জল্পনা চলছিল বেশ অনেক দিন ধরে। শেষ পর্যন্ত সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলেই যোগ দিলেন রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তাপস চট্টোপাধ্যায়। তাঁর পুরবোর্ডের মেয়াদ ফুরনোর পরে সম্প্রতি ওই পুরসভায় প্রশাসক বসানো হয়েছে। আগামী অক্টোবরে রাজারহাট এবং বিধাননগর পুরসভাকে সংযুক্ত করে নতুন পুর-নিগমের ভোট হওয়ার কথা। তার কয়েক মাসের মধ্যেই বিধানসভার ভোট। এই পরিস্থিতিতে রাজারহাটের এক সময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা তাপসবাবুকে তৃণমূলের দলে টানা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
সিপিএম ছেড়ে তাপসবাবুর শাসক দলে যোগদান অবশ্য খুব মসৃণ হচ্ছে না! এমনিতেই রাজারহাট-নিউটাউন এলাকা তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে জর্জরিত। তার উপরে তাপসবাবুর মতো দাপুটে নেতার অনুপ্রবেশ তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণে প্রভাব ফেলবে বলেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। দলের অন্দরের সমীকরণে রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত এখন কোণঠাসা। তাঁর শিবিরের ধারণা, তাপসবাবুকে দলে নিয়ে আসা হল বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের হাত শক্ত করে তাঁদের আরও বিপাকে ফেলতে। আগামী বিধানসভা ভোটে তাপসবাবুই সব্যসাচীর কেন্দ্র থেকে টিকিট পেতে পারেন বলেও দলের একাংশের ধারণা। এ সমস্ত জল্পনা এবং আশঙ্কার জেরেই বুধবার নিউটাউনে রীতিমতো পথে নেমে তাপসবাবুকে দলে নেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ শুরু করেছে তৃণমূলের একাংশ। তাদের দাবি, ‘সিপিএমের হার্মাদ, তৃণমূলের উপরে অত্যাচারী তাপস চট্টোপাধ্যায়কে দলে নেওয়া চলবে না’। দলীয় সূত্রের খবর, বিক্ষোভ এড়িয়ে শেষ পর্যন্ত পুলিশি নিরাপত্তায় তৃণমূল ভবনে নিয়ে যেতে হয়েছে তাপসবাবুকে। সেখানে তাপসবাবুর হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দিয়েছেন দলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। হাজির ছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং কৃষিমন্ত্রী তথা রাজারহাট-গোপালপুরের বিধায়ক পূর্ণেন্দু বসু।
তৃণমূলে যোগদানের পরে প্রত্যাশিত ভাবেই পত্রপাঠ তাপসবাবুকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে সিপিএম। দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেব বলেছেন, ‘তাপসবাবু পার্টির শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ তো বটেই, পার্টির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতাও করেছেন। তাঁর এই কাজে রাজারহাট ও নারায়ণপুর এলাকার মানুষ গভীর ভাবে মর্মাহত। তাঁকে গঠনতন্ত্রের ১৯(১৩) ধারা অনুযায়ী দল থেকে বহিষ্কার করা হল। এখন থেকে কোনও পার্টি সদস্য ও সমর্থক তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন না’। সিপিএমে থেকেই তাপসবাবু তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে গভীর যোগাযোগ রেখে চলতেন বলেও অভিযোগ করেছেন গৌতমবাবু। তবে তার জন্য আগেই কেন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হল না, সেই প্রশ্ন উঠছে সিপিএমের অন্দরেই।
চার বছর আগে বিধানসভা ভোটে তাপসবাবু হেরে যাওয়ার পর থেকেই তাঁর তৃণমূলে যাওয়ার জল্পনা চলছে। বারেবারেই তৃণমূল নেতৃত্ব চেষ্টা করেছেন, রাজারহাটের এই নেতার হাতে দলের পতাকা ধরানোর। নানা কারণে শেষ পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। সপ্তাহদুয়েক আগে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলী গঠনের দিন প্রতিবাদ জানিয়ে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন তাপসবাবু। সিপিএম নেতৃত্বের একাংশের ধারণা ছিল, সেটাই তাঁর দল ছাড়ার চূড়ান্ত ক্ষেত্র প্রস্তুতি! তাঁর তৃণমূলে যাওয়ার জল্পনা আরও পাকা হওয়ার পরে মঙ্গলবার দিনভর সিপিএম নেতাদের কারও ফোন ধরেননি তাপসবাবু। তখনই সিপিএম নেতৃত্ব বুঝে যান, কী হতে চলেছে! তাপসবাবুর যুক্তি, সিপিএমের মধ্যে বয়স্কদেরই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তার ফলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যাচ্ছে না। আর সেই সঙ্গেই তিনি চান ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে উন্নয়নের কাজে সামিল হতে’। এমনকী, তৃণমূল নেত্রীর মধ্যে বামপন্থার কিছু গুণও তিনি খুঁজে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাপসবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy