেল, মেট্রো ও পুলিশের আধিকারিকেরা যাত্রীদের বোঝাচ্ছেন, স্মার্টফোনে কী ভাবে ই-পাস ডাউনলোড করতে হবে।

দমদম স্টেশনে সকাল ৯টায় এসেছিলেন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক অশোক রায়। হাতে মোবাইল থাকলেও তা স্মার্টফোন নয়। অশোকবাবু যাবেন কালীঘাটে। নিজের ফোনটি মেট্রোর এক কর্মীকে দিয়ে তিনি অনুরোধ করলেন, তাতে ই-পাস ভরে দিতে। মেট্রোকর্মী তাঁকে জানালেন, ওই ফোন দিয়ে ই-পাস কেনা যায় না। স্মার্টফোন না থাকলে কম্পিউটারে ই-পাস ডাউনলোড করে তার প্রিন্ট-আউট নিয়ে আসতে হবে। অগত্যা অশোকবাবু রওনা দিলেন বাস ধরতে। তাঁর প্রশ্ন , ‘‘যাঁদের স্মার্টফোন নেই, তাঁদের কি মেট্রোয় চড়ার অধিকারও নেই?’’

তবে যাঁদের স্মার্টফোন রয়েছে, তাঁরাও অনেকে ই-পাস ডাউনলোড করতে পারেননি বলে অভিযোগ। অনেকেই জানিয়েছেন, মেট্রো স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে বহু চেষ্টা করেও মেট্রোর অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারেননি তাঁরা। সকাল ৯টা থেকে আধ ঘণ্টা ধরে অ্যাপ ডাউনলোডের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে বাস ধরতে রওনা দিলেন বেসরকারি অফিসের কর্মী অনন্যা মজুমদার। বললেন, ‘‘মেট্রো ধরতে গিয়ে অফিসের দেরি হয়ে গেল। এখন আবার বাস ধরতে হবে।’’

অনন্যার মতো অনেকেই ই-পাস না-পেয়ে বাস ধরে কর্মস্থলে গিয়েছেন। বাসযাত্রীরা অনেকেই ভেবেছিলেন, সোমবার মেট্রো চালু হলে বাসে ভিড় একটু কমবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। শোভাবাজার মেট্রো স্টেশনের কাছেই দেখা গেল, বাসস্টপে ভিড়। হাজরা মোড়ে এক যাত্রী বললেন, ‘‘এখন মেট্রোয় চড়ার যা হ্যাপা, তার চেয়ে বাসই ভাল।’’ আর এক জনের মতে, ‘‘সামাজিক দূরত্ব রেখে মেট্রো চালানোর এই সিদ্ধান্ত খুব ভাল। কিন্তু এটা করতে গিয়ে অনেকে মেট্রোয় উঠতে পারছেন না।’’

মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন দোকানি ও অটোচালকেরা যা আশা করেছিলেন, বাস্তব চিত্র তার সঙ্গে মেলেনি। দমদম মেট্রোর গেটের পাশেই ব্যাগের ছোট দোকান উত্তম বিশ্বাসের। তাঁর কথায়, ‘‘পাঁচ মাস পরে সকাল সকাল ঝাড়পোঁছ করে দোকান খুললাম। কিন্তু কোথায় খদ্দের!’’ এক লটারির টিকিট বিক্রেতা জানালেন, তিনিও পাঁচ মাস পরে দোকান খুলেছেন। লটারির টিকিটের পাশাপাশি স্যানিটাইজ়ার ও মাস্কও বিক্রি করবেন। কিন্তু ক্রেতা নেই।

শোভাবাজার-উল্টোডাঙা বা রাসবিহারী-গড়িয়াহাট রুটের অটোচালকেরা জানান, সেই ফাঁকা অটো নিয়েই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। এক অটোচালক বললেন, ‘‘মেট্রো বন্ধ থাকলে যত যাত্রী পাই, তার চেয়ে দু’চার জন বেশি পেয়েছি।’’ কালীঘাট মেট্রো স্টেশন থেকে বেরিয়ে অটোয় উঠতে উঠতে এক যাত্রী বললেন, ‘‘আসলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ট্রেন চালাতে গিয়ে মেট্রো বেশি স্মার্ট হয়ে গিয়েছে। প্ৰথম দিন বলে হয়তো একটু বেশিই অসুবিধা হল। আশা করি, পরে আর হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Metro Lockdown Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE