কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের কাছ থেকে মার্চের শুরুতে একটি চিঠি পেয়েছিলেন উত্তর কলকাতার বাসিন্দা শ্রদ্ধা রায়। যাতে তিনি দেখেন, রাসবিহারী মোড়ে ট্রাফিক আইন না মেনে গাড়ি চালানোর জন্য জরিমানা করা হয়েছে তাঁকে। তবে চিঠিতে থাকা সময়, তারিখ এবং স্থান দেখে অবাক হয়ে যান শ্রদ্ধা। কারণ সে দিন তিনি বাড়ির গ্যারাজ থেকে গাড়িই বার করেননি।
একই রকম ভাবে জরিমানার চিঠি পেয়েছিলেন ফুলবাগানের সুরঞ্জন গুপ্তও। তার ক্ষেত্রেও চিঠিতে যে দিনের উল্লেখ ছিল, সে দিন রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বেরই হননি তিনি। তবুও এসেছিল ট্রাফিক আইন ভাঙার জরিমানার চিঠি।
শ্রদ্ধা বা সুরঞ্জন কোনও ব্যতিক্রম নন। লালবাজার সূত্রে খবর, আইন না ভেঙেও ট্রাফিক পুলিশের সাইটেশন কেসের এ রকম চিঠি পেয়েছেন শহরের বহু গাড়ির মালিক বা চালক। এ বার এ ধরনের ‘ভুল’ কমাতে নতুন পরিকল্পনা করতে চলেছে লালবাজার। পুলিশ জানিয়েছে, নতুন ব্যবস্থায় কোনও গাড়ি আইন ভাঙলে রাস্তায় থাকা ট্রাফিক পুলিশের কর্মীরা তা সোজা নিজের মোবাইলে নির্দিষ্ট ভাবে লিখে এসএমএস করে জানিয়ে দেবেন লালবাজারের নির্দিষ্ট নম্বরে। সেখান থেকে জরিমানার কারণ-সহ বিস্তারিত বিবরণ এসএমএসের মাধ্যমে কিছুক্ষণের মধ্যে পৌছে যাবে আইনভঙ্গকারী গাড়ির চালকের কাছে। এ জন্য ট্রাফিক পুলিশ কর্মীদের মোবাইলে থাকবে নির্দিষ্ট সফ্টওয়্যার।
লালবাজারের ট্রাফিক বিভাগের এক কর্তার কথায়, ‘‘ধর্মতলার কেসি দাসের মোড়ের দক্ষিণমুখী ট্রাফিক আইন কেউ অমান্য করলে নতুন এই ব্যবস্থায় গাড়িটি এক্সাইড মোড়ে যাওয়ার আগেই চালকের মোবাইলে পৌছে যাবে আইনভঙ্গের বিবরণ। ফলে খুব সহজেই চালক জেনে যাবেন কোথায় তিনি আইন ভেঙেছেন।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, এখন নিয়ম অনুযায়ী চলন্ত কোনও গাড়ি আইন ভাঙলে তার নম্বর নিজেদের নোটবুকে লিখে রাখেন বিভিন্ন ট্রাফিক বিটে (যেখানে ট্রাফিক পুলিশের কর্মীরা ডিউটি করেন) থাকা পুলিশকর্মীরা। পরে ট্রাফিক গার্ডে ফিরে এসে সেই গাড়ির নম্বর-সহ বিস্তারিত বিবরণ কম্পিউটারে লিখে লালবাজারে ট্রাফিক বিভাগে পাঠিয়ে দেন। সেখান থেকে ওই সাইটেশন কেসের বিস্তারিত বিবরণ-সহ জরিমানার চিঠি ডাক বিভাগের মাধ্যমে চলে যায় আইনভঙ্গকারী গাড়ির মালিকের কাছে। কিন্তু অভিযোগ, ট্রাফিক পুলিশ কর্মীরা নিজেদের কেসের টার্গেট বজায় রাখতে অনেক সময়েই মনগড়া নম্বরে সাইটেশন কেস দেন। সে সব এড়াতেই এই নতুন সফ্টওয়্যারের ব্যবস্থা। লালবাজার সূত্রে খবর, সম্প্রতি ট্রাফিকের আধিকারিকদের একটি বৈঠকে এই নতুন ব্যবস্থাটি নিয়ে আলোচনা হলেও কবে থেকে সেটি চালু হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি।
তবে এই নতুন ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের একাংশের। তাঁদের কথায়, কলকাতার রাস্তায় চলা সব গাড়ির নম্বরের সঙ্গে সেটির মালিকের ফোন নম্বর যুক্ত নয়। ফলে এসএমএস পাঠানোর ক্ষেত্রে অসুবিধা হতে পারে। এ ছাড়া, ট্রাফিক সামলানোর পাশাপাশি কী ভাবে আইন অমান্য করা গাড়ির বিস্তারিত বিবরণ দ্রুত নথিবদ্ধ করা সম্ভব, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আধিকারিকেরা।
পুলিশের একাংশই জানাচ্ছে, ট্রাফিক পুলিশকর্মীরা বিভিন্ন উত্তেজনাপ্রবণ এলাকায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ডিউটি করেন। সেই সময়ে স্থানীয় কোনও বাসিন্দার গাড়ি আইন ভাঙলে ও মূহুর্তে সে কথা তাঁর মোবাইলে পৌঁছলে তিনি ফিরে এসে হাঙ্গামা জুড়তে পারেন বলে আশঙ্কা। তবে সব সম্যসার সমাধান না করে ওই নতুন ব্যবস্থা চালু করা হবে না বলে লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy