প্রতিমা পোদ্দার, আয়েষা নূর, রাখী বসু এবং শর্বরী দত্ত। —নিজস্ব চিত্র
সাফল্যের একটা আলো থাকে। সে সাফল্য যদি আসে সমাজ বদলের পথিকৃৎ হয়ে, তার দীপ্তি বেড়ে যায় আরও অনেকখানি।আর পুরুষশাসিত সমাজের বুকে, হাজারো বাধা পেরিয়ে সে বদল আনার কাণ্ডারী যদি হন নারী, আলো ঘিরে রাখে তাঁকে। আন্তর্জাতিক নারীদিবসের প্রাক্কালে তেমনই দুই আলোকময়ীকে সম্মান জানাল জ্যোতি বসু মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন। সৌজন্যে তাদের উদ্যোগ— ‘জ্যোতির্ময়ী পুরস্কার ২০২০’।
শুক্রবার দুপুরে হিন্দুস্থান পার্কে প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর তৎকালীন বাসভবনে হয়ে গেল এই অনুষ্ঠান। কলকাতারই ক্যারাটে-কন্যে আয়েষা নূর এবং এ শহরের প্রথম এবং একমাত্র মহিলা বাসচালক প্রতিমা পোদ্দারের হাতে ‘জ্যোতির্ময়ী’র সম্মান তুলে দিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, বিশিষ্ট ডিজাইনার শর্বরী দত্ত। উপস্থিত ছিলেন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা, প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রীর পুত্রবধূ রাখী বসু।
মহিলাদের সুরক্ষায় ক্যারাটের সাহস জোগাতে উদ্যোগী আয়েষা নিজেও ক্যারাটের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সেরার শিরোপা ছিনিয়ে এনেছেন। মৌলালির রামলীলা ময়দানে তাঁর প্রশিক্ষণে এখন ক্যারাটের পাঠ নেন প্রায় ছ’শো মেয়ে। অভাব-অনটন ও অসুস্থতার কাছে হার মানতে না চাওয়া, তুমুল জেদী ক্যারাটে-কন্যা আয়েষার এখন লক্ষ্য বছরে এক লক্ষ জনকে এমন প্রশিক্ষণ দেওয়া।
আরও পড়ুন: ভোডাফোনের ইন্টারনেট বন্ধ, সমস্যা কলেও, দিনভর চূড়ান্ত হয়রানি গ্রাহকদের
আরও পড়ুন: উঠল প্রেসিডেন্সির আন্দোলন, অবরোধ উঠলেও আন্দোলন চলবে, জানালেন পড়ুয়ারা
অন্য দিকে, বাসচালকের মতো পুরুষ-নির্ভর পেশায় নিজেকে দাঁড় করানোর লড়াইটা সহজ ছিল না নিমতার গৃহবধূ প্রতিমার জন্যও। সংসারে অভাবের দাগ মোছাতে চেয়ে বাসচালক স্বামীর পাশে দাঁড়ান তিনি। আত্মীয়-প্রতিবেশীর ব্যঙ্গ-রসিকতা উড়িয়ে দিয়ে গাড়ি চালানো শিখে প্রতিমা হাতে তুলে নিয়েছেন বাসের স্টিয়ারিং। নিমতা-হাওড়া রুটে বাস চালিয়ে প্রতিমাই এখন গোটা মহানগরে এ পেশায় আসা একমাত্র মহিলা।
২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত, জ্যোতি বসুর স্মৃতিতে গড়া এই ফাউন্ডেশন সারা বছর ধরেই বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে চলে। যাবতীয় প্রতিকূলতা পেরিয়ে, নিজের মতো করে সাফল্যের নজির গড়া নারীদের আলোয় নিয়ে আসা, সম্মান জানানোর এই প্রয়াস এ বছরই প্রথম।
এ দিন অনুষ্ঠানে রাখী বলেন, “নারীদিবসের একটা দিনের মাপকাঠিতে কি মহিলাদের দেখা যায়? তাঁরা না থাকলে সমাজের চেহারাটা কি এমনই থাকত? আমাদের এই জ্যোতির্ময়ী সম্মানের সূচনা হল এ বছর, আয়েষা আর প্রতিমার হাত ধরে। মেয়েরা এগোক এ ভাবেই। আয়েষা, প্রতিমাদের মতো সব বাধা জয় করে আরও আরও এগিয়ে চলুক।”
আয়েষা ও প্রতিমার এমন সাফল্য মুগ্ধ করেছে শর্বরীদেবীকেও। তাঁর কথায়: “সামাজিক, আর্থিক, শারীরিক— সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে দু’জনের এমন লড়াকু মনোভাবকে কুর্ণিশ জানাই। এই অনুষ্ঠানের ট্যাগলাইন ‘ফায়ার উইদিন’ ওঁদের জন্যই যথাযথ হয়ে উঠেছে।’’
আর এমন সম্মান পেয়ে কী বলছেন আয়েষা আর প্রতিমা? দু’জনেরই কথায়: ‘‘আমরা আপ্লুত। আশা রাখি, এমন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আরও অনেকেরই লড়াই স্বীকৃতি পাবে। তাঁদের দেখেই এগিয়ে আসবে আরও অনেকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy