পোষ্যের সঙ্গে শঙ্কর জয়সওয়ারা। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
মাস দশেক আগের এক শীতের দুপুর। আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ওয়ার্ড থেকে সবেমাত্র বেরিয়েছেন মধ্যবয়সী শঙ্কর জয়সওয়ারা। আচমকাই ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে তাঁর সামনে এসে পড়ল এক কোকিল। সেই কোকিল তখন থেকেই শঙ্করের সর্বক্ষণের সঙ্গী। কিন্তু ঠাঁই বদল হতেই মনখারাপ একদা কাশীপুরের ওই বাসিন্দা ওই বন্দির। সঙ্গীর খেলার জায়গা পাল্টে গেলে সে মানিয়ে নিতে পারবে তো? শঙ্কার মেঘ বাসা বেঁধেছে শঙ্করের মনে। বুধবার আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে শঙ্করের ঠাঁই হয়েছে বারুইপুরে।
২১ বছর ধরে সংশোধনাগারেই রয়েছেন শঙ্কর। একটি খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত তিনি। বছরখানেক আগে পর্যন্তও সংশোধনাগারের অন্য বন্দিদের সঙ্গে সময় কাটাতেন শঙ্কর। কিন্তু মাস দশেক আগে এক কোকিল তাঁর জীবন অনেকটাই বদলে দিয়েছে। ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে শঙ্করের সামনে এসে পড়েছিল অসুস্থ কোকিলটি। তাকে শুরুতে ওড়ানোর চেষ্টাও করেছিলেন ওই বন্দি। কিন্তু ওড়ার ক্ষমতা ছিল না সেই পাখির। সেবা-শুশ্রূষা করে কোকিলটিকে সুস্থ করে তোলেন শঙ্কর। নিয়ম করে তাকে খাওয়াতেই এখন দিনের অনেকটা সময় কাটে তাঁর। কোকিলের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। যা নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপও কম হয়নি। তবু সঙ্গীকে ছাড়েননি শঙ্কর। কোকিলটিও ছেড়ে যায়নি তাঁকে। তবে বন্যপ্রাণ আইন অনুযায়ী, কোকিল পোষা যায় না।
বুধবার বারুইপুরের ধোপাগাছিতে নবনির্মিত কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। এ দিন থেকেই সেখানে থাকতে শুরু করলেন ৫০ জন বন্দি। সেই তালিকায় রয়েছেন শঙ্করও। এ দিন বারুইপুর সংশোধনাগারের অডিটোরিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বসে কোকিলকে সঙ্গী হিসেবে পাওয়ার কথা বলছিলেন শঙ্কর। সেই কোকিল তখন শঙ্করের বাঁ হাতে চুপটি করে বসে। শঙ্কর বলেন, ‘‘কোকিলকে নিয়ে মেতে থাকতাম বলে অন্যেরা (বন্দি) বলত, কেন পাগলামি করছিস! কিন্তু ওর প্রতি আমার বড় মায়া পড়ে গিয়েছে।’’
আলিপুরে খেলার জায়গা পেয়েছিল কোকিলটি। বারুইপুরে এখনও সে ভাবে গাছ নেই। কিন্তু সেখানে গাছ লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু সেই সব গাছের বেড়ে ওঠায় এখনও অনেকটা সময় লাগবে। শঙ্করের তাই চিন্তা, সঙ্গীর খেলার জায়গা কোথায় হবে? এ দিনের অনুষ্ঠানে শঙ্কর চেয়ার ছাড়লে সেখানেই এসে বসে কোকিলটি। সে-ই এখন শঙ্করের আপনজন! সুখ-দুঃখের ভাগীদার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy