Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মঞ্চে বন্ধুত্বের বার্তা ডিভাইসড থিয়েটারের

মঞ্চের উপরে দু’টি চরিত্র।  এক জন শ্বেত রক্তকণিকা এবং অন্য জন একটি কৃমি। 

অভিনয়: মঞ্চে শ্বেত রক্তকণিকা ও কৃমি।

অভিনয়: মঞ্চে শ্বেত রক্তকণিকা ও কৃমি।

চৈতালি বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৫৭
Share: Save:

মঞ্চের উপরে দু’টি চরিত্র। এক জন শ্বেত রক্তকণিকা এবং অন্য জন একটি কৃমি।

জাগতিক ভাবে তাদের একসঙ্গে থাকা কোনওমতেই সম্ভব নয়। তারা কখনওই এক পরিমণ্ডলে থাকতে পারে না। কিন্তু থিয়েটারের মঞ্চে এই দু’টি চরিত্রের বন্ধুত্ব হয়।

শুক্রবার এবং আজ, শনিবার কলকাতার থিয়েটারপ্রেমী দর্শকের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে ওদের। পদাতিক থিয়েটারে এই ‘ইউনিক ডিভাইসড থিয়েটার ফেস্টিভাল’-এর আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে ‘ডিভাইসড থিয়েটার’ সম্পর্কে সম্যক ধারণা তৈরিতে প্রয়াসী হয়েছেন সাত তরুণ।

এই থিয়েটারকর্মীরা সকলেই ‘লন্ডন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অব পারফরমিং আর্টস’-এর প্রাক্তন পড়ুয়া। এঁদের মধ্যে তিতাস দত্তই একমাত্র কলকাতার মেয়ে। বাকিরা কেউ স্পেন, অস্ট্রিয়া, কেউ আবার ইংল্যান্ডের বাসিন্দা। এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন মুম্বইয়ের থিয়েটার কর্মী, ‘ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার’ প্রাক্তন ছাত্র বিবেক কুমারও। তাঁরই নাট্যসংস্থা ‘দ্য কোলাবরেটরস’-এর সঙ্গে বার্লিনের নাট্যসংস্থা ‘গেট বাডিজ় থিয়েটার’-এর যৌথ প্রচেষ্টায় দেশের সাতটি শহরে ভিন্ন ধারার এই প্রযোজনা দেখা যাবে। জানুয়ারি মাসের পুণে, বেঙ্গালুরু এবং পুদুচেরির পরে এ বার

কলকাতার পালা।

দলের অন্যতম সদস্য স্পেনের এইনহোয়া হেভিয়া উরিয়া বলেন, ‘‘আমরা মূলত নাটক ডিভাইস করি। ডিভাইসের বাংলা আমার জানা নেই। দু’-এক কথায় বলতে গেলে, সামাজিক হায়ারার্কি এড়িয়ে সকলে মিলে নাটক বানানো। আমাদের ইতিহাস,

জীবনচর্যা শরীর দিয়ে কী ভাবে ফুটিয়ে তুলতে হয়, সেটাই আমরা মঞ্চে দেখাব।’’ আর এক সদস্য জানালেন, এখানে ‘আমরা সবাই রাজা’। কোনও পরিচালক নেই। থাকলেও তিনি অভিনয়ের চেয়ে বড় হয়ে ওঠেন না। অভিনেতা তাঁর স্বাতন্ত্র্য থেকে সমষ্টিগত শিল্প সৃষ্টিতে সাহায্য করেন। জানালেন, ওঁরা কেউই তথাকথিত অর্থে নিজেদের অভিনেতা বলতে স্বচ্ছন্দ নন। ওঁরা বিশ্বাস করেন শরীরী বহিঃপ্রকাশে। শরীর যেখানে কোনও ঘটনা, স্থান, কাল, পাত্রের সাপেক্ষে প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, সেটাই ওঁদের মতে বিশুদ্ধ অভিনয়। তিতাস জানালেন, পাঁচটি ভিন্ন দেশের নাগরিক ওই সাত সদস্য ভারতের মতো সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের দেশের স্বাদ-গন্ধকে নিজেদের অভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরতে চান। দর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করাও এই শিল্পীদের লক্ষ্য।

মঞ্চে বিভিন্ন ছোট ছোট গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে সামাজিক বার্তা। যেখানে অসহিষ্ণুতা, হিংসা বা বিদ্বেষের বিরুদ্ধে শিল্পচর্চাকে হাতিয়ার করা হয়েছে। তিতাসের কথায়, ‘‘আমরা কিছু জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার পক্ষে নই। মঞ্চে বডি মুভমেন্টের মাধ্যমে দর্শককে ভাবার অবকাশ তৈরি করে দিচ্ছি। সকলে নিজের নিজের মতো করে বুঝবেন। শিল্পে এইটুকু স্বাধীনতা থাকা প্রয়োজন বলেই মনে করি।’’ ফ্যান্সের জ্যাক লিকলের ট্রেনিং-প্রসেস মেনেই দলটি নিজেদের প্রতি মুহূর্তে প্রস্তুত করে চলেছে। তিতাস জানান, কোনও দিন চার-পাঁচ ঘণ্টা প্র্যাকটিসের পরে হয়তো পাঁচ মিনিটের কোনও কাজের অংশ তৈরি হল। তাই রোজ নতুন নতুন ভাবে নিজেদের ভাঙা-গড়া চলতেই থাকে ওঁদের। ইংল্যান্ডের আর এক শিল্পী নিয়াল মাচিন বলেন, ‘‘আমরা পৃথিবীর পাঁচটি ভিন্ন দেশের নাগরিক। অথচ আমাদের প্রশ্ন, অস্বস্তি, যন্ত্রণা আর সুখের মুহূর্তগুলি একই রকম। তাই একসঙ্গে কাজ করার

সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

শ্বেত রক্তকণিকা হোক, কৃমি হোক কিংবা মানুষ— আসলে বন্ধুত্বই তো প্রতিঘাতময় এই পৃথিবীতে টিকে থাকার অন্যতম রসদ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Society Message Friendship
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE