Advertisement
০২ মে ২০২৪
Coronavirus

বৃদ্ধকে ফেলে যাওয়া সেই চালক ‘নির্বিকার’

আকাশ বলেন, ‘‘প্রথমে ভয়ে মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছিলাম। টিভিতে আমাদের ঘটনাটা দেখানো শুরু হয়েছিল। দু’দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দিদির বাড়িতে ছিলাম।

ঘেঁষাঘেঁষি: রাজেন্দ্র মল্লিক স্ট্রিটে স্থানীয় যুবকদের জটলা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

ঘেঁষাঘেঁষি: রাজেন্দ্র মল্লিক স্ট্রিটে স্থানীয় যুবকদের জটলা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২০ ০২:৫৫
Share: Save:

রোগী নিয়ে কাছাকাছির মধ্যে যে কোনও সরকারি হাসপাতালে যেতে হবে। হাতে বিশেষ সময় নেই। রোগীর অবস্থাও ভাল নয়। ফোন পেয়ে অ্যাম্বুল্যান্স-চালক বললেন, “কিন্তু কী হয়েছে? জ্বর-টর থাকলে কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্সে তুলছি না। আর, একটু বেশি টাকা লাগবে। রাস্তা বন্ধ। অবস্থা তো জানেনই।” জ্বরে কী সমস্যা? “কিছুই জানেন না নাকি? করোনা। রাখুন তো, রাখুন।” ফোন কেটে গেল।
অ্যাম্বুল্যান্স চালকের নাম আকাশ সিংহ। গত রবিবার জ্বর-কাশি থাকা এক বৃদ্ধের করোনা হয়েছে মনে করে তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে মাঝরাস্তায় নামিয়ে চম্পট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল এই আকাশের বিরুদ্ধেই। এর পরে আর কোনও অ্যাম্বুল্যান্সই এগিয়ে আসেনি বলে বৃদ্ধের পরিবারের দাবি। শেষে পুলিশের গাড়িতে তাঁকে আর জি করে পাঠানো হয়। তখন পুলিশ জানিয়েছিল, রোগী সহায়তার নামে হেনস্থার অভিযোগে ওই অ্যাম্বুল্যান্স চালককে খোঁজা হচ্ছে। কিন্তু বুধবার আকাশ জানালেন, তিন দিন পরেও তাঁর সঙ্গে পুলিশ দেখা করেনি। যদিও পুলিশের তরফে এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাওয়া হয়নি।
এ দিন আকাশ বলেন, ‘‘প্রথমে ভয়ে মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছিলাম। টিভিতে আমাদের ঘটনাটা দেখানো শুরু হয়েছিল। দু’দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দিদির বাড়িতে ছিলাম। ফেরার পরেও অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে বেরোইনি। পুলিশ অবশ্য আমায় আর কিছু বলতে আসেনি।’’ কিছু ক্ষণ চুপ থেকে বললেন, ‘‘বাড়িতে তো আমি একা নই। আমার থেকে অন্য কারও ছড়াতে পারে। তাই একটু সাবধান হয়েছিলাম আর কী! ওই বৃদ্ধের জ্বর-কাশি ছিল মারাত্মক। তাই ওঁকে নিয়ে ঘুরতে সাহস হয়নি।” কিন্তু তাই বলে মাঝপথে নামিয়ে চলে যাবেন? আকাশ বলেন, “ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এমন ভুল আর হবে না।”
চিকিৎসকেরা অবশ্য বারবার বলে আসছেন, জ্বর মানেই করোনা সংক্রমণ নয়। কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলির চিকিৎসকেরা বলছেন, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা মেনে কয়েকটি ধাপ নির্দিষ্ট করা হয়েছে। কোনও ব্যক্তির বয়স কত, অন্য রোগ আছে কি না, বিদেশ ভ্রমণের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে কি না, থাকলে কত দিন আগের, তিনি অন্য রাজ্য থেকে ঘুরে এসেছেন কি না ইত্যাদি দেখে ‘স্কোরিং সিস্টেম’ চালু করা হয়েছে। ১-৩ এর মধ্যে নম্বর থাকলে সেই রোগীকে বাড়ি চলে যেতে বলা হচ্ছে। ৪-৮ পর্যন্ত হলে গৃহ-পর্যবেক্ষণে থাকতে বলা হচ্ছে। ৯-এর উপরে নম্বর পৌঁছলে রোগীকে ভর্তি করানোর কথা বলা হচ্ছে। মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলেন, “জ্বর মানেই করোনা ধরে নেবেন না। জ্বর হয়েছে মানেই তাঁকে অচ্ছুতের তালিকায় ফেলে দেবেন না। ডাক্তারদের রোগটা নির্ণয় করতে দিন।”
ওই বৃদ্ধের ছেলে অবশ্য বললেন, “আর জি কর থেকে ওই দিনই বাবাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরেও বাবার জ্বর-কাশি থামছে না। অ্যাম্বুল্যান্স না-পাওয়ায় কোনও হাসপাতালেও নিয়ে যেতে পারছি না।” গিরিশ পার্কের ১৮, রাজেন্দ্র মল্লিক স্ট্রিটে বৃদ্ধের বস্তির ঘরে গিয়ে দেখা গেল, বিছানায় কাতর অবস্থায় শুয়ে তিনি। বস্তির গলির মোড়ে মোড়ে আড্ডা। চলছে তাস-ক্রিকেট। মাস্ক ব্যবহার বা অন্য কোনও ভাবে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার উদ্যোগ চোখে পড়ল না। কী হয়েছে আপনার? বৃদ্ধ কোনও মতে বলেন, “অনেকে বলছেন করোনা। আমি নিজেও ঠিক জানি না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE