Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বৃদ্ধের বাড়ি বিক্রি রুখতে পারবে না অত্যাচারী ছেলে

অবহেলা-অত্যাচারে বিমুখ বাবা-মায়ের মন পেতে রোজ সকালে প্রণামের নিদান দিয়েছিল আদালত। এ বার কলকাতা হাইকোর্ট বলল, অত্যাচারী ছেলে-বৌমার হাত থেকে বাঁচতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নিজের বাড়ি বা অন্য সম্পত্তি অনায়াসে বিক্রি করতে পারবেন। ছেলে বা বৌমা কোনও রকম বাধা দিতে পারবে না। বৃদ্ধ-বৃদ্ধার কোনও সমস্যা হলে দেখতে হবে পুলিশকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৫ ০২:৪১
Share: Save:

অবহেলা-অত্যাচারে বিমুখ বাবা-মায়ের মন পেতে রোজ সকালে প্রণামের নিদান দিয়েছিল আদালত। এ বার কলকাতা হাইকোর্ট বলল, অত্যাচারী ছেলে-বৌমার হাত থেকে বাঁচতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নিজের বাড়ি বা অন্য সম্পত্তি অনায়াসে বিক্রি করতে পারবেন। ছেলে বা বৌমা কোনও রকম বাধা দিতে পারবে না। বৃদ্ধ-বৃদ্ধার কোনও সমস্যা হলে দেখতে হবে পুলিশকে।

বৃদ্ধ বাবা-মায়ের উপরে অত্যাচারের অভিযোগ ঠিক জেনে হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমিত্র পাল বৃহস্পতিবার ছেলে-বৌমার উদ্দেশে মন্তব্য করেন, “যে-আচরণ করেছেন, তার পরে আপনাদের উপর আদালত সহানুভূতি দেখাবে কী করে!”

ব্যারাকপুরের তালপুকুর এলাকার ব্যানার্জিপাড়ার বাসিন্দা ৮৪ বছরের বৃদ্ধ মণি চক্রবর্তীর অভিযোগ, দেড় বছরের বেশি সময় ধরে তাঁর ছেলে অমিত ও বৌমা আলপনা তাঁকে মারধর করছে। ছেলে-বৌমা তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে খেতে দেয় না। অসুস্থ হলে বৃদ্ধ দম্পতির চিকিৎসাও করায় না। টিটাগড় থানায় একাধিক বার অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু ছেলে-বৌমার অত্যাচারের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাননি বৃদ্ধ দম্পতি।

হাইকোর্টে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ দায়ের করেন মণিবাবু। তাঁর আইনজীবী লালমোহন হাজরা জানান, ছেলে-বৌমার অত্যাচার থেকে নিষ্কৃতি পেতে তাঁর মক্কেল নিজের দোতলা বাড়ি বিক্রি করে সেই টাকায় অন্যত্র বাসা ভাড়া নিয়ে চলে যেতে চান। কিন্তু ছেলে-বৌমা তা করতে দিচ্ছেন না। যাঁরা বাড়ি কিনতে আসছেন, তাঁদের বিগড়ে দেওয়া হচ্ছে।

১০ ফেব্রুয়ারি মামলাটি ওঠে বিচারপতি পালের আদালতে। সে-দিন বিচারপতি পাল নির্দেশ দিয়েছিলেন, টিটাগড় থানার ওসি, মণিবাবু, তাঁর স্ত্রী এবং অভিযুক্ত ছেলে-বৌমাকে তাঁর আদালতে হাজির হতে হবে। এ দিন মণিবাবুর ছেলে অমিত তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে আদালতে হাজির হন। বিচারপতি পাল তা দেখে অমিতের উদ্দেশে বলেন, “ছেলেদের আদালতের বাইরে পাঠান। ওরা এ-সব দেখলে-শুনলে কী শিখবে?”

এর পরে বিচারপতি পাল টিটাগড় থানার ওসি-র কাছে জানতে চান, ওই বৃদ্ধের অভিযোগ সত্য কি না। ওসি জানান, অভিযোগ ঠিক। তার পরেই বিচারপতি নির্দেশ দেন, বৃদ্ধ বাড়ি বিক্রি করতে পারবেন। ছেলে-বৌমা বা অন্য কেউই বৃদ্ধকে আটকাতে পারবেন না। টিটাগড় থানার ওসি-কে বিচারপতির নির্দেশ, থানার ডিউটি অফিসার যাতে নিয়মিত বৃদ্ধ দম্পতির খোঁজ রাখেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁরা কোনও অভিযোগ করলে তখনই ব্যবস্থা নিতে হবে পুলিশকে।

বিচারপতি পাল এ দিন মামলার নিষ্পত্তি করেননি। আগামী জুন পর্যন্ত মামলাটি মুলতুবি রেখেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE