দোকানে বিক্রি হচ্ছে গুটখার উপকরণ। নিজস্ব চিত্র
গুটখা বিক্রি রোধের আইনেই ফাঁক রয়ে গিয়েছে। আর সেই ফাঁক গলেই শহরে অবাধে গুটখা বিক্রি হচ্ছে বলে দাবি করছেন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি বন্ধের লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ (এফএসএসএআই)-র ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস রেগুলেশন ২০১১’ (প্রহিবিশন অ্যান্ড রেস্ট্রিকশনস অন সেলস)-এর ধারা অনুযায়ী, তামাক বা নিকোটিন মিশ্রিত যে কোনও খাদ্যের বিক্রি নিষিদ্ধ। আইন অনুযায়ী, গুটখা বা পানমশলাকে খাদ্যদ্রব্য হিসেবেই ধরা হয়। তাই পানমশলার সঙ্গে চিবিয়ে খাওয়ার তামাক মেশানো হলে তা উৎপাদন, মজুত বা বিক্রি— কোনওটাই করা যায় না।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের পর থেকেই গুটখা নিষিদ্ধ করার নির্দেশিকা প্রতি বছর জারি করে চলেছে রাজ্য সরকার। কলকাতা পুরসভার খাদ্য-সুরক্ষা ইনস্পেক্টরদের একাংশের বক্তব্য, তামাকজাত দ্রব্য বিক্রেতারা এখন চিবিয়ে খাওয়ার তামাক ও গুটখা আলাদা ভাবে বিক্রি করেন। ক্রেতারা তা কিনে মিশিয়ে নেন। ফলে আইনত গুটখার বিক্রি আটকানো খাদ্য-সুরক্ষা ইনস্পেক্টরদের দায়িত্ব হলেও যে মুহূর্তে তাতে আলাদা ভাবে তামাক মিশছে, তা ‘দ্য সিগারেট অ্যান্ড আদার টোব্যাকো প্রোডাক্টস অ্যাক্ট, ২০০৩’ (কটপা)-এর অধীনে চলে যাচ্ছে। পুরসভার এক পদস্থ
খাদ্য-সুরক্ষা ইনস্পেক্টর বলেন, ‘‘গুটখার বিক্রি বন্ধ করা অবশ্যই আমাদের দায়িত্ব। সেই অনুযায়ী আমরা ভেন্ডরদের সচেতনও করছি। কিন্তু তাতে তামাক মেশানো হলে সেটা তো দেখার কথা পুলিশেরও।’’ পুলিশকর্তারা অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
এই যুক্তি অবশ্য খারিজ করে দিচ্ছেন তামাকজাত দ্রব্য-বিরোধী আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, এখানে ধোঁয়াশার কোনও কারণই নেই। আইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, গুটখা বিক্রি রোধে খাদ্য-সুরক্ষা ইনস্পেক্টরদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। যদিও গুটখা বিক্রির কৌশলে প্রতিনিয়ত বদল এসেছে বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন তাঁরা।
তাঁরা জানাচ্ছেন, গুটখা বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়ার পরে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রেতারা প্রথমে ‘টুইন-প্যাক’ বিক্রি শুরু করেছিলেন। একটি প্যাকেটে পানমশলা, অন্য প্যাকেটে তামাক আলাদা ভাবে বিক্রি হত। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট ফের নির্দেশ দিয়ে বলে, এই ‘টুইন প্যাক’ বিক্রি চলবে না। তখন আবার নতুন কৌশল বার করেন বিক্রেতারা। একদম আলাদা ভাবে তাঁরা পানমশলা ও চিবিয়ে খাওয়ার তামাক বিক্রি শুরু করেন। ক্রেতারাও আলাদা ভাবে তা কিনে মিশিয়ে নেন। এখন দোকানে গিয়ে কেউ ‘গুটখা চাই’ বললেই বিক্রেতারা বুঝে যান, আসলে কোন দুটো জিনিস চাওয়া হচ্ছে।
‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ’ (এনআইসিপিআর)-এর সিনিয়র কনসালট্যান্ট অমিত যাদব বলেন, ‘‘এখানে সংশয় বা বিভ্রান্তির কোনও জায়গাই নেই। কারণ, দু’টি আইনের পরস্পরের স্বার্থের সংঘাতের ক্ষেত্রে বৃহত্তর জনস্বার্থের জন্য যেটা ভাল বা গুরুত্বপূর্ণ, সেটাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে সব জায়গায়। ফলে গুটখা বিক্রি বন্ধ পুরোপুরিই খাদ্য-সুরক্ষা ইনস্পেক্টরদের দায়িত্ব। আইনের প্রয়োগই এখানে সব থেকে
বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy