Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মানা হচ্ছে না নির্দেশ, কমেনি ব্যাগের ওজন

গত সোমবার স্কুলের সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে শিরদাঁড়ায় গুরুতর চোট পেয়েছিল লিলুয়ার এক স্কুলছাত্রী। অভিযোগ, ভারী ব্যাগ নিয়ে নীচে নামার সময়েই ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে গিয়েছিল দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী।

বোঝা: ধর্মতলা চত্বরে ভারী ব্যাগ নিয়ে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

বোঝা: ধর্মতলা চত্বরে ভারী ব্যাগ নিয়ে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

মধুমিতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ০১:২৪
Share: Save:

স্কুলপড়ুয়াদের পিঠের বোঝা লাঘব করতে নির্দেশিকা জারি করেছিল খোদ মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। কোন ক্লাসের পড়ুয়া সর্বোচ্চ কত ওজনের ব্যাগ বহন করতে পারবে, সেই নির্দেশিকায় জানানো হয়েছিল তা-ও। কিন্তু বাস্তবে কি তা মানা হচ্ছে? শহরের একাধিক স্কুল ঘুরে জানা গেল, ‘না’-এর দিকেই পাল্লা ভারী।

গত সোমবার স্কুলের সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে শিরদাঁড়ায় গুরুতর চোট পেয়েছিল লিলুয়ার এক স্কুলছাত্রী। অভিযোগ, ভারী ব্যাগ নিয়ে নীচে নামার সময়েই ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে গিয়েছিল দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী। সেই ঘটনায় স্কুলে গিয়ে বিক্ষোভও দেখান অভিভাবকদের একাংশ। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে, কেন্দ্রীয় সরকার পড়ুয়াদের বয়স অনুযায়ী স্কুলব্যাগের ওজন নির্দিষ্ট করে দেওয়া সত্ত্বেও স্কুলগুলি তা মানছে না কেন?

গত নভেম্বরে স্কুলব্যাগের ওজন সংক্রান্ত যে নির্দেশ কেন্দ্র দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, দশম শ্রেণির পড়ুয়াদেরও স্কুলব্যাগের সর্বাধিক ওজন পাঁচ কেজি পেরোবে না। ক্লাস অনুযায়ী ব্যাগের নির্দিষ্ট ওজন বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি ওই নির্দেশে বলা হয়েছিল, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের কোনও হোমওয়ার্ক দেওয়া যাবে না। ২০০৬ সালের কেন্দ্রীয় আইনেও বলা হয়েছিল, কোনও পড়ুয়ার স্কুলব্যাগের ওজন তার শারীরিক ওজনের ১০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। ওই আইনে এমনটাও বলা হয়েছিল, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের বইপত্র রাখতে স্কুলে লকার রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

কিন্তু বহু স্কুলেই খোঁজ নিয়ে জানা গেল, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওই সমস্ত নিয়ম মানা হচ্ছে না। আইসিএসই বোর্ডের সচিব জেরি অ্যারাথুন জানালেন, সিলেবাস তাঁরা তৈরি করে দেন। স্কুলগুলি বিভিন্ন প্রকাশকের কাছ থেকে সেই অনুযায়ী বই নেয়।

বিভিন্ন স্কুলই ভারী ব্যাগের ক্ষেত্রে নানা রকম যুক্তি দিয়েছে। যেমন, কলকাতার মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লস আইসিএসই বোর্ডের অধীন। স্কুলের অধ্যক্ষা দময়ন্তী মুখোপাধ্যায় বুধবার জানালেন, তাঁরা বারবারই পড়ুয়াদের শুধুমাত্র ইংরেজি আর গণিতের বই আনতে বলেন। অন্য বই আনতে বারণ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সব বই নিয়েই পড়ুয়ারা আসছে। সঙ্গে রয়েছে ধাতব টিফিন বক্স, পেনসিল বক্স। এমনকি, জলের বোতলও অনেকের ধাতব।

কিন্তু বারণ করা সত্ত্বেও পড়ুয়ারা কেন সব বই নিয়ে আসছে? একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, অভিভাবকেরা তেমনটাই চান। অধ্যক্ষা বলেন, ‘‘অনেক ছাত্রীই ক্লাসের পরে কোচিংয়ে যায়। কোচিংয়ের খাতাবইও ওই ব্যাগে থাকে। অত ক্ষণ বাড়ির বাইরে থাকার জন্য দ্বিতীয় একটি টিফিন বক্সও অনেকে আনে প্রতিদিন।’’ তবে অধ্যক্ষার বক্তব্য, তাঁর স্কুলে প্রত্যেক পড়ুয়ার জন্য লকার তৈরির জায়গা নেই। রামমোহন মিশন স্কুলও আইসিএসই বোর্ডের অধীন। ওই স্কুলের অধ্যক্ষ এবং দেশের আইসিএসই স্কুলগুলির অধ্যক্ষদের সংগঠনের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি সুজয় বিশ্বাস জানালেন, লকারের ব্যবস্থা বহু স্কুলেই নেই। তবে নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের বেশির ভাগ বই তাঁরা স্কুলেই রেখে দেন। উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের হোমওয়ার্কের জন্য বইখাতা বাড়ি নিয়ে যেতে হয়।

সল্টলেকের ভারতীয় বিদ্যাভবনে বেশ কিছু দিন অধ্যক্ষা ছিলেন রেখা বৈশ্য। এখন তিনি সল্টলেক শিক্ষা নিকেতনের অ্যাকাডেমিক ডিরেক্টর। দু’টি স্কুলই সিবিএসই বোর্ডের অধীন। তাঁর মতে, সব বই না এনে যে অনুচ্ছেদ পড়ানো হচ্ছে, সেই অনুচ্ছেদ ফোটোকপি করে পড়ুয়ারা ক্লাসে আনতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘আজকের দিনে যখন অনলাইনেই স্টাডি মেটেরিয়াল রেখে দেওয়া হচ্ছে, তখন ফোটোকপি করে এনে পড়ায় অসুবিধা কোথায়?’’

প্রশ্ন উঠেছে, পড়ুয়াদের কি সে কথা বলা হয়েছে? বিভিন্ন স্কুল ঘুরে জানা গেল, প্রায় কোথাওই এই সংক্রান্ত কোনও নির্দেশ নেই।

এ রাজ্যের বোর্ডগুলির অধীন যে সব স্কুল রয়েছে, তাদের বইয়ের ওজন বেশি হয় না বলেই দাবি রাজ্য সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদারের। বুধবার তিনি জানালেন, নভেম্বরে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের নির্দেশের পরে রাজ্য এ বিষয়ে তাদের যাবতীয় তথ্য মন্ত্রককে পাঠিয়েছে। মন্ত্রক ওই তথ্যে সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘বইয়ের ব্যাগের ভার যাতে বেশি না হয়, তার জন্য স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীরই নির্দেশ রয়েছে। চিকিৎসক এবং মনোবিদদের পরামর্শ নিয়ে এ রাজ্যে সিলেবাস তৈরি হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Student Heavy Bags
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE