ডেঙ্গি মোকাবিলায় এনএস-১ নির্ণয়ের জন্য দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বসানো হয়েছিল এলাইজা যন্ত্র। কিন্তু সেই যন্ত্রটি চালানোর জন্য দক্ষ কর্মী বা প্যাথলজিস্ট নেই। ফলে এক বছর পরেও সেটি তালাবন্ধ একটি ঘরে ঢাকা দেওয়া অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ইতিমধ্যেই ওই এলাকায় ডেঙ্গি এবং অজানা জ্বরের প্রকোপ শুরু হলেও বাধ্য হয়ে পরীক্ষার জন্য রক্ত পাঠাতে হচ্ছে অন্যত্র।
কর্মী নিয়োগ না করে যন্ত্র বসানোয় মাসুল দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তাই আপাতত অন্য হাসপাতাল থেকে প্যাথলজিস্ট এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কথা বলছেন উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাঘবেশ মজুমদার। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘জেলায় প্যাথলজিস্টের অভাব রয়েছে। এই অবস্থায় কম রোগী হলে দেগঙ্গা থেকে এনএস-১ পরীক্ষার জন্য রক্ত সংগ্রহ করে হাবড়া হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। বিশ্বনাথপুর ব্লক হাসপাতালে রোগী বেশি হলে হাবড়া থেকে প্যাথলজিস্ট পাঠিয়ে ওই যন্ত্রে এনএস-১ পরীক্ষা হবে।’’ কেন প্যাথলজিস্টের ব্যবস্থা না করে যন্ত্র কেনা হয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর জেলা স্বাস্থ্য কর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
গত বছরেই দেগঙ্গা এলাকায় অজানা জ্বর এবং ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা হয়েছিল শতাধিক। আক্রান্তের সংখ্যাও ছিল কয়েক হাজার। এ বছরেও ওই হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর ভিড় শুরু হয়ে গিয়েছে। দেগঙ্গার ১৩টি পঞ্চায়েত এলাকাতেই জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে এক শিক্ষিকার। গত বছর ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এনএস-১ পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় রক্ত পাঠানো হচ্ছিল বারাসত জেলা হাসপাতালে। সেই দেরির কারণে এবং বেসরকারি জায়গা থেকে রক্ত পরীক্ষা করাতে গিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়েছিল বলে জানায় স্বাস্থ্য দফতর।
এর পরে গত বছরই বিশ্বনাথপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এনএস-১ নির্ণয়ের জন্য এলাইজা যন্ত্রটি বসানো হয়। সেখানে দেখা গেল, তালাবন্ধ ঘরে কাপড়ে ঢাকা রয়েছে সেই যন্ত্র। মেঝেতে ঠাঁই হয়েছে জ্বরে আক্রান্তদের। সকাল ১০টা থেকে ছেলে কোলে দাঁড়িয়েছিলেন পারুলবিবি। দুপুরে দেখা গেল, কোলেই সাড়হীন ছেলের গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। পারুল বলেন, ‘‘হাসপাতালে ডাক্তার দু’জন। আর রোগী তো শয়ে শয়ে।’’
সপ্তাহ খানেক ধরে জ্বরে ভুগছেন দোহারিয়ার জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘শুক্রবার রক্ত পরীক্ষা করাতে এসে সোমবার রিপোর্ট পেলাম। রক্ত পরীক্ষা করাতেই যদি সময় চলে যায়, চিকিৎসা শুরু হবে কবে?’’ গাম্ভীরগাছির বাসিন্দা ন’বছরের আলামিন মোল্লা জ্বরে ভুগছে ১৫ দিন ধরে। তার পরিবার জানাচ্ছে, রক্ত পরীক্ষা করতে গিয়ে দেরি হয়ে যায়। প্লেটলেট কমে যাওয়ায় ডেঙ্গির চিকিৎসা শুরু হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রক্ত পরীক্ষা করাতে তাই ভিড় জমছে বেসরকারি পরীক্ষাকেন্দ্রে। দেগঙ্গা বাজারের এক কর্মী জানান, প্রতিদিন ২০০ জনের রক্ত পরীক্ষা করতে হচ্ছে। এনএস-১ এর জন্য ৬০০ আর ডেঙ্গি প্রোফাইলের জন্য ১২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। সেখানে দাঁড়ানো এক বৃদ্ধ আবু খালেক বলেন, ‘‘এত টাকা জোগা়ড় করা খুব কষ্টের। কিন্তু গতবারের পরে সরকারি হাসপাতালের অপেক্ষায় বসে থাকতেও ভয় হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy