Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হাসপাতালের অসহযোগিতায় হল না অঙ্গদান, অভিযোগ

শনিবার বিকেলে পঞ্চসায়রে স্নায়ুরোগের হাসপাতালে মৃত্যু হয় জগদ্দলের বাসিন্দা, বছর তিরিশের তরুণী অঞ্জনা সাহার। পরিবার সূত্রের খবর, রয়েড স্ট্রিটের বেসরকারি নার্সিংহোমে মাড়ির উঁচু ভাব কাটানোর অস্ত্রোপচার করাতে গিয়েই কোমায় চলে যান ওই বধূ।

অঞ্জনা সাহা

অঞ্জনা সাহা

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৯ ০৩:১৯
Share: Save:

স্ত্রীর আর বাঁচার সম্ভাবনা নেই জেনে তাঁর অঙ্গদান করতে চেয়েছিলেন স্বামী। সেই জন্য শুক্রবার থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত দফায় দফায় বিভিন্ন স্তরে আর্জিও জানান তিনি। তবে ‘অসহযোগিতা’র জন্য তা-ও সম্ভব হল না বলে সোমবার অভিযোগ করলেন সদ্য স্ত্রীকে হারানো সেই যুবক।

শনিবার বিকেলে পঞ্চসায়রে স্নায়ুরোগের হাসপাতালে মৃত্যু হয় জগদ্দলের বাসিন্দা, বছর তিরিশের তরুণী অঞ্জনা সাহার। পরিবার সূত্রের খবর, রয়েড স্ট্রিটের বেসরকারি নার্সিংহোমে মাড়ির উঁচু ভাব কাটানোর অস্ত্রোপচার করাতে গিয়েই কোমায় চলে যান ওই বধূ। সেই ঘটনায় ইতিমধ্যে দন্ত চিকিৎসক অনির্বাণ সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ করেছেন মৃতার পরিজনেরা। বুধবার রয়েড স্ট্রিটের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সঙ্কটজনক রোগীকে পঞ্চসায়রের বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। সেখানকার চিকিৎসক অঞ্জনাকে পরীক্ষা করে জানিয়ে দেন, রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতির সম্ভাবনা কার্যত নেই।

মৃতার স্বামী সুনীল সাহা জানান, এ কথা জানার পরেই অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। মৃতার পরিবার শুক্রবার স্বাস্থ্য ভবনে দন্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিল। সেখান থেকেই পঞ্চসায়রের হাসপাতাল চত্বরে উপস্থিত বন্ধুদের অঙ্গদানের কী প্রক্রিয়া রয়েছে, তা জানতে বলেন সুনীল। ওই যুবকের অভিযোগ, ‘‘আমার বন্ধুদের বলা হয়, ব্রেন ডেথ ঘোষণার জন্য মেডিক্যাল বোর্ড বসবে। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে দেখবেন, অঞ্জনার অঙ্গগুলি প্রতিস্থাপনের উপযুক্ত কি না। এ সব করতে অনেক খরচ, যা অঞ্জনার পরিবারকেই দিতে হবে। সন্ধ্যায় আমরা গেলেও একই কথা বলা হয়।’’

এর পরেও শনিবার সকালে ফের অঙ্গদানের আর্জি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন সুনীল। কিন্তু অভিযোগ, এ বারও একই কথা শুনতে হয় তাঁকে। সুনীলের কথায়, ‘‘হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, এমনিতেই চিকিৎসার খরচ বাড়ছে। এর উপরে আমাদের মতো নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের এ সব ঝামেলার মধ্যে ঢোকার কী দরকার? যাঁদের সামর্থ্য আছে, অঙ্গদান তাঁদের জন্যই!’’ এই বলে চক্ষুদানের পরামর্শ দেন হাসপাতালের ওই কর্তা। সেই মতো কয়েকটি চক্ষু হাসপাতালের ঠিকানাও দেওয়া হয় বলে মৃতার স্বামী জানিয়েছেন। সুনীলের কথায়, ‘‘অঙ্গদানে অনেক টাকা খরচ হবে জেনে শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসতে বাধ্য হলাম।’’

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, অঙ্গদানে দাতার পরিবারের অর্থ খরচ হওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। এই প্রক্রিয়ার জন্য যে অর্থ খরচ হয়, তা অঙ্গ গ্রহীতার পরিবার কিংবা রাজ্য সরকার বহন করে। কারও শারীরিক পরিস্থিতি ঠিক থাকলে, বেসরকারি হাসপাতালের ট্রান্সপ্লান্ট কো-অর্ডিনেটরেরই রোগীর পরিজনকে অঙ্গদানে উদ্বুদ্ধ করা উচিত। অঙ্গদান নিয়ে যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে, এমন ঘটনায় তা ধাক্কা খাবে বলেই মনে

করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই এ নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালের বক্তব্য জানতে চেয়েছে রিজিয়োনাল অর্গান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন। ওই বেসরকারি হাসপাতালের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ম্যানেজার অমিত মিত্র বলেন, ‘‘অঙ্গদানের কথা মৃতার স্বামী নিজে কখনওই জানাননি। কথা

হয়েছে শুধুই মৃতার পরিজনেদের সঙ্গে। স্বামী নিজে না বললে আমরা কী করে এগোব? কোথাও একটা বোঝাপড়ার অভাব ঘটেছে। তবে অঙ্গদানের প্রশ্নে আমাদের কী ভূমিকা হওয়ার কথা, তা-ও এই ঘটনা থেকেই জেনেছি। আগামী দিনে আরও সক্রিয় হব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

DEath Dental Operation Body Donation Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE