Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

উড়ালপুল থেকে ধুলোর ঝড়

মাঝেরহাট সেতু ভাঙার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে সপার্ষদ শহরের ব্রিজ পরিদর্শনে বেরিয়েছিলেন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু সেই পরিদর্শনের ফল আখেরে কী, তা অবশ্য এ দিনই হাড়ে হাড়ে মালুম হয়েছে।

উড়ালপুলের ভাঙা পাইপ দিয়ে ঝর্নার মতো নামছে ধুলো। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

উড়ালপুলের ভাঙা পাইপ দিয়ে ঝর্নার মতো নামছে ধুলো। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৪১
Share: Save:

হবুচন্দ্র রাজার রাজত্বে ঝাড়ুর দাপটে চারপাশ ধুলোয় ঢেকে দিয়েছিল মন্ত্রী গবুচন্দ্র। এ বার এজেসি বসু রোড উড়ালপুল ঝাঁট দিয়ে শহরের রাজপথে ধুলোর ঝ়়ড় তুলল রাজ্য প্রশাসন!

সেই ঝ়়ড়ের ভিডিয়ো নেট দুনিয়ায় ভাইরালও হয়েছে। এমনিতেই সেতু ভাঙার পরে শহরে আতঙ্কের অন্ত নেই। এই ভি়ডিয়ো দেখেও এজেসি বসু রোড উড়ালপুল ভাঙছে কি না, তা নিয়ে গুজব ছড়িয়েছিল। যদিও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার উড়ালপুলের উপরে ঝাঁট দিয়ে ধুলো নিকাশি পাইপে ঢেলেছিলেন সাফাইকারীরা। ভাঙা নিকাশি পাইপ দিয়ে সেই ধুলোই ঝর্নার মতো নেমে এসেছে এজেসি বসু রোড ও র়ডন স্ট্রিটের মোড়ে।

মাঝেরহাট সেতু ভাঙার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে সপার্ষদ শহরের ব্রিজ পরিদর্শনে বেরিয়েছিলেন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু সেই পরিদর্শনের ফল আখেরে কী, তা অবশ্য এ দিনই হাড়ে হাড়ে মালুম হয়েছে।

উড়ালপুলের নিকাশি পাইপ সোজা ভূগর্ভে ঢোকানো থাকে। তা হলে ধুলো নামল কী ভাবে? এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গিয়েছে, উড়ালপুলে বর্ষার বেশির ভাগ নিকাশি পাইপ ভাঙা। তাই ধুলো এসে উপচে পড়েছে রাস্তায়। ওই এলাকার দোকানদারেরা জানান, এ শুধু এক দিনের ঘটনা নয়, প্রতি সপ্তাহেই ঘটে। বৃষ্টির দিনে উড়ালপুল থেকে যেন জলপ্রপাত নামতে থাকে! সেই ধুলো এবং জলে ঢেকে যায় চারপাশ। ওই এলাকার এক নিত্যযাত্রীর বক্তব্য, ‘‘কোনও সভ্য শহরে এমন যে হতে পারে, তা ভাবাই যায় না!’’ নিকাশি পাইপ দিয়ে ধুলো ফেলা যায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু নিকাশি পাইপের এমন হাল কেন, তা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ।

এজেসি বসু রোড উড়ালপুলের ভাঙা নিকাশি পাইপে জমেছে আবর্জনা।

পুলিশের একাংশ বলছে, এই ধুলো এবং জলস্রোত রাস্তায় এসে প়়ড়লে পথচারী, মোটরবাইক এবং গাড়ির যাত্রী-চালকদের প্রচণ্ড অসুবিধা হয়। দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থাকে। আচমকা ধুলো এবং জলের দাপটে এত দিনে যে বড় মাপের দুর্ঘটনা ঘটেনি, সেটাই রক্ষে! পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, বিষয়টি কেএমডিএ-র কর্তাদের জানানো হয়েছিল, কিন্তু তাঁরা গা করেননি।

এ দিনের ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পরে সরব হয়েছেন পরিবেশকর্মীরাও। তাঁরা বলছেন, বায়ুদূষণের নিরিখে কলকাতা দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে। সরকারি কর্তারা দূষণ ঠেকাতে নানা প্রকল্পের কথা শোনান। কিন্তু এ ভাবে ধুলো ছড়ানো যে দূষণের অন্যতম উৎস, তা জানিয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটিও। কিন্তু সেই সব নির্দেশিকা, পরিবেশ সচেতনতা প্রশাসনের কর্তাদের কাছে দূর অস্ত্‌ বলেই পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ। কলকাতার বায়ুদূষণ নিয়ে পরিবেশ আদালতে মামলার আবেদনকারী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘এই ভিডিয়ো আমি পরিবেশ আদালতে পেশ করব। সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পরিবেশ বিধি মেনে স্প্রিঙ্কলার ব্যবহার তো দূর অস্ত্, উল্টে কলকাতার হাওয়াকে বিষিয়ে দেওয়া হচ্ছে!’’

এজেসি বসু রোড উড়ালপুলের নিকাশি পাইপ ভাঙা, তা দিয়ে প্রায়ই ধুলো ও কাদা জলের ফোয়ারা নেমে আসে। এ সব কথা অবশ্য কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ এত দিন জানতেনই না বলে দাবি। এ দিন দুপুরে কেএমডিএ-র এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘আমরা এ দিনই ঘটনাটির কথা জেনেছি। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’

কিন্তু ধুলোঝড়ের ভিডিয়ো নেট দুনিয়ায় ভাইরাল না হলে কি আদৌ টনক নড়ত কেএমডিএ কর্তাদের, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Flyover Dust Storm Viral
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE