দিব্যেন্দু পালিত
আর দু’মাস বাদেই ৮০ বছর পূর্ণ হত তাঁর। প্রিয়জনেরা মুখিয়ে ছিলেন, একটা বড়-সড় আনন্দ অনুষ্ঠানের জন্য। তা নিয়ে কিছুটা লাজুক সম্মতির আভাসও দিয়েছিলেন দিব্যেন্দু পালিত। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালেই সব শেষ! যাদবপুরে কেপিসি হাসপাতালে শেষ নিঃশাস ত্যাগ করলেন দিব্যেন্দুবাবু। স্ত্রী মারা গিয়েছেন বছরখানেক আগে। একমাত্র পুত্র অমিতেন্দু সিঙ্গাপুর প্রবাসী। এ দিন রাতেই কলকাতা ফেরার কথা তাঁর। এর পরেই প্রয়াত সাহিত্যিকের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
বাড়ির কয়েক দশকের সাহায্যকারিণী চিনু অধিকারী বলছিলেন, দিব্যেন্দুবাবুর শরীরটা ভাল যাচ্ছিল না কয়েক বছর ধরে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পরে কিছুটা অশক্ত হয়ে পড়েছিলেন। সম্প্রতি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, মৃণাল সেনের প্রয়াণ সংবাদে বিচলিত হয়ে পড়েন। পারিবারিক সুহৃদেরা বলছেন, বুধবার দুপুরের পর থেকে শরীরটা একদম ছেড়ে দিয়েছিল। কিছু খেতে পারছিলেন না। শ্বাসকষ্ট ছিল। তখনই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দিব্যেন্দুর জন্ম বিহারের ভাগলপুরে। ১৯৫৫-য় প্রথম গল্প ‘ছন্দপতন’ বেরোয় আনন্দবাজারের ‘রবিবাসরীয়’তে, পরের বছর দেশ-এ প্রকাশিত গল্প ‘নিয়ম’। প্রথম যৌবনে কলকাতায় আসা। হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড, আনন্দবাজার পত্রিকার পাশাপাশি বিজ্ঞাপন সংস্থাতেও চাকরি করেছেন। ১৯৮৪ সালে পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার। এ ছাড়াও পেয়েছেন বঙ্কিম পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি থেকে বঙ্গবিভূষণ— নানা স্বীকৃতি। তপন সিংহের ছবি ‘অন্তর্ধান’ বা রমাপ্রসাদ বণিকের নাটক ‘ত্রাতা’র মতো কাজ হয়েছে তাঁর গল্প-উপন্যাস থেকে। ‘ত্রাতা’য় পাড়ার মস্তানের চাপে ধস্ত পরিবারের বধূর লড়াই, ‘ব্রাজিল’ গল্পে মধ্যবিত্ত বাবা-ছেলের ফুটবল-উন্মাদনা, কিংবা ‘সোনালি জীবন’ উপন্যাসে কলকাতার একটি অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পরিবারের নিরুপায় হয়ে দেশান্তরী হওয়ার কাহিনি— নাগরিক জীবনের নানা দিক উঠে এসেছে দিব্যেন্দুবাবুর লেখায়।
হর্ষ দত্তের সংযোজন: দিব্যেন্দুদা তখন আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় পাতায় সম্পাদনার কাজ করছেন রমাপদ চৌধুরীর সঙ্গে। দেশ পত্রিকা-র ঘরে প্রায়ই সুনীলদা (গঙ্গোপাধ্যায়), শীর্ষেন্দুদা (মুখোপাধ্যায়)-র সঙ্গে গল্প করতে চলে আসতেন। তখন তাঁর মুখে শোনা নানা চুটকিতে দিব্যেন্দুদার রসিক মনের পরিচয় পেয়েছি। কাগজের অফিসে ওঁর কাজ দারুণ যত্নের সঙ্গে ওঁকে করতে দেখেছি। অনেক নতুন ফিচার লেখককে তিনি খুঁজে এনেছেন। তাঁরা কেউ কেউ পরে বড় লেখক হয়েছিলেন।
সাহিত্যিক দিব্যেন্দু পালিত ওঁর সমসাময়িকদের কারও কারও তুলনায় কম পঠিত ছিলেন। কিন্তু ওঁর উপন্যাস, কবিতা বা গল্পে আভিজাত্যের ছাপটা বোঝা যেত। ‘সহযোদ্ধা’ উপন্যাসটা আমার খুব প্রিয়। কাহিনির নায়ক আদিত্য একটা খুন দেখেছিল। তার পরে তার জীবনটা পাল্টে যায়। মানুষের জীবনের এ ভাবে তছনছ হয়ে যাওয়ার প্লট দক্ষতার সঙ্গে সামলেছিলেন। দিব্যেন্দুদার অনেক লেখাই সময়ে থেকে এগিয়ে থাকা বলে আমার মনে হয়। প্রধানত নাগরিক জীবনের কথা লিখেছেন। আর তা ছুঁয়ে থাকত ওঁর গভীর জীবনবোধ ও অন্তর্দৃষ্টি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy