Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সিনেমা দেখিয়ে জীবনের পাঠ পথশিশুদের

বাধ্যবাধকতার জীবনে অভ্যস্ত এই সব শিশুদের রবিবার অন্য রকম দিন কাটানোর সুযোগ করে দিয়েছিলেন ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের গবেষক-পড়ুয়ারা।

ছবি-ঘর: সিনেমা দেখানো হচ্ছে পথশিশুদের। রবিবার, সল্টলেকে।   ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

ছবি-ঘর: সিনেমা দেখানো হচ্ছে পথশিশুদের। রবিবার, সল্টলেকে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৯ ০২:৪৯
Share: Save:

এক লিফটে উঠেছে চার জন। বয়স আট থেকে চোদ্দোর মধ্যে। পরনে জিন্‌সের সঙ্গে রং-বেরঙের শার্ট। তবে খালি পা। নাক থেকে গড়াতে থাকা জল হাত দিয়ে মুছে নিয়ে তাদেরই এক জন বলল, ‘‘দেখ, বোঝাই যাচ্ছে না যে ছ’তলায় উঠছি!’’ যাকে কথাটা বলা হল, সে-ই দলের মধ্যে সবচেয়ে বড়। গলা যতটা সম্ভব ভারী করে সে বলল, ‘‘তোরা জানিস না, এ রকমই লাগে। বোঝা যায় না।’’ সল্টলেকের একাধিক অফিস-বিল্ডিংয়ে জল দেওয়ার কাজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে এর পরে সে বলে, ‘‘লিফটে ওঠা আমার মুখস্ত!’’

চোদ্দো বছরেই এত কাজ করা হয়ে গিয়েছে?

কিশোরের উত্তর, ‘‘কী করব! করতে হয়। বাবা তো বাড়িতে শোয়া। মা একা পারে না।’’

বাধ্যবাধকতার জীবনে অভ্যস্ত এই সব শিশুদের রবিবার অন্য রকম দিন কাটানোর সুযোগ করে দিয়েছিলেন ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের গবেষক-পড়ুয়ারা। সল্টলেকের সেক্টর-১ ক্যাম্পাস লাগোয়া এলাকার পথশিশুদের এ দিন অডিটোরিয়ামে নিয়ে এসে নানা ধরনের সিনেমা দেখান তাঁরা। ‘লিটল সিনেমা’ নামের সেই উৎসবে দেখানো স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিগুলির বিষয়, মজার ছলে জীবন সংগ্রাম ও বুনিয়াদি শিক্ষা। ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজকে এ কাজে সহযোগিতা করেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সিনেমা দেখতে এ দিন হাজির হয়েছিল প্রায় ৩৫ জন শিশু, কিশোর-কিশোরী।

উদ্যোক্তাদের তরফে গবেষক পড়ুয়া পল্লবী মণ্ডল বলছিলেন, ‘‘কলকাতায় হওয়া অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল বিশ্বকাপের সময়ে এদের অধিকাংশ ঘরছাড়া হয়েছিল। এখন বাবা-মায়ের সঙ্গে সেক্টর-১ এর কলোনিগুলিতে থাকে। গবেষণার কাজে প্রথম এই শিশুদের সঙ্গে কথা হয় আমাদের। এখন প্রতি শনিবার করে ওদের সঙ্গে সময় কাটাই আমরা।’’ পল্লবী জানান, ক্যাম্পাস ভবনের একটি ঘরে প্রতি শনিবার এই শিশুদের পড়ানোর পাশাপাশি আঁকা, হাতের কাজ শেখানোরও চেষ্টা চলছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এই শিশুদের নিয়ে একটি নাটকের উৎসব করারও পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধিকর্তা অচিন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই শিশুরা নিজেদের মতো স্কুলে যায়। আমরা বরং ওদের অন্য রকম একটা জীবন বোধের হদিস দেওয়ার চেষ্টা করছি।’’ সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘স্কুলছুটের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। শিক্ষার প্রতি টান বজায় রাখতে এই শিশুদের নিয়ে আমাদের পড়ুয়াদের এই উদ্যোগ।’’

বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ অডিটোরিয়াম জুড়ে কচি-কাঁচার ভিড়। সিনেমার দৃশ্য দেখে কেউ হেসে গড়িয়ে পড়ছে। তো কেউ আবার পাশের জনকে বলছে, ‘‘দেখলি তো ঝগড়া করতে নেই।’’ কয়েক মিনিট পরেই আবার এক শিশু চিৎকার জুড়ল, ‘‘খিদে লেগেছে। খেতে দাও।’’ উপরে সিনেমার পর্ব যখন চলছে, তখন লিফটে করে নীচে নেমে এল এক শিশুকন্যা। তার কোলে আবার একরত্তি শিশুকন্যা। রিসেপশনের ঘরের মেঝেয় চাদর পেতে কোলের শিশুকে শুইয়ে দিয়ে সে বলল, ‘‘বোন ঘুমিয়ে পড়েছে। এখানে ঘুমোক। আমি যাই সিনেমা দেখি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Street Children NGO
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE