Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Kolkata Police

পুজোর প্রস্তুতি ‘বন্ধ রাখতে’ বলে বিতর্কে পুলিশ

পুজোকর্তাদের অনেকেরই অভিযোগ, গত রবিবার থেকে একাধিক থানার পুলিশ নিজেদের এলাকার বড় পুজোর কর্তাদের ফোন করে কিংবা দেখা করে পুজোর কাজ আপাতত বন্ধ রাখতে বলেছে।

বিভ্রান্তি: (বাঁ দিকে) চেতলা অগ্রণীর এই পুজোমণ্ডপেও পৌঁছেছিল কাজ বন্ধ করার পুলিশি নির্দেশ। (ডান দিকে) কুমোরটুলি পার্কে এখনও শুরু হল না মণ্ডপ তৈরির কাজ। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

বিভ্রান্তি: (বাঁ দিকে) চেতলা অগ্রণীর এই পুজোমণ্ডপেও পৌঁছেছিল কাজ বন্ধ করার পুলিশি নির্দেশ। (ডান দিকে) কুমোরটুলি পার্কে এখনও শুরু হল না মণ্ডপ তৈরির কাজ। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৫০
Share: Save:

দর্শনার্থীদের ভিড় সামলে এ বছর দুর্গাপুজো আদৌ করা যাবে কি? হাজারো সংশয়ের মধ্যে পুজোর উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত মাসে বলেছিলেন, ‘‘পুজোটা ভাল করে করতে হবে তো! পুজো করতে গেলে পাড়া ভাল রাখতে হবে। ক্লাবগুলো আরও বেশি করে পাড়ার দায়িত্ব নিক।’’ মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণায় উৎসাহিত পুজোকর্তাদের অনেকেই এখন বিভ্রান্ত তাঁরই অধীনে থাকা পুলিশের তরফে আসা পুজোর প্রস্তুতি বন্ধ রাখার নির্দেশে!

পুজোকর্তাদের অনেকেরই অভিযোগ, গত রবিবার থেকে একাধিক থানার পুলিশ নিজেদের এলাকার বড় পুজোর কর্তাদের ফোন করে কিংবা দেখা করে পুজোর কাজ আপাতত বন্ধ রাখতে বলেছে। এতেই বিভ্রান্ত হয়ে অনেকে মণ্ডপ তৈরির কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজোকর্তা তথা ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসুর দাবি, ‘‘পুলিশের শীর্ষ স্তরের নির্দেশিকা ছাড়াই এ কাজ করেছে ঠাকুরপুকুর, বেহালা, হরিদেবপুর, ভবানীপুর, মুচিপাড়া ও শ্যামপুকুরের মতো মোট ১১টি থানা। কিন্তু ফোরামের তরফে এ নিয়ে সরকারি স্তরে জানানোর পরেই ওই সমস্ত থানা বিষয়টি অস্বীকার করছে। এ দিন ওই সব থানা থেকেই পুজোকর্তাদের আবার ফোন করে পুজোর প্রস্তুতিতে বাধা নেই বলে জানানো হয়েছে।’’

শ্যামপুকুর থানা থেকে এমনই ফোন পেয়েছেন বলে দাবি করলেন কুমোরটুলি সর্বজনীনের পুজোকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘বাঁশ পড়ে গিয়েছে। মণ্ডপের শিল্পীরাও এসে গিয়েছেন। বুধবার থেকেই আমাদের মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু গত সোমবার শ্যামপুকুর থানা থেকে ফোন করে বলা হয়, এখন কাজ শুরু করবেন না।’’ দেবাশিসবাবুর দাবি, ‘‘এর পরে এ নিয়ে শোরগোল পড়তে অবশ্য থানা থেকে জানানো হয়েছে, সরকারি ভাবে পুজোর প্রস্তুতি বন্ধ রাখার নির্দেশ নেই। তবে পুজো যে হবে, সেই নির্দেশ আসার পরেই কাজ শুরু করা ভাল।’’

চেতলা থানা থেকে তাঁদের পুজোর কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ চেতলা অগ্রণীর কর্মকর্তা সমীর ঘোষের। তিনি বলেন, ‘‘কোনও গুজব ছড়ানো হয়েছিল হয়তো। হঠাৎ চেতলা থানার পুলিশ এসে গত কাল বলল, দু’-তিন দিন মণ্ডপ তৈরির কাজ বন্ধ রাখুন। সরকারি নির্দেশ এলে করবেন।’’ কাজ বন্ধের নির্দেশে অবাক ভবানীপুরের বকুলবাগানের অবসর বা হরিদেবপুরের অজেয় সংহতির মতো পুজোর উদ্যোক্তারাও।

পুজোর কাজ বন্ধ রাখতে বলে গত রবিবার ঠাকুরপুকুর থানা থেকে নির্দেশ আসায় প্রবল চিন্তায় পড়েছিলেন ঠাকুরপুকুর এসবি পার্কের পুজো উদ্যোক্তা সঞ্জয় মজুমদার। তাঁদের পুজোর এ বার ৫০তম বছর। সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘করোনার জন্য এ বার বহু পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছে। স্পনসর এবং নানা সমস্যার কথা ভেবে শেষ মুহূর্তে থিমও

বদলাতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পুজোর দেড় মাস আগে থানা থেকে কাজ বন্ধের নির্দেশ এলে ভয় তো লাগবেই! কাজ করতে যে সমস্যা নেই, বুধবার সেই ফোন আসার পরে স্বস্তি পেয়েছি।’’

কিন্তু পুলিশের তরফে এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল কেন? লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা কেউই এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি। মন্তব্য করতে চাননি সংশ্লিষ্ট থানার কোনও আধিকারিকই। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্তা শুধু বলেছেন, ‘‘অন্যান্য বার এই সময়ে পুজো নিয়ে সরকারি নির্দেশ চলে আসে। এ বার তা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশ ছাড়া রাস্তা আটকে মণ্ডপ তৈরি করতে দিলে যদি পরে চাপ আসে! তা ভেবেই হয়তো ক’দিন দেখে নিয়ে কাজ করার অনুরোধ করেছিল থানা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Police Durga Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE