Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রাসায়নিক স্প্রে করবে ড্রোন, সংশয়ে পতঙ্গবিদেরা

পুরসভা সূত্রের খবর, যে সমস্ত জায়গায় স্বাস্থ্যকর্মীরা সহজে পৌঁছতে পারেন না, প্রথম দফায় সেই সব জায়গার ছবি তুলবে ড্রোন। তার পরে ‘লার্ভিসাইড স্প্রেয়িং ড্রোন’ সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে রাসায়নিক তরল স্প্রে করবে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০২:১৭
Share: Save:

তালাবন্ধ বাড়ি অথবা পরিত্যক্ত কোনও এলাকায় জল বা জঞ্জাল জমে আছে কি না জানতে গত বছরে ড্রোন চালিয়েছিল কলকাতা পুরসভা। এ বছর শুধু ছবি তোলাই নয়, মশা মারতে এ বার তরল রাসায়নিক স্প্রে করবে পুরসভার ড্রোন।

তবে মশা মারতে ড্রোনের মাধ্যমে রাসায়নিক স্প্রে করা আদৌ কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে পতঙ্গবিদদের একটা বড় অংশের মধ্যে। তাঁদের মতে, এতে উপর-উপর কাজ হলেও ডেঙ্গির জীবাণু বহনকারী মশা এডিস ইজিপ্টাইয়ের বাড়বাড়ন্ত আদৌ ঠেকানো যাবে কি না, সেই প্রশ্নটা রয়েই যাচ্ছে।

কী ভাবে কাজ করবে ওই ড্রোন?

পুরসভা সূত্রের খবর, যে সমস্ত জায়গায় স্বাস্থ্যকর্মীরা সহজে পৌঁছতে পারেন না, প্রথম দফায় সেই সব জায়গার ছবি তুলবে ড্রোন। তার পরে ‘লার্ভিসাইড স্প্রেয়িং ড্রোন’ সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে রাসায়নিক তরল স্প্রে করবে। কিন্তু এখানেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কারণ, কোন জমা জলে মশার লার্ভা জন্মেছে আর কোথায় জন্মায়নি, তা ড্রোন নিশ্চিত ভাবে চিহ্নিত করতে পারে না। সে ক্ষেত্রে নির্বিচারে রাসায়নিক তরল ছড়ানো হলে তা থেকে পরিবেশের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে রয়েছে অর্থের অপচয়ের বিষয়টিও।

ডেঙ্গি দমনে মশার আঁতুড়ঘরকে চিহ্নিত করে তার বিনাশ করাই হল প্রাথমিক ধাপ। সে কারণে কোথাও মশার লার্ভা জন্মেছে কি না, তা চিহ্নিত করা প্রয়োজন। তাই প্রশ্ন উঠছে, সেই চিহ্নিতকরণের কাজ না করে যেখানে সেখানে ড্রোন দিয়ে যথেচ্ছ ভাবে রাসায়নিক তরল স্প্রে করা কতটা যুক্তিযুক্ত। স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের মেডিক্যাল এন্টেমোলজির প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসক হিরন্ময় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাড়ির ভিতরে, ট্যাঙ্কের তলায় অথবা টিয়ারের ভিতরে যেখানে জল জমা আছে, সেখানেই অ্যানোফিলিস এবং এডিস বংশবিস্তার করে। ড্রোনের মাধ্যমে তার আভাস মিলতে পারে। কিন্তু সমস্যা তো আরও গভীরে। তা নির্মূল করা যাবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নই।’’

আর এক পতঙ্গবিদ কুন্তল ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, ড্রোন চালিয়ে মশা মারা খুব একটা বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি নয়। কারণ, জিওফোবিক অর্থাৎ উপরের দিকে ওঠার প্রবণতা অ্যানোফিলিস স্টিফেনসাইয়ের বেশি। এই মশা উপরে ডিম পাড়তে ভালবাসে। কিন্তু ডেঙ্গির মশা এডিস ইজিপ্টাইকে ও ভাবে মারা মুশকিল। কারণ, ‘কন্টেনার ব্রিডিং হ্যাবিট’ বা পাত্রের মধ্যে বংশবিস্তারের অভ্যাস রয়েছে এই মশার। কুন্তলবাবুর কথায়, ‘‘এই পদ্ধতিতে অ্যানোফিলিস মারতে সুবিধা হবে। কিন্তু এডিসের ক্ষেত্রে আদৌ লাভ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থাকছে।’’

যদিও মশা মারতে পুরসভা যে বেসরকারি সংস্থার ড্রোন ব্যবহার করছে, তাদের তরফে সোমনাথ দাশগুপ্ত জানিয়েছেন যে, নির্বিচারে কখনওই রাসায়নিক স্প্রে করা হবে না। কোনও জায়গায় মশার লার্ভা জন্মেছে তা স্বাস্থ্যকর্মীরা জানেন অথচ সেখানে তাঁরা পৌঁছতে পারছেন না, এমন জায়গা বা পুকুরেই প্রথম পর্বে ‘লার্ভিসাইড স্প্রেয়িং ড্রোন’ ব্যবহার করা হবে। মাস খানেকের মধ্যে আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং অতিরিক্ত একটি ড্রোন এই অভিযানে ব্যবহার করা হবে। সেই ড্রোনটির কাজ হবে অগম্য জায়গা থেকে জলের নমুনা তুলে আনা। স্বাস্থ্যকর্মীরা যেখানে পৌঁছতে পারছেন না অথচ সেখানে কোনও পাত্রে জল জমে রয়েছে, সে রকম জায়গা থেকেই ওই তৃতীয় ড্রোনটি জলের নমুনা সংগ্রহ করে আনবে। এর পরে সেই নমুনা পরীক্ষা করে যদি পুরসভার পতঙ্গবিদেরা বলেন যে সেখানে মশার লার্ভা রয়েছে, তবেই সেখানে রাসায়নিক স্প্রে করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pesticide Drone KMC Dengue Mosquito
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE