ব্রিগেডের আগে পুলিশ কুকুর নিয়ে তল্লাশি।
একে সপ্তাহের তৃতীয় কাজের দিন। তার মধ্যে শহরে থাকার কথা খোদ প্রধানমন্ত্রীর। যার জেরে বুধবার বিকেলের পরে কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশ অবরুদ্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কায় খোদ পুলিশকর্মীরা। তাঁরা বলছেন, সব চেয়ে বেশি সমস্যা হতে পারে নিত্যযাত্রীদের। কারণ, ওই সময়েই সভা শেষ হবে। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের ডিসি সন্তোষ পাণ্ডের কথায়, ‘‘সভা শেষে বিকেলের দিকে রাস্তায় চাপ বাড়তে পারে। সভায় কত গাড়ি আসছে, তা না দেখে কিছু বোঝা যাচ্ছে না।’’
আর এক ট্র্যাফিক আধিকারিক অবশ্য বলছেন, ‘‘এর মধ্যেও একটু বাঁচোয়া যে, বিমানবন্দরে নেমে রেসকোর্স পর্যন্ত হেলিকপ্টারে আসবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সড়কপথে এলে আর দেখতে হত না।’’
বিজেপি জানাচ্ছে, দুপুর একটা নাগাদ মুরলীধর সেন লেনে তাদের রাজ্য দফতর থেকে একটি মিছিল বেরোবে। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ধরে আসবে সেই মিছিল। তাতেই সব চেয়ে বেশি লোক থাকতে পারে বলে পুলিশের অনুমান। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি মিছিল দক্ষিণ কলকাতা থেকে এসে সভায় মেশার কথা। যার জেরে ধর্মতলা এবং সংলগ্ন এলাকায় পথ অবরুদ্ধ হয়ে পড়তে পারে। কাজের দিনে ধর্মতলা মোড় দিয়ে অন্তত ১০ লক্ষ মানুষ যাতায়াত করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। বুধবার তাঁদের সঙ্গেই যুক্ত হবেন সভায় আসা লোকজন। বিজেপি আবার জানিয়েছে, দুপুর একটার অনেক আগে থেকেই হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন হয়ে অনেকে মিছিল করে সভাস্থলের দিকে এগোবেন। ফলে এ পি সি রোড, এ জে সি বসু রোড এবং এস এন ব্যানার্জি রোডেও কিছুটা যানজট হতে পারে। তবে সভা শেষের পরিস্থিতি নিয়েই পুলিশ বেশি ভাবিত। ওই সময়ে জওহরলাল নেহরু রোড, পার্ক স্ট্রিট এবং শেক্সপিয়র সরণিতে যান নিয়ন্ত্রণ করাই পুলিশের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
চিন্তা বাড়াচ্ছে গত কয়েক মাসে মেট্রো রেলে একের পর এক দুর্ঘটনার খবরও। বুধবার ফের একটি ব্রিগেডের ভিড়কে বহন করতে মেট্রো সক্ষম হবে কি না, তা নিয়েও মশকরা করছেন অনেকে। পুলিশেরই একাংশের আশঙ্কা, পথে ব্রিগেড আর পাতালে মেট্রোর দুর্ঘটনা নিয়ে না তাঁদের আবার হিমশিম খেতে হয়!
চলতি বছরে ব্রিগেডে এটি তৃতীয় জনসভা। আগের দু’টি সভার মতোই দেড় হাজার পুলিশকর্মী সভাস্থল ও তার সংলগ্ন এলাকাগুলিতে মোতায়েন থাকছেন বলে লালবাজার সূত্রে খবর। কুইক রেসপন্স টিমের পাশাপাশি নজরদারিতে থাকছেন পুলিশের পদস্থ আধিকারিকেরাও। এ ছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য থাকছে পৃথক বন্দোবস্ত। মঞ্চের সামনের ৬০ ফুট এলাকা থাকছে ‘স্পেশ্যাল প্রোটেকশন গ্রুপ’ (এসপিজি)-এর অধীনে। তার পরের অংশ থেকে নিরাপত্তার দায়িত্ব কলকাতা পুলিশের। মঞ্চের পিছনের অংশেও প্রধানমন্ত্রীর জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর। ব্রিগেডে এই প্রথম বার কোনও সভার আগে ছাউনি দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে। হ্যাঙারের সাহায্যে মোট ৯টি ছাউনি বানানো হয়েছে। এ ছাড়াও মূল মঞ্চের পাশে থাকছে আরও তিনটি মঞ্চ। মূল মঞ্চ থেকেই সরাসরি সম্প্রচারিত হওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা। এর জন্য বসানো হচ্ছে বিশালাকার স্ক্রিন। সভাস্থলে তদারকি করতে আসা বিজেপি নেতারা বলছেন, ওই স্ক্রিনের পাশাপাশি ছাউনির নীচেও বসানো হচ্ছে প্রায় ৫০টি স্ক্রিন। এলাকা মুড়ে ফেলা হচ্ছে সিসি ক্যামেরায়। সঙ্গে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাটআউট। সেই কাটআউটে ছেয়ে ফেলা হয়েছে সভাস্থল।
তবে এত কিছুর মধ্যেও বিজেপি নেতাদের ভাবাচ্ছে মেদিনীপুর কলেজিয়েট মাঠে মোদীর সভা ঘিরে বিপত্তির স্মৃতি। সেখানেও সভার আগে ছাউনি বসানো হয়েছিল। ছাউনি ভেঙে পড়ায় সভাস্থলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। বিজেপি সূত্রের খবর, এ বার মঞ্চ তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছে রাঁচীর এক সংস্থাকে। ময়দানে মাটিতে গর্ত করে, ‘স্ক্রু’ বসিয়ে তার উপরে স্ট্যান্ড পুঁতে লাগানো হচ্ছে ছাউনি। বিজেপি নেতারা নিজেরা দলে দলে গিয়ে তদারকি করেছেন সে সব। বিকেলের পরে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে এলাকা ঘুরে দেখে ছাড়পত্র দিয়ে গিয়েছেন এসপিজি আধিকারিকেরাও।
তার মধ্যেই দেখা গেল, পুলিশ-কুকুর সঙ্গে নিয়ে এলাকা তল্লাশিতে ব্যস্ত বম্ব স্কোয়াড। এক জায়গায় সন্দেহ হওয়ায় প্রায় হাতখানেক খোঁড়ালেন তাঁরা। বোমা অনুসন্ধানী ‘এনএলজিডি’ যন্ত্র ধরলেই সেখানে সবুজের পরিবর্তে লাল রঙ দেখাচ্ছে যন্ত্র। অনেক খোঁড়াখুঁড়ির পরে সেখান থেকে একটি রাংতার প্যাকেট ছাড়া কিছুই উদ্ধার হয়নি। যাওয়ার আগে বম্ব স্কোয়াডের এক কর্মী হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সভা বলে কথা। বাড়তি সাবধান তো হতেই হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy