উপাচার্যের ঘরের সামনে সৌরভ অধিকারী, অশোক রুদ্র। — নিজস্ব চিত্র
তিনি ‘দাদা’ ধরতে জানেন। আবার প্রয়োজন মতো ‘দাদা’ বদলেও নেন!
তাই রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ হোক কিংবা কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাস—সব জায়গাতেই দাপিয়ে বেড়ান তিনি। ছাত্র হোক বা শিক্ষক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ‘সৌরভে’ মাত হননি, এমন কাউকে নাকি খুঁজে পাওয়াই ভার!
তিনি সৌরভ অধিকারী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক। বুধবার কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপরে হামলার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এই নেতাকেই!
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র অবশ্য বলছেন, শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনায় সৌরভ এই প্রথম অভিযুক্ত হলেন না। ২০১৩-র কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভাগীয় প্রধানকে নিগ্রহে নাম জড়ায় সৌরভের। গত বছর শারীরবিদ্যার শিক্ষক রোশেনারা মিশ্রকেও (বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের মেয়ে) নিগ্রহের ঘটনাতেও অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কেন?
টিএমসিপি-র একাংশই বলছেন, কল্যাণীর বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের সান্ধ্যকালীন এম টেক কোর্সে পড়তে এসেই নেতাদের নজরে পড়েন শিক্ষক দম্পতির সন্তান সৌরভ। সে সময় রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে টিএমসিপি-র তেমন অস্তিত্ব ছিল না। তাই সহজেই ইউনিট সম্পাদক হয়ে ওঠেন তিনি। ‘দাদা’ হিসেবে ধরে নেন সংগঠনের তৎকালীন রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডাকে। রাজ্য সভাপতির ঘনিষ্ঠ হয়ে তরতরিয়ে উপরে উঠতে থাকেন। রোশেনারা মিশ্রকে নিগ্রহ করার পরেও সৌরভের সমর্থনে মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের বাইরে পৌঁছে গিয়েছিলেন শঙ্কু।
সংগঠনে শঙ্কুদেবের আসন অবশ্য বেশি দিন টেকেনি। রাজ্য সভাপতির হাল ধরেন অশোক রুদ্র। খাস কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপি নেতারাই বলছেন, তখনই ‘শঙ্কুদা’র বদলে সৌরভ ধরে নেন ‘অশোকদা’কে। তাই সংগঠনের শীর্ষনেতা বদলালেও বদলায়নি সৌরভের ‘সৌরভ’! শোনা যায়, কলেজ স্ট্রিট এলাকার এক তৃণমূল নেতাও নাকি ‘সৌরভে’ মুগ্ধ!
এ দিন শঙ্কুদেবকে ফোন করলে সাড়া মেলেনি। এসএমএসেরও উত্তর দেননি তিনি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রও সৌরভের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, ‘‘আমি যত দূর দেখেছি, এ দিন সৌরভ কোনও অন্যায় করেনি।’’
দলের অনেকেই অবশ্য বলেন, ‘দাদা’দের সামনে রেখেই বারবার পার পেয়ে যান সৌরভ। তা সে শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনাই হোক কিংবা ছাত্র সংসদে ‘এডু ফেয়ার’-এর দুর্নীতি। তৃণমূলের একাংশই বলছেন, লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠায় দলের শীর্ষনেতাদের কাছে তিরস্কার সইতে হয়েছিল সৌরভকে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, পরীক্ষার সময় সৌরভ কিছু ‘বিশেষ’ সুবিধা পান। তাতে সায় থাকে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষকর্তাদের একাংশেরও! সৌরভকে ‘ধরলে’ নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ‘বাঁকা’ কাজও ‘সোজা’ হয়ে যায়।
এ সব নিয়ে কী বলছেন সৌরভ?
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপুটে ছাত্রনেতার বক্তব্য, সব অভিযোগ মিথ্যা। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা তিনি ভাবতেও পারেন না। ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে বিশ্বাস করি। শিক্ষক নিগ্রহের কথা আমার মনেও আসে না,’’ বললেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy