গাছ কেটে অবরুদ্ধ রাস্তা পরিষ্কারের কাজ চলছে দক্ষিণ কলকাতায়। —নিজস্ব চিত্র।
ঘূর্ণিঝড় আমপান (প্রকৃত উচ্চারণ উম পুন)-এর তাণ্ডবের পর ছ’দিন কেটে গেলেও এখনও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরল না কলকাতা। দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় এখনও পড়ে রয়েছে গাছ। নেই বিদ্যুৎও। বিদ্যুতের অভাবে ঘরে জ্বলছে না আলো, চলছে না পাখা। বন্ধ টেলিভিশন। অনেক জায়গায় নেই পানীয় জলও। পাম্পের সাহায্যে জল তোলা থেকে শুরু করে গেরস্থালির নানা কাজে অসুবিধার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। মোবাইল পরিষেবা বিপর্যস্ত। ফলে চরম অসুবিধায় রয়েছেন এলাকাবাসী। প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের কাছে, তালতলার সামনে-সহ দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় জল এবং বিদ্যুতের দাবিতে চলছে এ দিন অবরোধ-বিক্ষোভও হয়।
কলকাতাকে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরাতে পুরসভার তরফ থেকে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যে পুর ও নগরোন্নন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। যে সব জায়গায় বিদ্যুৎ নেই, সেখানে যাতে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, তারও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। কর্মীর অভাব থাকলেও মঙ্গলবারের মধ্যে কলকাতার অধিকাংশ এলাকাতে বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে সিইএসসি-ও। পুরসভার পাশাপাশি রাস্তায় পড়ে থাকা গাছ সরাতে হাত লাগিয়েছে সেনাবাহিনীও। শহরের বিভিন্ন এলাকায় গাছ পড়ে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে এখনও। সেগুলি সরাতে কাজ করছে পুরসভা ও সেনার সঙ্গে কাজ করছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, সিভিল ডিফেন্স, দমকল এবং কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। ওড়িশা থেকে শহরে এসেছেন দমকলের কর্মীরাও। তাঁরাও এই বিপর্যয়ে কাজে হাত মিলিয়েছেন।
যদিও গত ছ’দিন ধরে জল এবং বিদ্যুতের অভাবে শহরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। কেন এত সময় লাগছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বেহালা, সরশুনা, বেহালা শিবরামপুর এলাকার সারদা পার্ক, সন্তোষপুর, যাদবপুর, টালিগঞ্জে এখনও বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ নেই আনোয়ার শাহ রোড এবং ইএম বাইপাসের একাংশেও। বেহালার সরশুনার বাসিন্দা হীরক বিশ্বাসের একটি ওষুধের দোকান রয়েছে। বিদ্যুতের অভাবে আলো নেই তাঁর বাড়ি ও দোকানে। তিনি বলেন, “কবে যে জল-আলো পাব? ছ’দিন কেটে গেলেও এর কোনও সুরাহা হল না।”
আরও পড়ুন: দূরত্ববিধির বালাই নেই, সবাই তাকিয়ে দু’হাতা খিচুড়ির আশায়
জলকষ্টে ভুগছেন স্থানীয়রা। পুরসভার ১০৩ এবং ১০৪ নম্বর ওয়ার্ডে জল এবং বিদ্যুৎ, কোনওটাই নেই। এলাকাবাসীর তো বটেই ওই এলাকার বয়স্ক নাগরিকেরা বিশেষ করে ভোগান্তি বেড়েছে। ওই এলাকার ইস্টার্ন পার্ক এলাকাতেও সমস্যা হচ্ছে। অভিযোগ, ওই সব এলাকায় আসছেন না সিইএসসি-কর্মীরাও। বিভিন্ন জায়গা থেকে সিইএসসি কর্মীদের আনার চেষ্টা করা হলেও পর্যাপ্ত কর্মীর অভাবে বহু ক্ষেত্রেই পরিষেবা সচল করতে পারছেন না তাঁরা।
আরও পড়ুন: ‘সমন্বয়ের এখনও এত অভাব!’ প্রশ্ন ক্ষুব্ধ জনতার
দক্ষিণ কলকাতার বহু পাড়া এখনও ডুবে রয়েছে অন্ধকারে, রাস্তায় পড়ে রয়েছে গাছ, আলো নেই, কোথাও খোলা বিদ্যুতের তার বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে। ফলে বিপদ মাথায় নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। অন্য দিকে, বিদ্যুৎ না থাকায় সমস্যা হচ্ছে মোবাইল চার্জিংয়েরও। বিপর্যস্ত ইন্টারনেট পরিষেবাও। চার্জিংয়ের অভাবে মোবাইল ফোন বিকল হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ করা যাচ্ছে না কারও সঙ্গে। বিদ্যুতের অভাবে বিভিন্ন বহুতলে পাম্পের সাহায্যে জল তোলা যাচ্ছে না। বন্ধ কেব্ল টিভি। চলছে না আলো, পাখা, ফ্রিজ। কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে কলকাতার একাংশের মানুষ। রাস্তায় যে দু’একটি টিউবওয়েল রয়েছে, সেখানে জলের জন্য পড়ছে লম্বা লাইন। ফলে আমপানের তাণ্ডবের পর ছ’দিন পার হয়ে গেলেও নাগরিক পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ বেড়েই চলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy