Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Calcutta High Court

মুমূর্ষু বন্দিদের বাড়ি ফেরাতে নির্দেশ

বন্দিদের বাড়িতে ফেরানোর আগে কিছু শর্তও পালন করতে হবে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২১ ০২:৪৯
Share: Save:

লৌহকপাটের আড়ালে জীবনের শেষ প্রহর গুনছেন তাঁরা। চিকিৎসকদের বয়ান অনুযায়ী, অসুস্থতায় তাঁদের জীবনীশক্তি শেষ হয়ে আসছে। এই ধরনের ‘টার্মিনালি ইল’ বা মরণাপন্ন বন্দিদের ৮ জানুয়ারি, শুক্রবার থেকে সাত দিনের মধ্যে আত্মীয়স্বজনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিবিএন রাধাকৃষ্ণন এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার রায় দিয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন জেলের মৃত্যুপথযাত্রী বন্দিরা যাতে স্বজন-সান্নিধ্যে শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন, সেই জন্যই তাঁদের বাড়িতে ফেরত পাঠিয়ে দিতে হবে। মরণাপন্ন রোগীদের নিয়ে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছিল। তাতেই এই রায় দেওয়া হয়েছে।

তবে বন্দিদের বাড়িতে ফেরানোর আগে কিছু শর্তও পালন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট বন্দি যাতে বাড়িতেই আবদ্ধ থাকেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে আত্মীয়স্বজনকে। সে ক্ষেত্রে বন্দির কোনও নিকটাত্মীয়কে কারা দফতরের কাছে জামিনদার থাকতে হবে। ওই বন্দির উপরে নজর রাখতে হবে স্থানীয় পুলিশকেও। বন্দি বাড়ির বাইরে যেতে পারবেন শুধু চিকিৎসার প্রয়োজনে।

কোভিড পরিস্থিতিতে এই মামলার সূত্রপাত। গত ২৩ ডিসেম্বর তার শুনানি শেষ হয়। এডিজি (কারা)-র তরফে রাজ্যের বিভিন্ন জেলে মরণাপন্ন বন্দির তালিকা পেশ করা হয়েছিল আদালতে। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, রায় ঘোষণার সাত দিনের মধ্যেই ওই বন্দিদের বাড়িতে ফেরাতে হবে। কারা দফতরের খবর, নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মূলত প্রেসিডেন্সি, দমদম সেন্ট্রাল জেল ও বর্ধমান জেল মিলিয়ে এই ধরনের বন্দি আছেন ৩০-৩১ জন।

প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ তাদের রায়ে উল্লেখ করেছে, ভারতীয় দণ্ডবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি বা অন্য কোনও আইনে ‘কারাবন্দি’র নির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেওয়া নেই। ‘কারাবন্দি’র অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্বাধীন গতিবিধি খর্ব করে দেওয়া। কিন্তু কারাবন্দি মানেই প্রথাগত জেল বা কারাগারে বন্দি করা নয়। কিছু ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নিজের বাড়িতেই বন্দি করে রাখা সম্ভব। বিশেষ পরিস্থিতিতে মানবিক কারণে ও সহমর্মিতাবশত মরণাপন্ন দণ্ডিত বা বিচারাধীন বন্দিকে স্বজনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া যেতে পারে। মৃত্যু যখন সমাসন্ন, তার আগে একটি মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যই এ ক্ষেত্রে কাজ করেছে বলে আইনজীবী শিবিরের অভিমত।

রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত এই মামলায় একটি বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, বহু বন্দির পরিবারেরই মরণাপন্ন নিকটজনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার সামর্থ্য থাকে না। সেই সব ক্ষেত্রে কী হবে? আদালতের নির্দেশ, সে-ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারকেই নিজেদের খরচে সংশ্লিষ্ট বন্দিকে হাসপাতাল বা হোমে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে এবং সেবা করতে হবে। কোনও বন্দির পরিবার যদি তাঁকে ফিরিয়ে নিতে না-চায়, তা হলেও সরকারের তরফে সেই বন্দিকে হাসপাতাল বা কোনও হোমে পাঠিয়ে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে হবে।

আলিপুর মহিলা জেলের বন্দিনী মুর্শিদা বেগম ক্যানসারে মরণাপন্ন। তাঁর আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শুধু নির্দেশ নয়, এই ধরনের রোগীরা যাতে ছাড়া পেতে পারেন, তার জন্য একটি বোর্ড তৈরি করা দরকার। তারাই নিয়মিত নজরদারি করবে এবং মরণাপন্ন রোগীদের বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।’’ তাঁর বক্তব্য, বহু বন্দি কার্যত বিনা বিচারে বছরের পর বছর আটকে আছেন। অনেক সময়েই জেলের পরিস্থিতি এবং চিকিৎসার ঘাটতিতে তাঁদের রোগ মারাত্মক আকার নেয়। সে-দিকেও প্রশাসনের নজর দেওয়া প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court Jail Authority Inmates
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE