Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

‘যেখানে খুশি যাক, কেউ আমার কিছু করতে পারবে না’

দোকানের রোল, ফ্রায়েড রাইস, চিলি চিকেন যায় প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কাছে। সে কথা তিনি সদর্পেই ঘোষণা করেছেন। তাই ‘জতুগৃহ’ তৈরি করে রেস্তরাঁ কিংবা রোল সেন্টার চালালেও প্রশাসনের নজর পড়ে না সে দিকে। দমকলের অধিকর্তা বিষয়টি বেআইনি দাবি করেছেন। কিন্তু দমকল কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। 

করুণ: এমনই অবস্থা গড়িয়াহাট রোডের গুরুদাস ম্যানসনের। (ইনসেটে) শোভন চৌধুরী। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

করুণ: এমনই অবস্থা গড়িয়াহাট রোডের গুরুদাস ম্যানসনের। (ইনসেটে) শোভন চৌধুরী। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

দীক্ষা ভুঁইয়া
শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:২৪
Share: Save:

গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?

সেই দোকানের রোল, ফ্রায়েড রাইস, চিলি চিকেন যায় প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কাছে। সে কথা তিনি সদর্পেই ঘোষণা করেছেন। তাই ‘জতুগৃহ’ তৈরি করে রেস্তরাঁ কিংবা রোল সেন্টার চালালেও প্রশাসনের নজর পড়ে না সে দিকে। দমকলের অধিকর্তা বিষয়টি বেআইনি দাবি করেছেন। কিন্তু দমকল কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি।

গড়িয়াহাট মোড়ের গুরুদাস ম্যানসনে গত ১৯ জানুয়ারির অগ্নিকাণ্ডের পরেই প্রশ্ন উঠেছে সেটির নীচে দীর্ঘদিন ধরে চলা একটি রোলের দোকানের বৈধতা নিয়ে। যেটির বিরুদ্ধে পুর আইন, দমকল কিংবা দূষণ বিধি— সবই লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে। অগ্নিকাণ্ডের পরে যখন সুরক্ষা-সহ নানা কারণে গুরুদাস ম্যানসনের প্রত্যেকটি ব্লকেই বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল, ওই রোলের দোকানের মালিক তখন দমকল কিংবা সিইএসসি-র ছাড়পত্র ছাড়াই দোকানে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করে দেন। পরে তা নিয়ে হইচই হওয়ায় দোকানের মালিক বাধ্য হন সংযোগ কেটে দিতে।

৪৭এ গড়িয়াহাট রোডের ওই দোকানে এমন হয়েছিল শুনে সিইএসসি-র এক কর্তা বলেন, ‘‘যদি কেউ বিদ্যুতের লাইন সেখানে টেনে থাকেন তবে সেটা বেআইনি হয়েছে।’’ ওই আবাসনের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১৬১বি রাসবিহারী অ্যাভিনিউ অংশ এখনও অন্ধকারেই। এ দিন বিদ্যুৎ এসেছে ৪৭এ গড়িয়াহাট রোডের অংশে। অন্য দু’টি অংশে গত সপ্তাহেই বিদ্যুৎ এসেছিল।আবাসনের বাসিন্দা মধুরিমা মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘রোলের দোকানের মালিক শোভনবাবু ক্ষমতাশালী।’’

কে এই শোভনবাবু? বহুল পরিচিত রোলের দোকানটির মালিক শোভন চৌধুরী। অভিযোগ, অগ্নিকাণ্ডের পরের দিন আবাসিকদের অভিযোগের প্রসঙ্গে তাঁকে পুলিশ ও দমকল আধিকারিকদের সামনেই বলতে শোনা যায়, ‘‘যেখানে খুশি যাক। কেউ আমার কিছু করতে পারবে না।’’কী অভিযোগ ছিল মধুরিমাদেবীর?

ওই দিন তিনি প্রশাসনের কর্তাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, রোলের দোকানের ফাটা চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়া তাঁর ঘরে ঢোকে। তার জেরে তাঁর টনসিলে সমস্যা তৈরি হয়। পরে দু’টি টনসিলই বাদ দিতে হয়। তাঁর দেড় বছরের শিশুপুত্রও ধোঁয়া আর মাংসের গন্ধে মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ে।

একই অভিযোগ সুস্মিতা সাহার। তাঁর ফ্ল্যাটের নীচেই দু’টি রোলের দোকান। আগুনের তাপে আর গ্যাসের গন্ধে তিনিও ফ্ল্যাটে টিকতে পারেন না। তাঁদের দাবি, থানা, দমকল থেকে শুরু করে পুরসভা, স্থানীয় কাউন্সিলর— সব মহলেই রোলের দোকানের মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়েছে।

কোনও সুরাহা হয়নি। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য পুরো বিষয়টিই দমকল এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দায়িত্ব বলে জানিয়েছেন। স্থানীয় গড়িয়াহাট থানা এ সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। অগ্নিকাণ্ডের পরের দিনই শোভনবাবুর চারটি খাবারের দোকানের জন্য মজুত রাখা গ্যাস সিলিন্ডারের হদিস মেলে গুরুদাস ম্যানসনেরই নীচের একটি তালাবন্ধ ঘরে। স্থানীয় হকারেরাই তা দেখিয়ে দেন। সিলিন্ডারগুলি থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাসের সংযোগ বিভিন্ন দোকানে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তা নিয়ে তর্কাতর্কি শুরু হতেই শোভনবাবুকে ওই দিন বলতে শোনা যায়, স্থানীয় থানা থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই তাঁদের খাবার পৌঁছে যায়। দমকলের অধিকর্তা জগমোহনও স্বীকার করেন, ওই ভাবে গ্যাসের পাইপ নিয়ে যাওয়ার কোনও অনুমতি তাঁরা দেননি।

মঙ্গলবার দুপুরে প্রকাশ্যে দুই মহিলা আবাসিকের সঙ্গে অভব্য আচরণের অভিযোগ ওঠে শোভনবাবুর ছেলের বিরুদ্ধে। তাঁরা থানায় যাওয়ার কথা জানালে শোভনবাবু সকলের সামনে চিৎকার করে বলেন, ‘‘থানায় অভিযোগ করে কোনও লাভ নেই।’’ দুই মহিলা অবশ্য থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।এক স্থানীয় বাসিন্দার মন্তব্য, ‘‘দাদার হাত মাথার উপরে রয়েছে। তাই সাত খুন মাফ।’’

কী ভাবে?

বাড়ির একটি অংশের মালিক অসিত কুন্ডুচৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘গুরুদাস ম্যানসনেই ফ্ল্যাট কিনেছিলেন শোভনবাবু। সেটি এখন রেস্তরাঁ। সবাই সব জেনেও চুপ।’’কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘আবাসিক বাড়িতে এমনটা করা যায় না। এ ক্ষেত্রে কী কাগজপত্র রয়েছে, তা না দেখে মন্তব্য করব না।’’ তবে শোভনবাবুর মাথায় কোন দাদার হাত রয়েছে, তা খোলসা করেননি কেউ। সব অভিযোগ অস্বীকার করে শোভনবাবুর দাবি, তাঁর ব্যবসা সম্পূর্ণ আইন মেনেই চলছে। ব্যবসা সংক্রান্ত সব কাগজপত্রই তাঁর কাছে রয়েছে বলেই দাবি ওই রোলের দোকানের মালিকের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gariahat Gariahat Fire Kolkata Fire Restaurant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE