Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চালকেরা তৈরি হননি, দেরি ইস্ট-ওয়েস্টে

এত দিন উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোয় কাজ করে আসা চালকদের একাংশের এখন এমনই অবস্থা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ট্রেন চালাতে গিয়ে। পুরনো মেট্রোর লম্বা প্ল্যাটফর্মে আট কোচের ট্রেন নিয়ে গিয়ে দাঁড়ানোই বরাবরের অভ্যাস তাঁদের।

প্ল্যাটফর্মে স্ক্রিন ডোরের সামনে থামতে গিয়েই সমস্যায় পড়ছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। নিজস্ব চিত্র

প্ল্যাটফর্মে স্ক্রিন ডোরের সামনে থামতে গিয়েই সমস্যায় পড়ছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। নিজস্ব চিত্র

ফিরোজ ইসলাম
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৫৩
Share: Save:

এ যেন বড় গাড়ি ছেড়ে ছোট গাড়ি চালাতে গিয়ে গলির রাস্তায় আটকে পড়ার মতো অবস্থা!

এত দিন উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোয় কাজ করে আসা চালকদের একাংশের এখন এমনই অবস্থা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ট্রেন চালাতে গিয়ে। পুরনো মেট্রোর লম্বা প্ল্যাটফর্মে আট কোচের ট্রেন নিয়ে গিয়ে দাঁড়ানোই বরাবরের অভ্যাস তাঁদের। এখন ছয় কামরার ট্রেন চালিয়ে ছোট প্ল্যাটফর্মের ঠিকঠাক জায়গায় দাঁড়াতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। আর তাতেই বিঘ্নিত হচ্ছে প্ল্যাটফর্মের স্ক্রিন ডোরের খোলা বা বন্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া।

এ সমস্ত বিপত্তির জেরেই হোঁচট খাচ্ছে মেট্রোর পরীক্ষামূলক দৌড়। ফলে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে প্রস্তুতি নিয়ে সংশয় যেন কাটছে না মেট্রো কর্তৃপক্ষের। তাতেই বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে উদ্বোধনের দিন। হাল না ছাড়লেও চালকদের পুরনো অভ্যাস ভাবিয়ে তুলেছে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে।

এ দিকে মুশকিল হল, মেট্রোর যাবতীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার পরে পাঁচ নম্বর সেক্টর থেকে সল্টলেকের মধ্যে ট্রেন চালানোর জন্য ‘কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি’র যে ছাড়পত্র মিলেছিল, তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ নভেম্বর। অর্থাৎ, ওই সময়ের মধ্যে যাত্রী-পরিষেবা শুরু করা না গেলে আবার নতুন করে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে হবে। যা জটিল এবং সময়সাপেক্ষ।

পরিস্থিতি সামলাতে মরিয়া মেট্রো কর্তৃপক্ষ চালকদের নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে অভ্যস্ত করানোর আপ্রাণ চেষ্টা করলেও সেই কাজ কত দ্রুত শেষ করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় কাটছে না। মেট্রো সূত্রের খবর, উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর তুলনায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রযুক্তিগত ভাবে অনেকটাই আলাদা। পুরনো মেট্রোয় গড়ে ১৭০ মিটার দীর্ঘ প্ল্যাটফর্মে আট কোচের প্রায় ১৬৪ মিটার লম্বা ট্রেন থামে। ফলে থামার সময়ে ট্রেনের সামনে-পিছনে মিলিয়ে তিন-চার মিটার অতিরিক্ত জায়গা থাকে। কিন্তু তাতেও গত কয়েক মাসে একাধিক বার প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে গিয়ে ট্রেন থামার ঘটনা ঘটেছে শোভাবাজার, সেন্ট্রাল এবং রবীন্দ্র সরোবর স্টেশনে। এ জন্য চালক এবং গার্ডদের সতর্কও করা হয়েছে।

ইস্ট-ওয়েস্টের ক্ষেত্রে ট্রেনের দরজার পরিসর ১.৪ মিটার। আর প্ল্যাটফর্মের স্ক্রিন ডোরের পরিসর দু’মিটার। ফলে ট্রেনের এগিয়ে-পিছিয়ে দাঁড়ানোর জন্য মাত্র ৬০০ মিলিমিটার বা দু’ফুট অতিরিক্ত জায়গা পাওয়া যায়। ওই পরিসরের মধ্যে নির্ভুল ভাবে ট্রেন থামাতে না পারলে কোনও দরজা খুলবে না।

মেট্রোর এক কর্তা বলেন, ‘‘প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ঢুকতে শুরু করার পরে যে দূরত্বে গিয়ে থামতে হবে, তা চালকের কামরার ড্যাশবোর্ডে ফুটে ওঠে। এ ক্ষেত্রে ওই দূরত্ব হিসেব করে ব্রেক কষার বিষয়টি নির্ভুল ভাবে আয়ত্ত করা জরুরি।’’

কিন্তু ওই কাজে সমস্যা হচ্ছে কেন? মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, সকলের ক্ষেত্রে না হলেও অল্প কিছু সংখ্যক চালকের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। মেট্রোর চালকদের আবার বক্তব্য, অনুশীলনের জন্য পর্যাপ্ত সময় এবং ট্রেন তাঁরা পাচ্ছেন না। রাতারাতি ওই অভ্যাস আয়ত্ত করা মুশকিল। মেট্রো কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, যাত্রী-নিরাপত্তার সঙ্গে কোনও রকম আপস করা হচ্ছে না।

দিল্লি মেট্রোর প্ল্যাটফর্মে স্ক্রিন ডোর আছে প্রথম থেকেই। ফলে চালকদের প্রথমেই তৈরি হয়ে নামতে হয়েছে। সেখানে সম্প্রতি কয়েকটি রুটে রেক সরবরাহকারী সংস্থার হাতেই ট্রেন চালানো এবং রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে রেক নির্মাণকারী সংস্থাই ট্রেনচালকের জোগান দিচ্ছে। এতে পৃথক ভাবে চালকদের প্রশিক্ষিত করা ছাড়াও রক্ষণাবেক্ষণের দায় কমেছে মেট্রোর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Metro Rail Platform Screen Door
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE