স্তব্ধ: কার্নিভালের জেরে যানজট। মঙ্গলবার, চাঁদনি চকে। নিজস্ব চিত্র
ধর্মতলা যাওয়ার জন্য রবীন্দ্র সদনের সামনে থেকে বিকেল পাঁচটা নাগাদ বাসে উঠেছিলেন বৌবাজারের বিপাশা মজুমদার। বাস কোনও ক্রমে গড়াতে গড়াতে পার্ক স্ট্রিটে পৌঁছলেও তার পরে তার চাকা আর নড়তেই চায় না। শেষমেশ পার্ক স্ট্রিট থেকে পায়ে হেঁটে তিনি যখন ধর্মতলায় পৌঁছন, তখন ঘড়ির কাঁটা সাড়ে ছ’টা পেরিয়ে গিয়েছে।
মঙ্গলবার রেড রোডে রাজ্য সরকার আয়োজিত বিসর্জনের শোভাযাত্রার জেরে উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ এ ভাবেই যানজটে নাস্তানাবুদ হয়েছেন। রেড রোডের ওই কার্নিভালের জন্য এ দিন দুপুর থেকেই রেড রোড ও খিদিরপুর রোড বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিকেল থেকে মেয়ো রোডের একাংশও বন্ধ রাখা হয়। দুপুর থেকেই দক্ষিণ কলকাতা থেকে হাওড়ামুখী সমস্ত গাড়িকে মেয়ো রোড দিয়ে পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই সমস্ত গা়ড়িকে পার্ক স্ট্রিট থেকে সোজা জওহরলাল নেহরু রোড, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট হয়ে হাওড়ায় পাঠানো হয়। লালবাজার সূত্রের খবর, কার্নিভালের জন্য শহরের একাধিক রাস্তা বন্ধ থাকায় জওহরলাল নেহরু রোড, এস এন ব্যানার্জি রোড, লেনিন সরণি থেকে শুরু করে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, ব্রেবোর্ন রোড, স্ট্র্যান্ড রোড-সহ ধর্মতলা চত্বরের একাধিক রাস্তায় প্রবল যানজট তৈরি হয়।
এ দিন বিকেল থেকে কার্নিভালে অংশ নেওয়া বিভিন্ন পুজো কমিটির প্রতিমা বাজেকদমতলা ঘাট ও উত্তরের আহিরীটোলা ঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয়। ফলে কার্নিভাল থেকে প্রতিমা ও ট্যাবলো নিয়ে ঘাটে যাওয়ার পথে বিভিন্ন জায়গায় তীব্র যানজট হয়। কিংস ওয়ে এবং বাবুঘাটেও যানজটে নাকাল হতে হয় সাধারণ মানুষকে। সন্ধ্যার পরে মধ্য ও উত্তর কলকাতায় সেই যানজট তীব্র আকার নেয়। পুলিশ সূত্রের খবর, উত্তর কলকাতার একাধিক পুজো কমিটি কার্নিভালের শেষে আহিরীটোলা ঘাটে যাওয়ার সময়ে গোটা ধর্মতলা চত্বর, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ও মহাত্মা গাঁধী রোড-সহ উত্তরের একাধিক রাস্তায় গাড়ির চাকা থেমে যায়।
এ দিকে, আসনে বসে কার্নিভাল দেখার জন্য ছাড়পত্র হাতে পেয়েও রেড রোডে ঢুকতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে অনেককেই। গড়িয়াহাটের বাসিন্দা এক দর্শনার্থীর কথায়, ‘‘আমন্ত্রণপত্র নিয়ে দুপুর ২টো নাগাদ রেড রোডে হাজির হলেও ভিতরে ঢুকতে পারিনি। পুলিশের তরফে বলা হল, সব আসন ভরে গিয়েছে।’’ এ দিন কার্নিভাল দেখার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। আসন সংখ্যার তুলনায় দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় ভিড়ের চাপে অনেককেই মাঝপথে বেরিয়ে আসতে হয়েছে।
যাদবপুর থেকে শিশু সন্তানকে নিয়ে এ দিন কার্নিভালে এসেছিলেন মোনালিসা মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘দুপুর একটায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে ধর্মতলায় পৌঁছলাম ৩টে নাগাদ। কিন্তু কার্নিভালে বসার আসন পাইনি। বাধ্য হয়ে ছেলেকে নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শো দেখেছি।’’ এ দিন আসন না পেয়ে অনেকে একেবারে সামনে গিয়ে বসে শো দেখেন। অনেকেই আবার মোনালিসার মতো দাঁড়়িয়েই দেখেন। এক সময়ে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকদের মধ্যে মৃদু বচসাও বেধে যায়। পুলিশ পৌঁছে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy