অভ্রদীপ্তা ঘোষ। -ফাইল চিত্র।
মাকে কাছে পেলেই অঙ্কের বই-খাতা নিয়ে বসে পড়তেন অভ্রদীপ্তা ঘোষ। যতক্ষণ না অঙ্ক মিলছে, মায়ের রেহাই নেই। রান্নাবান্নাও বন্ধ। বোনের অঙ্কের খাতা নিয়ে দিদিকেও কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি! সেই অভ্রদীপ্তা এ বার উচ্চ মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় রয়েছেন পঞ্চমে। অঙ্কে একশোয় একশো! মোট প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৯। শুক্রবার মেয়ের রেজাল্ট হাতে নিয়ে সেই সব দিনের কথাই মনে পড়ে যাচ্ছিল অভ্রদীপ্তার মা শিখা ঘোষের। নিজেও এক জন স্কুলশিক্ষিকা। মেয়ের কথা বলতে গিয়ে আবেগে চোখে জল চলে আসে শিখাদেবীর। বলতে থাকেন, “ছোটবেলা থেকেই ও অঙ্ক ভালবাসত। আমিই ওকে অঙ্ক শেখাতাম। অঙ্ক না মেলা পর্যন্ত আমার নিস্তার ছিল না। ওর এই রেজাল্ট যেন কিছুর উত্তর দিয়ে দিল।”
হ্যাঁ, অভ্রদীপ্তার রেজাল্টই দিল সেই উত্তর! অভ্রদীপ্তাও বললেন, ‘‘মা ও দিদিকে ছোটবেলা থেকে পাশে না পেলে এই দিনটা আসত না। আমি স্ট্যাটিসটিক্স নিয়ে পড়তে চাই।” রান্নার দিকেও ঝোঁক রয়েছে অভ্রদীপ্তার। মায়ের হাতের বিরিয়ানিই তাঁর সব থেকে প্রিয়। তবে এখনও সময় পেলে টিভি খুলে কার্টুন দেখতে বসে পড়েন।
‘‘পড়াশোনা নিয়ে কোনও দিনই অভ্রদীপ্তাকে চাপ দিতাম না’’, বললেন যাদবপুর বিদ্যাপীঠের এই কৃতী ছাত্রীর মা। তাঁর কথায়, “ও নিজের মতোই পড়াশোনা করেছে। আমরা কোনও দিনই ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্যও ওকে চাপ দিইনি। আমরাও ইচ্ছে ও স্ট্যাটিসটিক্স নিয়েই পড়ুক।”
আরও পড়ুন: রবীন্দ্রকবিতার আর্কাইভ, পাঠ করবেন শঙ্খও
একই নম্বর পেয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছেন ‘পাথ ফাইন্ডার এইচএস পাবলিক হাইস্কুল’-এর অরিত্র রায়। বললেন, “আমি নিজেও ভাবিনি এমন রেজাল্ট হবে। পুরো কৃতিত্বটাই আমার স্কুলের। আলাদা করে কোনও টিউশন নিতে হয়নি। ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। আইআইটি-র রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করছি। তার পরেই সিদ্ধান্ত নেব।” বরাবরই ছবি তোলার নেশা অরিত্রের। দামি ক্যামেরাও রয়েছে তাঁর। এ দিন স্কুলে অরিত্রকে পেয়ে বন্ধুরাও খুশি। ওই স্কুল থেকেই মেধাতালিকায় ৯৬.২ শতাংশ পেয়ে দশম স্থান পেয়েছেন সায়নী দত্ত। অরিত্রের মতো সায়নীও ইঞ্জিনিয়ার হতে চান। সায়নীর বাবা কর্মসূত্রে হায়দরাবাদে থাকেন। বেহালা চৌরাস্তায় মায়ের সঙ্গে থাকেন সায়নী।
আরও পড়ুন: ফার্স্ট বয়ের দিনে পড়াশোনা, রাত জেগে নাটকের মহড়া আর গান
তিনি বললেন, “নিজের ফল নিয়ে আশাবাদী ছিলাম। তালিকায় ২০ জনের মধ্যে থাকব বলেই আশা করেছিলাম। তবে ৪৮১ নম্বর পেয়ে একেবারে দশে উঠে আসব, ভাবিনি।”
মাধ্যমিকে কিছুটা হতাশ করলেও, উচ্চ মাধ্যমিকের ফলে কলকাতার মুখ উজ্জ্বল করেছেন কৃতী পড়ুয়ারা। এ বছর প্রথম দশের মেধাতালিকায় ৮০ জনের মধ্যে ৯ জনই কলকাতার।ষষ্ঠ স্থান পেয়েছেন পাঠভবন স্কুলের তন্নিষ্ঠা মণ্ডল ও নবনালন্দা হাইস্কুলের সাগ্নিক তালুকদার। তাঁদের প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৫। মাত্র এক নম্বর কম পেয়ে সপ্তম হয়েছেন দিশা ঘোষ। দিশা বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্রী। নবম স্থানে রয়েছেন বিদ্যাভারতী গার্লস হাইস্কুলের শ্রেয়সী গঙ্গোপাধ্যায় ও অন্ধ্র অ্যাসোসিয়েশন হাইস্কুলের নিশা যাদব। দু’জনেই পেয়েছেন ৪৮২ নম্বর। ফের শিরনামে নবনালন্দা হাইস্কুল। এই স্কুলের তীর্থ শঙ্খ বাছার রয়েছেন দশম স্থানে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy