রাত তখন একটা। অপহরণকারীদের কথা মতো যথাস্থানে পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রৌঢ়। ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে শনিবার দুপুরেই ফোনটা পেয়েছিলেন মহম্মদ শাকিল নামে ওই প্রৌঢ়। আর দেরি না করে, ওই দিন গভীর রাতেই ছেলেকে ছাড়াতে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে গার্ডেনরিচের একটি নার্সিংহোমের সামনে হাজির হন তিনি। আশপাশে তখন ছদ্মবেশে ঘোরাফেরা করছিলেন রাজাবাগান ও গার্ডেনরিচ থানার ১১ জন পুলিশকর্মী। তাঁর হাতের টাকার ব্যাগটি নিতে চার যুবক এগিয়ে আসতেই ছদ্মবেশ ছেড়ে হাতেনাতে তাদের ধরে ফেলে পুলিশ। সেলুলয়েডের টানটান গল্পকেও হার মানায় এই দৃশ্য! উদ্ধার করা হয়েছে অপহৃত ওই যুবক মহম্মদ আসলামকে।
তদন্তকারীরা জানান, রাজাবাগান থানা এলাকার মিঠাতলা বাগানের বাসিন্দা বছর কুড়ির যুবক আসলাম দিন কয়েক আগে কাজের সূত্রে বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন। শনিবার দুপুরে আচমকা তাঁর বাবা শাকিলের মোবাইলে একটি ফোন আসে। এক যুবক তাঁকে জানায়, অপহরণ করা হয়েছে তাঁর ছেলেকে। পুলিশকে শাকিল জানিয়েছিলেন, ওই যুবক লক্ষাধিক টাকা মুক্তিপণ চেয়েছিল। টাকা না পেলে তাঁর ছেলেকে মেরে ফেলা হবে বলেও সে হুমকি দেয়।
রাতেই পুলিশে অভিযোগ জানান প্রৌঢ়। শাকিলের ফোনে আসা জনৈক যুবকের মোবাইল ফোনের অবস্থান ধরে পুলিশ জানতে পারে, অপহরণকারীরা গার্ডেনরিচের একটি ডেরায় রয়েছে। এর পরেই পুলিশ অপহৃতকে উদ্ধার করার রূপরেখা তৈরি করে ফেলে। হুমকি ফোন করা যুবকের কথা মতো টাকা নিয়ে নির্দিষ্টস্থানে শাকিল হাজির হলে, বেরিয়ে আসে চার যুবক। হাতেনাতে ধরা পড়ে মহম্মদ জামসেদ আলি, মইনুল হক, মহম্মদ আফসার এবং আবু জুনেদ নামে চার অপহরণকারী। পুলিশ জানিয়েছে, এদের প্রত্যেকের বাড়ি গার্ডেনরিচে। জুনেদ ও আফসার স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। অন্য দু’জন পেশায় দিনমজুর।
তদন্তকারীরা জানান, আসলাম ধৃত যুবকদের পূর্ব পরিচিত। মাস কয়েক আগে ধৃতদের থেকে সতেরো হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন আসলাম। কিন্তু ওই টাকা শোধ করতে না পারায় চার যুবকের সঙ্গে গোলমাল বেঁধেছিল তাঁর। ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জেনেছে, শনিবার সকালেই আসলাম বাড়ি ফিরছিলেন। সেই খবরটা তাদের কাছে আসতেই আসলামকে অপহরণ করার ছক কষে। তদন্তে জানা যায়, আসলামকে গার্ডেনরিচের একটি ডেরায় আটকে রেখে মারধর করা হয়েছিল। দুপুরেই আসলামের বাবাকে ফোন করে জুনেদ। মুক্তিপণের টাকা চেয়ে হুমকি দিয়েছিল সে-ই।
ধৃত চার যুবকের বিরুদ্ধে অপহরণ এবং বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। আজ, সোমবার ধৃতদের আদালতে তোলা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy