Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রযুক্তির যুগে পাঠ্যক্রমেও জায়গা পাচ্ছে ড্রোন

তথ্য প্রযুক্তির যুগে আগামী দিনে এ হেন অনেক সমস্যার সমাধানে ত্রাতা হতে পারে এই উড়ন্ত যন্ত্র। যা পরিচালনার জন্য প্রয়োজন দক্ষ কর্মীও। ফলে সেই ড্রোন চালানোর জন্য বিশেষ পাঠ্যক্রম চালু করতে চলেছে রাজ্যের মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিদ্যালয় (ম্যাকাউট)।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৯ ০২:১৪
Share: Save:

রাস্তার নীচে জলের পাইপ ফেটেছে। সে পথে জল বেরিয়ে ভেঙেছে রাস্তা। কিন্তু মান্ধাতা আমলের ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনের কোথায় ফাটল, তা বুঝতেই নাজেহাল পুরসভা। এমন পরিস্থিতিতে ড্রোনের মাধ্যমে ক্যামেরা পাঠিয়ে সেই ফাটল নির্ধারণ অনেক সহজে করা যেতে পারে। কিংবা ধরা যাক, কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছতে পারছে না উদ্ধারকারী দল। ফলে বুঝতে সমস্যা হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। সেই জায়গায় ড্রোনের মাধ্যমে ক্যামেরা পাঠিয়ে সমস্যার সুরাহা হতে পারে।

তথ্য প্রযুক্তির যুগে আগামী দিনে এ হেন অনেক সমস্যার সমাধানে ত্রাতা হতে পারে এই উড়ন্ত যন্ত্র। যা পরিচালনার জন্য প্রয়োজন দক্ষ কর্মীও। ফলে সেই ড্রোন চালানোর জন্য বিশেষ পাঠ্যক্রম চালু করতে চলেছে রাজ্যের মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিদ্যালয় (ম্যাকাউট)। উপাচার্য সৈকত মৈত্রের কথায়, ‘‘এটা গ্রিন সিটি, স্মার্ট সিটির যুগ। ইতিমধ্যেই বিদেশে ড্রোনের ব্যবহারে নিত্যদিনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে তাই ইঞ্জিনিয়ারদের ড্রোন পরিচালনার প্রশিক্ষণের পাঠ্যক্রম চালু হচ্ছে।’’ তিনি জানান, ইতিমধ্যেই এ দেশে কোথাও কোথাও ড্রোনের মাধ্যমে খাবার সরবরাহ শুরু হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতে রেললাইন তৈরির সমীক্ষায়ও ড্রোনের ব্যবহার চালু হয়েছে।

শহরে মাটির নীচের অবস্থা জানতে ড্রোনের প্রযুক্তি সহায়ক হতে পারে বলে মনে করছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। তিনি জানান, মাটির নীচের কোনও নকশা পুরসভায় সে ভাবে নেই। বহু ক্ষেত্রে নিকাশি কিংবা জলের লাইনের ফাটল বুঝতে রাস্তার অনেকটা অংশ ভাঙতে হয়। তার জেরে অন্য সমস্যা তৈরি হয়। ফিরহাদ বলেন, ‘‘সত্যিই ওই প্রযুক্তি বাস্তবায়িত করা গেলে সেটা অন্তত কলকাতার পক্ষে খুব সহায়ক হবে। আমরা ডেঙ্গির লার্ভা শনাক্ত করতে ড্রোনের ব্যবহার করছি। কিন্তু মাটির নীচে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড এক্স-রে’-র কোনও সুযোগ নেই। এটা বাস্তবায়িত করতে পারলে পুরসভা, কেএমডিএ কিংবা সিইএসসি— সকলেরই সুবিধা হবে।’’

২০১৮ সালে ড্রোন ওড়ানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দিয়েছে ডিজিসিএ (ডিরেক্টর জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন)। ফলে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, তথ্য-প্রযুক্তির জমানায় আগামী দিনে এ দেশে ড্রোন বিদেশেরই মতো মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অঙ্গ হয়ে উঠবে। তাঁরা জানান, বর্তমানে সেনা বাহিনী দেশের সুরক্ষার কাজে ড্রোনের ব্যবহার করে থাকে। এ জন্য সেনা বাহিনীর নিজস্ব প্রশিক্ষণকেন্দ্র, প্রশিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ারেরা রয়েছেন। কিন্তু সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে সেই প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যে কারণে এই নতুন পাঠ্যক্রম চালুর পরিকল্পনা করছেন তাঁরা।

ড্রোনের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত সেই পাঠ্যক্রম চালু করতে ইতিমধ্যেই একটি বেসরকারি শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মৌ সই করেছে ম্যাকাউট। হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেবে ওই সংস্থা। সংস্থার কর্ণধার সুমিত আগরওয়ালের কথায়, ‘‘ড্রোনের সাহায্যে অল্প সময়ের মধ্যে অনেক কঠিন কাজ করা সম্ভব। ভবিষ্যতে ড্রোন পরিচালনায় দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীর চাহিদা তৈরি হবে। তাই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সঙ্গেই ছাত্রছাত্রীদের ড্রোন চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।’’

সংস্থার তরফে অঞ্জন দে জানান, আপাতত ছ’ মাসের একটি পাঠ্যক্রমের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drone Technology Education MAKAUT
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE