পুরসভার কেনা ওষুধের মান নিয়ে পাঁচ বছর আগেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন তৎকালীন মেয়র পারিষদ পার্থপ্রতিম হাজারি। কাজ হয়নি। তার ফলে পুরসভায় ওষুধ কেনা নিয়ে ‘দুনীর্তি’র অভিযোগে এখন অস্বস্তিতে পুরবোর্ড। সামাল দিতে পুরসভাকে গড়তে হয়েছে তদন্ত কমিটি। আজ, বৃহস্পতিবার সেই কমিটির প্রথম বৈঠক।
পেশায় চিকিৎসক পার্থবাবু ২০১০-এ ওই সন্দেহের কথা লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও। চিঠিতে পরামর্শ ছিল, ই-টেন্ডার মাধ্যমে ওষুধ কিনলে সমাধান হতে পারে। কিন্তু গত পাঁচ বছরে তা হয়নি। ফলে পুরসভার ওষুধ কেনা নিয়ে গোলমালের অভিযোগ উঠছে। এর তদন্তে কমিটি গড়ার নির্দেশ দেন মেয়র ও পুর-কমিশনার। কেন পাঁচ বছর আগে মেয়র পারিষদের সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সে আলোচনাও হবে এ দিন। এ বিষয়ে শোভনবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘পাঁচ বছর আগে তিনি কী চিঠি দিয়েছিলেন, তা এখন মনে রাখা সম্ভব নয়।’’
পুরসভা সূত্রে খবর, সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্স (সিএমএস), যক্ষা হাসপাতাল ও খাদ্যে ভেজাল বিভাগ বরাবরই পুর-স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ২০১০-এ তৃণমূল ক্ষমতায় এলে ওই তিন বিভাগ আলাদা করা হয়। বিভাগগুলির দায়িত্বে নতুন মেয়র পারিষদের পদ সৃষ্টি হয়। সেই দায়িত্ব পান পার্থবাবু। দায়িত্ব পাওয়ার দু’মাসের মধ্যেই পুরসভার কেনা কিছু ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পার্থবাবু। পুর-নথি অনুযায়ী, ২০১০-এর সেপ্টেম্বরে মেয়রকে পাঠানো ওই চিঠিতে পার্থবাবু জানান, কিছু ওষুধ কেনা হচ্ছে, যার মেয়াদের তারিখ খুবই কম। কিছু ট্যাবলেট ব্লিস্টার থেকে খুললেই ভেঙে বা গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে ওষুধ কিনলে এর সমাধান হতে পারে বলেও জানান তিনি। কিন্তু এতে কাজ হয়নি। তাঁর মেয়াদের শেষে এবং গত এপ্রিলে পুরভোটের আগে কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ)-এর রেসিডেন্ট অডিট শাখা পুরসভার ওষুধ কেনা নিয়ে গোলমালের অভিযোগ পেয়ে নথি চেয়ে পাঠায়। ততক্ষণে কয়েক কোটি টাকার ওষুধ কেনা হয়ে গিয়েছে। ক্যাগ সূত্রে খবর, মেয়র পারিষদ যে সব প্রশ্ন তুলেছিলেন, অডিটে সেগুলি মিলছে। এর পরেই গড়া হয় ছ’জনের তদন্ত কমিটি। তাতে আছেন পুরসভার যুগ্ম কমিশনার (রেভিনিউ), চিফ মিউনিসিপ্যাল ফিনান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসার, আইন এবং স্বাস্থ্য দফতরের মুখ্য অফিসারেরা।
পার্থবাবু বলেন, ‘‘ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম। অনিয়ম রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মেয়রকে জানাই। ভেবেছিলাম কাজ হবে। কেন জানি না, ওই চিঠির জবাব মেলেনি।’’ শুধু তা-ই নয়, ব্যক্তিগত ভাবে পুরসভায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধের মান জানতে বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষাও করানো হয়েছিল। তাঁর সন্দেহ যে ঠিক, তাতে তার প্রমাণ মেলে বলে জানান পার্থবাবু। তবু পুরসভায় ওই ‘নিম্ন মানের’ ওষুধ কেনা বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ।
এক পুর-আমলা জানান, ওষুধ ব্যবহারের দায়িত্ব এক দফতরে এবং কেনার দায়িত্ব অন্য দফতরের হাতে থাকায় সমস্যা বেড়েছে। ২০১০-এ স্বাস্থ্য দফতর ভাঙা হলেও, এ বার তা এক জনের হাতেই। গত পাঁচ বছর যিনি স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বে ছিলেন, সেই অতীন ঘোষই এ বার পার্থবাবুর হাতে থাকা তিন বিভাগেরও দায়িত্বে। অতীনবাবুর এ নিয়ে বক্তব্য, ‘‘সবই তো মেয়র বা মেয়র পারিষদের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। যে অফিসারেরা এর দায়িত্বে, তাঁদের দেখা উচিত ছিল।’’ পার্থবাবুর তোলা ই-টেন্ডার পদ্ধতি প্রসঙ্গে তাঁর জবাব, ‘‘তখন ই-টেন্ডার চালু হয়নি।’’ যদিও পার্থবাবুর চাওয়া ওই ব্যবস্থা এখন কার্যকর হচ্ছে বলে জানান এক আমলা। তবে মান ও দর যাচাই না করে ওষুধ কেনায় কারা জড়িত, তা দেখতেই এই কমিটি। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের শাস্তি দিতে চায় পুরবোর্ড।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy