গত ডিসেম্বরে ময়দান স্টেশনে আগুন লাগার পরে উদ্ধার করা হচ্ছে অসুস্থ হয়ে পড়া এক মেট্রোযাত্রীকে। ফাইল চিত্র
আগুনের মোকাবিলায় আর ‘অপ্রস্তুত’ থাকতে চান না কলকাতা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ।
গত ডিসেম্বরে ময়দান স্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন স্টেশনে কর্মীদের আগুন নেভানোর কৌশল আয়ত্ত করাতে আরপিএফের উদ্যোগে মহড়া শুরু হয়। এ বার এক ধাপ এগিয়ে দমকল দফতরের অধীনে আগুন নেভানোর খুঁটিনাটি জানতে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন মেট্রোকর্মীরা। ইতিমধ্যেই মেট্রোকর্মীদের ২৪ জনের প্রথম দলটি বেহালায় ফায়ার ট্রেনিং স্কুলে তিন দিনের প্রশিক্ষণ শেষ করেছে। দ্বিতীয় দলের প্রশিক্ষণও শীঘ্রই শুরু হওয়ার কথা।
মেট্রো সূত্রের খবর, ডিসেম্বরে ময়দান স্টেশনের ঘটনার পরে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে বহু প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটির তদন্তেও সুরক্ষা সংক্রান্ত একাধিক খামতির কথা উঠে আসে। দমকল দফতরের পৃথক তদন্তেও বলা হয়, ২৪টি মেট্রো স্টেশনে আগুন নেভানোর ব্যবস্থায় নানা ফাঁক রয়ে গিয়েছে। এর পরেই পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামেন কর্তৃপক্ষ। বিপর্যয়ের ঘটনায় মেট্রোর কন্ট্রোল রুমের পাশাপাশি দ্রুত পুলিশ এবং দমকলে খবর পৌঁছনোর জন্য পৃথক হটলাইন নম্বরের প্রস্তাব করা হয়। সেই লাইন ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে বলে খবর।
দমকলের প্রশিক্ষণে কী থাকছে?
মেট্রো সূত্রের খবর, মূলত বৈদ্যুতিক উপকরণ থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুন এবং ধোঁয়া দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে কী ধরণের সতর্কতা নেওয়া প্রয়োজন, সে সম্পর্কে মেট্রোকর্মীদের প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। কোন পরিস্থিতিতে বৈদ্যুতিক উপকরণ থেকে আগুন লাগতে পারে সেই তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি ওই সব উপকরণ যাতে অন্য দাহ্য পদার্থ থেকে দূরে রাখা হয়, তা-ও বলা হচ্ছে প্রশিক্ষণে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
মেট্রো সূত্রে জানা গিয়েছে, স্টেশনগুলিতে হাইড্র্যান্ট এবং অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র থাকলেও নিয়মিত ব্যবহার না হওয়ায় কর্মীদের অনেকেই আপৎকালীন প্রয়োজনে সেগুলি কী করে কাজে লাগাতে হয়, তা ভুলতে বসেছিলেন বলে অভিযোগ। সম্প্রতি আরপিএফের উদ্যোগে বিভিন্ন স্টেশনে আগুন নেভানোর মহড়া শুরু হয়। সেই মহড়া এখনও চলছে। ইতিমধ্যেই বেলগাছিয়া, শ্যামবাজার, সেন্ট্রাল, পার্ক স্ট্রিট, ময়দান, এসপ্লানেড সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে তা সম্পূর্ণ হয়েছে। দ্রুত হাইড্র্যান্ট চালু করে হোসপাইপের সাহায্যে জল দিয়ে কী ভাবে আগুন নেভানো যায়, তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে মেট্রোকর্মীদের।
পাশাপাশি মাটির নীচে কোথাও যাত্রীরা আটকে পড়লে কী ভাবে তাঁদের উদ্ধার করতে হবে, তা মেট্রোকর্মীদের শেখাতে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) সঙ্গেও মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে। কোনও বিপদ হলে যাত্রীরা যাতে স্টেশন থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে গত কয়েক মাসে বিভিন্ন স্টেশনগুলিতে দীর্ঘকাল বন্ধ থাকা প্রবেশ এবং বাহির পথগুলি খুলে দেওয়া হয়েছে।
গত ২৬-২৯ মার্চ চব্বিশ জন মেট্রোকর্মী বেহালায় দমকলের নিজস্ব ফায়ার ট্রেনিং স্কুলে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এ ব্যাপারে মেট্রোর এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আগুন যাতে না লাগে, তার জন্য আগাম সাবধান হওয়ার পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ডের পরিস্থিতি তৈরি হলে কী ভাবে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, সে সম্পর্কেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’’ ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রতিটি স্টেশনে যাতে ৩০ মিটার দূরত্বের মধ্যে অন্তত একটি করে অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র থাকে, তা-ও নিশ্চিত করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অগ্নি-সুরক্ষার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য মেট্রো কর্তৃপক্ষের নিজস্ব প্রস্তুতি ছাড়াও কর্মীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy