Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
CISF

‘চাকরের কাজ’ করাতেন অফিসার, আত্মঘাতী জওয়ান

তিরিশ বছর বয়সী সিআইএসএফ জওয়ান সুনীল প্রসাদ রজক ২০১৭ সালের ২৪ জুন রায়পুর থেকে বদলি হয়ে কলকাতায় আসেন। তাঁর পোস্টিং হয় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সিআইএসএফের ‘বি’ কোম্পানিতে। তাঁর স্ত্রী প্রমিতাও সিআইএসএফ কর্মী। তাঁরও পোস্টিং হয় বিমান বন্দরেরই ‘এ’ কোম্পানিতে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৮ ১৮:১৪
Share: Save:

ছ’মাসেরও বেশি সময় উর্দ্ধতন অফিসার নিজের কোয়াটার্সে আটকে রেখে তাঁকে চব্বিশ ঘণ্টার চাকরের কাজ করতে বাধ্য করতেন। পদে পদে সেই অফিসার এবং তাঁর বাড়ির অন্য সদস্যরা শারীরিক ও মানসিক ভাবে হেনস্থা করতেন তাঁকে। অভিযোগ, সেই মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত তিন তলা থেকে ঝাঁপ মেরে আত্মহত্যা করেন কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী (সিআইএসএফ)-এর এই জওয়ান। মৃত জওয়ানের স্ত্রী সেই ডেপুটি কমান্ডান্ট পদমর্যাদার অফিসারের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন।

৩০ বছর বয়সী সিআইএসএফ জওয়ান সুনীল প্রসাদ রজক ২০১৭ সালের ২৪ জুন রায়পুর থেকে বদলি হয়ে কলকাতায় আসেন। তাঁর পোস্টিং হয় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সিআইএসএফের ‘বি’ কোম্পানিতে। তাঁর স্ত্রী প্রতিমাও সিআইএসএফ কর্মী। তাঁরও পোস্টিং হয় বিমানবন্দরেরই ‘এ’ কোম্পানিতে।

এয়ারপোর্ট থানার পুলিশকে জানানো লিখিত অভিযোগে প্রতিমা জানিয়েছেন, পোস্টিংয়ের দু’দিন পর থেকেই অর্থাৎ ২০১৭ সালের ২৬ জুন থেকে তাঁর স্বামীকে ডেপুটি কমান্ডান্ট কুমার পুরুষোত্তম বিমানবন্দরের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনও ডিউটি না দিয়ে, নিজের বাড়ির ডিউটিতে নিযুক্ত করেন। প্রতিমা তাঁর লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, “আমার স্বামীর সঙ্গে ওই ডেপুটি কমান্ডান্ট কার্যত ক্রীতদাসের মত ব্যবহার করা শুরু করেন। তাঁকে ২৪ ঘন্টা ওই ডেপুটি কমান্ডান্টের বাড়িতে চাকরের কাজ করতে হত। কুমার পুরুষোত্তম এবং তাঁর পরিবারের লোকজন আমার স্বামীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন।”

প্রতিমা এয়ারপোর্ট থানার তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, তাঁর শ্বশুর রামপ্রসাদও সিআইএসএফেই চাকরি করতেন। ছেলের কাছে এই ঘটনা শুনে তিনি উর্দ্ধতন একাধিক অফিসারের কাছে ছেলের এই ডিউটি পরিবর্তনের আর্জি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। উল্টে প্রতিমার স্বামীর ওপর অত্যাচার বাড়তে থাকে। প্রতিমা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন তাঁর স্বামী এবং এ বছর ১৩ জানুয়ারি তাঁকে বিমানবন্দর চত্বরেই রহস্যজনক ভাবে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছিল, তিন তলা থেকে ঝাঁপ মেরে আত্মঘাতী হন সুনীল প্রসাদ রজক।

আরও পড়ুন- গুলি-যুদ্ধ কলকাতা বিমানবন্দরে, ঘায়েল তিন ‘জঙ্গি’​

আরও পড়ুন- এলাকা কার! পচা দেহ রেখে মাপজোকে ব্যস্ত রইল দুই থানা​

স্বামীর মৃত্যুর ঠিক এক মাস পরে এয়ারপোর্ট থানায় অভিযুক্ত ডেপুটি কমান্ডান্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। কিন্তু অভিযোগ, পুলিশ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া দূরে থাক, সেই অভিযোগের তদন্তে গড়িমসি করে। প্রায় ছ’মাস পরে এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ প্রতিমার করা অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর নথিভুক্ত করে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে কুমার পুরুষোত্তমের বিরুদ্ধে। তবে সেই তদন্ত এক চুলও এগোয়নি বলে অভিযোগ প্রতিমার।

পুলিশ সূত্রে খবর, এয়ারপোর্ট থানার তরফে সিআইএসএফের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে তদন্তে সহযোগিতার জন্য। বিমানবন্দরের দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। অভিযু্ক্ত ডেপুটি কমান্ডান্টকে বর্তমান পোস্টিং থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।”

কিন্তু অভিযোগ পাওয়ার ছ’মাস পর কেন এফআইআর নথিভুক্ত করল পুলিশ, তা নিয়ে মুখ খোলেননি বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের কোনও পুলিশ কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime CISF NSCBI Airport
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE