প্রতীক্ষা: হাওড়া স্টেশনে যাত্রীদের ভিড়। শুক্রবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
কাচের জানলার ফাঁক দিয়ে ভিড় করছে উদ্বিগ্ন মুখগুলো। একের পর এক প্রশ্ন করছেন। তার পরে মুখ বার করে পাশে সঙ্গীকে বলছেন, ‘না, চলবে না।’
হাওড়া স্টেশনের নিউ কমপ্লেক্সের অনুসন্ধান কাউন্টারে শুক্রবার সকাল থেকে রাত এই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হয়েছে অহরহ। ট্রেন বাতিল হয়েছে কি না জানতে দীর্ঘ লাইন কাউন্টারের সামনে। আর মাইকে অনবরত ঘোষণা, ঝড়ের কারণে ১২৮৪১ করমণ্ডল এক্সপ্রেস বাতিল, ২২৮১৭ চেন্নাই মেল বাতিল, ১২৮৬৩ যশোবন্তপুর এক্সপ্রেস বাতিল, বাতিল ২২৮১৮ মাইসোর এক্সপ্রেস। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ট্রেন বাতিলের তালিকা।
‘ফণী’ কার্যত লন্ডভন্ড করে দিয়েছে হাওড়া স্টেশনের রোজকার দিনলিপিকে। সেই সঙ্গে পাল্টে গিয়েছে স্টেশনের ভিতরের ছবি। ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দারা স্টেশনে এসে ট্রেন পাননি। শ’য়ে শ’য়ে যাত্রী আটকে পড়েছেন। ফণী-র দাপটে পূর্ব রেলে তেমন কোনও প্রভাব না পড়ায় হাওড়া স্টেশনের পুরনো কমপ্লেক্সে চোখে পড়েছে অন্য দিনের ব্যস্ততা। কিন্তু নতুন কমপ্লেক্সে ঠিক এর বিপরীত চিত্র। কারণ দক্ষিণ-পূর্ব রেলের অধিকাংশ ট্রেনই ওই কমপ্লেক্স থেকে ছাড়ে।
এ দিন সকালেই দক্ষিণ-পূর্ব রেলের তরফে ঘোষণা করা হয়, পুরী ও দক্ষিণ ভারতগামী সব ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া বাতিল হয়েছে ২৩টি লোকাল ট্রেন। ট্রেন বাতিল হওয়ায় শ’য়ে শ’য়ে যাত্রী আশ্রয় নিয়েছেন স্টেশনের মেঝেতে। ওয়েটিং রুমেও একচুল জায়গা নেই। সব থেকে সমস্যায় পড়েছেন মহিলা ও শিশুরা। মেঝেতে চাদর পেতে সন্তানদের নিয়ে শুতে হয়েছে তাঁদের।
স্ত্রী তম্ভি সিংহের চিকিৎসার জন্য দুই সন্তানকে নিয়ে চেন্নাই গিয়েছিলেন অসমের বাসিন্দা হেমন্তা সিংহ। এ দিন সকালে বাড়ি ফেরার জন্য সেকেন্দ্রাবাদ এক্সপ্রেস ধরার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু স্টেশনে এসে হেমন্তা শোনেন, ঝড়ের জন্য ট্রেন বাতিল। তার পর থেকেই তাঁদের ঠিকানা স্টেশন চত্বর। মেঝেতে চাদর বিছিয়ে দুই সন্তানকে শুইয়ে বসেছিলেন তম্ভি। বললেন, ‘‘কী ভাবে সারা রাত কাটাব জানি না। কবে ট্রেন চলবে, তা-ও বুঝতে পারছি না।’’
চেন্নাইগামী সব ট্রেন বাতিল হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সেখানে কাজে যোগ দিতে যাওয়া শ্রমিকেরা। স্টেশনেই আটকে কয়েকশো শ্রমিক। সাওন্ত তাঁতি নামে অসমের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমরা কয়েকশো শ্রমিক ছুটি কাটিয়ে কাজে যোগ দিতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু কাল থেকে যে ট্রেন চলবে, সে ব্যাপারে রেল তো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।’’
ট্রেন বাতিল হওয়ায় অসুস্থ, বৃদ্ধা মাকে নিয়ে স্টেশনেই আটকে পড়েছেন হীরামন ওরাঁও। চেন্নাইয়ে মায়ের চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ট্রেন বাতিল হওয়ায় আশ্রয় নিতে হয়েছে প্ল্যাটফর্মে। হীরামনের অভিযোগ, ‘‘সারা দিনেও রেল জানাতে পারেনি, কবে থেকে দক্ষিণের ট্রেন চলবে। কবে মাকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে পারব, ঈশ্বরই জানেন।’’
শনিবারেও কি ট্রেন চলবে না?
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ শুধু বলেছেন, ‘‘ট্রেন কবে থেকে চলবে, তা ঝড়ের পরে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব দেখে জানানো হবে।’’ তত ক্ষণ পর্যন্ত প্ল্যাটফর্মই ঠিকানা অসহায় মানুষগুলোর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy