Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘আপদের’ বিদায় চেয়ে ঠা ঠা রোদে দেড় ঘণ্টা ধরে মিছিল

তাপমাত্রা চল্লিশ ডিগ্রি পার। আকাশ থেকে যেন আগুন ঝরছে। বাতাসে হলকা। পায়ের নীচে পথও তেতে-পুড়ে খাক।

বিবেকানন্দ উড়ালপুল হটানোর দাবিতে মিছিল। রবিবার ভরদুুপুরে পোস্তায়।—নিজস্ব চিত্র

বিবেকানন্দ উড়ালপুল হটানোর দাবিতে মিছিল। রবিবার ভরদুুপুরে পোস্তায়।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:১০
Share: Save:

তাপমাত্রা চল্লিশ ডিগ্রি পার। আকাশ থেকে যেন আগুন ঝরছে। বাতাসে হলকা। পায়ের নীচে পথও তেতে-পুড়ে খাক।

রবিবার ভরদুপুরের এ হেন ‘অসহনীয়’ পরিবেশেও মহানগরের বুকে প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিল একটা মিছিল। পাক্কা দেড় ঘণ্টা ধরে— বেলা সাড়ে এগারোটা থেকে একটা পর্যন্ত। রবিবাসরীয় ভোট প্রচার নয়। নতুন কোনও সুযোগ-সুবিধে চেয়েও নয়। বরং না-চাওয়ার দাবি জানিয়ে। যে দাবির কথা মোটামুটি ছন্দ মিলিয়ে লেখা ছিল মিছিলকারীদের হাতের প্ল্যাকার্ডে— ‘বন্ধ করো ব্রিজ নির্মাণ/ আর দেব না একটাও প্রাণ।’

ভেঙে পড়া বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুল যাতে আর নতুন ভাবে তৈরি করা না হয়, সেই দাবিতে এ দিন মিছিলটি বেরিয়েছিল পোস্তার বিপর্যয়স্থলের কাছ থেকে। গণেশ টকিজের কাছে মালাপাড়ার মোড়ে একশোরও বেশি মানুষকে নিয়ে যাত্রার সূচনা। রাজস্থান বিদ্যামন্দির, এপিজে স্কুল, উমেশচন্দ্র কলেজের বেশ কিছু পড়ুয়াও ছিলেন, যাঁরা ওই তল্লাটের বাসিন্দা। উড়ালপুল বিপর্যয়ে মৃত ২৭ জনের স্মরণে অধিকাংশের বুকে কালো ব্যাজ, হাতে বাংলা-হিন্দি-ইংরেজিতে স্লোগান লেখা পোস্টার, প্ল্যাকার্ড। তবে মৌনী নয়। পথ-সেতুর কাজ পাকাপাকি ভাবে বন্ধের দাবিতে অহরহ স্লোগান উঠল মিছিল থেকে।

মালাপাড়ার মোড়ে মিছিল শুরু করেছিলেন মূলত বিবেকানন্দ রোড, কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিটের বাসিন্দারা। এ দিনের মিছিলের উদ্যোক্তা সংগঠন ‘উড়ালপুল হটাও অভিযান সমিতি’ তাঁদেরই হাতে গড়া। পোস্তা হয়ে কালাকার স্ট্রিটে পৌঁছলে আরও মানুষ মিছিলে যোগ দেন। বটতলা স্ট্রিট, রবীন্দ্র সরণি, মদন চ্যাটার্জি লেন, রাজেন্দ্র মল্লিক স্ট্রিট, বারাণসী স্ট্রিট, বিবেকানন্দ রোড, গিরিশ পার্ক হয়ে গণেশ টকিজে গিয়ে মিছিল যখন শেষ হল, তাতে অন্তত দেড়শো লোক।

যাত্রাপথে পাঁচ জায়গায় মিছিল থামিয়ে বক্তৃতাও দিয়েছেন আয়োজকেরা। কালাকার স্ট্রিটে প্রায় দশ মিনিট। উড়ালপুল তৈরি হতে দিলে সম্ভাব্য বিপদ, ঝুঁকি, ইত্যাদি সম্পর্কে বক্তারা নানা কথা বলেন। বক্তৃতা শুনতে ছুটির দিনে রাস্তায় ভিড়ও হয়েছে কম নয়। সমিতির সম্পাদক বাপি দাসের কথায়, ‘‘আমজনতার ব্যাপক সাড়া পেয়েছি।’’ ফি রবিবার তাঁরা মিছিল করে উড়ালপুলের বিপদ সম্পর্কে লোকজনকে সচেতন করবেন বলে জানিয়েছেন বাপি। মিছিলকারী আদিত্য খন্না বলেন, ‘‘দিন-রাত ভয়ে কাঁটা হয়ে আছি। বাচ্চাদের বাড়ির বাইরে নিয়ে যেতে পারছি না। মনে হচ্ছে, এই বুঝি ফ্লাইওভারের বাকিটাও ধসে পড়ল ঘাড়ের উপরে।’’ উড়ালপুলের গা ঘেঁষা রাজস্থান বিদ্যামন্দির স্কুলের ছাত্রী খুশি শর্মা, দীপিকা বর্মারাও মিছিলে হেঁটেছে। ‘‘ব্রিজের নীচ দিয়ে স্কুলে যাওয়ার সময়ে ভয়ে গা শিরশির করে।’’— বলছে খুশি। রোজকার এই আতঙ্ককে চিরতরে নির্মূল করতে চেয়েই এ দিন ঠা ঠা রোদে পায়ে পা মিলিয়েছে ওরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Flyover Collapse Rally
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE