Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

আগে সাজগোজ, পরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা সেতুর

‘রূপটান’ হিসেবে সেতু রং করার কাজ শেষের মুখে। কিন্তু এখনও সেতুর  স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞ সংস্থা নিয়োগের দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়াই শেষ হল না। গত শুক্রবার ফের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে বলে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) সূত্রের খবর।

তুলির টান: উল্টোডাঙা উড়ালপুলে চলছে রং করার কাজ। মঙ্গলবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

তুলির টান: উল্টোডাঙা উড়ালপুলে চলছে রং করার কাজ। মঙ্গলবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:০৮
Share: Save:

‘রূপটান’ হিসেবে সেতু রং করার কাজ শেষের মুখে। কিন্তু এখনও সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞ সংস্থা নিয়োগের দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়াই শেষ হল না। গত শুক্রবার ফের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে বলে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) সূত্রের খবর।

আগামী দেড় মাসের মধ্যে শহরের সেতু এবং উড়ালপুলগুলির ‘স্বাস্থ্য’ পরীক্ষায় নামতে চলেছে কেএমডিএ। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সংস্থার পরামর্শ নেওয়ার কথা আগেই ঠিক হয়েছিল। যদিও সেই সংস্থা নিয়োগের দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। গত শুক্রবার আবার নতুন করে দরপত্র ডাকা হয়েছে। কেএমডিএ-র অবশ্য দাবি, আগে আরও ছ’টি সংস্থাকে নির্বাচন করা হয়েছে। যদিও তাদের এখনও ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ দেওয়া হয়নি। উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার আগেই কেন সেগুলি রং করা হল, তা নিয়ে প্রশাসনের অন্দরেই আলোচনা শুরু হয়েছে।

সংস্থা সূত্রের খবর, মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পরপরই কেএমডিএ-র অধীনস্থ শহরের সেতুগুলির স্বাস্থ্য কেমন, তা নিয়ে সমীক্ষা করার কথা বলা হয়েছিল। তৈরি করা হয়েছিল বিশেষ কমিটিও। গত সেপ্টেম্বরে শহরের কয়েকটি উড়ালপুল-সেতু ঘুরে দেখেছিলেন মেয়র তথা পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তখন তিনি বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছিলেন। তার পরেই সেতু-উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সে কাজ করার আগেই সেতু-উড়ালপুলগুলি রং করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। সেই মতো শহরের ১৯টি উড়ালপুল-সেতুতে রং করার জন্য প্রায় এক কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অনেক জায়গায় সে কাজ শুরুও হয়েছে। সেতু-উড়ালপুলের ‘ক্র্যাশ বেরিয়ার’, দেওয়াল, রেলিং— সব জায়গাতেই নতুন করে রং হচ্ছে।

এই অবস্থায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে গত শুক্রবার! প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, প্রথম দফায় উল্টোডাঙা উড়ালপুল, চিংড়িঘাটা উড়ালপুল, ঢাকুরিয়া সেতু, বাঘা যতীন উড়ালপুল-সহ মোট আটটি সেতু এবং উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। কারণ, কেএমডিএ-র প্রাথমিক সমীক্ষায় ধরা পড়েছে যে ওই সেতু-উড়ালপুলগুলির দ্রুত মেরামতি প্রয়োজন। দ্বিতীয় দফায় আরও ১১টি উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ হবে। প্রসঙ্গত, মাঝেরহাট সেতুর ভাঙার পরে সেতু-উড়ালপুল সমীক্ষার কাজে নেমেছিলেন সংস্থার আধিকারিকেরা। তখন ‘ভিস্যুয়াল স্টাডি’ করেন তাঁরা। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানাচ্ছেন সংস্থার আধিকারিকেরাই। তাঁরা জানাচ্ছেন, অনেক সময়েই বাইরে থেকে দেখে সেতু-উড়ালপুলের অবস্থা বোঝা যায় না। কাঠামোর অবস্থা বোঝার জন্য বিশেষ যন্ত্র বা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সংস্থার পরামর্শের প্রয়োজন হয়। সেই মতোই বিশেষজ্ঞ সংস্থা নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে কেএমডিএ সূত্রের খবর। ইতিমধ্যে ছ’টি সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়েছে। এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞ সংস্থাই বলবে কোন সেতু-উড়ালপুলের কাঠামোর কী অবস্থা, কী কী মেরামতি প্রয়োজন। সেই অনুযায়ী কাজ করা হবে।’’

কিন্তু তার আগেই সেতুগুলিতে রঙের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, এটা নতুন কিছু নয়। নতুন বছরে প্রতিবারই সেতু-উড়ালপুল রং করা হয়। তার উপরে আগামী মাসেই বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন রয়েছে। সে কারণে ভিন রাজ্য-বিদেশ থেকে অনেক অতিথি শহরে আসবেন। তাই সেতু-উড়ালপুলগুলি ঝাঁ-চকচকে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তার যুক্তি, ‘‘রঙের সঙ্গে হেলথ স্টাডি করা, বা না করার তো কোনও সম্পর্ক নেই। সেতুর হেলথ স্টাডি করতে সময় লাগবে। তাই সময় নিয়েই সেটা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE